বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন
শেয়ারাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের স্বাভাবিক কর্মকা- সচল রাখা এবং মানদিক বিবেচনায় প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়াল সংস্থাটি। অথচ (বিএসইসি) পদত্যাগী চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং বিএসইসিতে তার ৮ জন সহযোগী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে গত ৯ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মানি লন্ডারিং শাখা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সেটার গনাই বললেই চলে।
ওই ৮ কর্মকর্তা বর্তমানে বিএসইসিতে স্বাভাবিক কর্ম পরিচালনা করছেন। এ অবস্থায় শিবলী রুবাইয়াত ও ৮ কর্মকর্তাকে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা ও ব্যাংক হিসাব জব্দ (ফ্রিজিং) চেয়ে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জিয়া উদ্দিন। একইসঙ্গে তদন্ত সঠিকভাবে করার জন্য রিটে ওই ৮ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের আবেদন করা হয়।
বাদীর আবেদনের পপ্রেক্ষিতে গত ২৫ নভেম্বর উচ্চ আদালত শিবলী রুবাইয়াতসহ বিএসইসির ৮ কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব জব্দ ও বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে দুদককে নির্দেশনা দিয়েছে। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএসইসিকে দুদকের চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের তথ্য ও প্রমাণাদি দিয়ে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।
আদালতের ওই নির্দেশনা স্থগিত চেয়ে ২৮ নভেম্বর রিট পিটিশন দায়ের করেছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। এতে বলা হয়েছে, আদালতের ওই নির্দেশনা বিদ্যমান আইন ও আইনের নীতির সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ (কনফ্লিক্ট)। রিট পিটিশনে মাকসুদ বলেছেন, শিবলী রুবাইয়াত ছাড়া বাকি ৮ জন বিএসইসির চাকরিরত কর্মকর্তা। তারা বিএসইসির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের বিরুদ্ধে যদি আদালতের গত ২৫ নভেম্বরের নির্দেশনা পরিপালন করা হয়, তাহলে শুধু তাদের ও তাদের পরিবারেরই বিপদে পড়বে না, বিএসইসির কার্যক্রমে সমস্যা তৈরি হবে।
রিট পিটিশনে আরও বলা হয়েছে, ওই ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদক এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি। এ অবস্থায় বিএসইসির ৮ কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হলে, তাদের পরিবার জীবন পরিচালনায় ভোগান্তিতে পড়বে। কারণ তারা বিএসইসির বেতনের ওপর নির্ভরশীল। অথচ খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনই বাজার মধ্যস্থতাকারী অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর আগেই ব্যাংক হিসাব জব্দ ও বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। যে কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মচারীরা বেতনাদি পাচ্ছেন না। যাদের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ গণমাধ্যমে কাছে লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন, বিএসইসির আটজন কর্মকর্তা সংশ্লেষে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ রিট মামলায় যে আদেশ প্রদান করেছেন, উহার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল দায়ের না করার জন্য কমিশনের পূর্ব সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায়, ইতোমধ্যে দাখিলকৃত পিটিশনটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আইনজীবীকে কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, রিট দায়ের করা হয়েছে বিএসইসির কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনেক অভিযোগ আছে। ওই রিট কিন্তু বিএসইসির বিরুদ্ধে করা হয়নি। তাই নির্দেশনাও এসেছে কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে, বিএসইসির না। এই অবস্থায় ওইসব কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে রিট পিটিশন দায়ের করতে পারে। যা বিএসইসির চেয়ারম্যান করতে পারেন না।
ডিএসইর সাবেক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিভিন্ন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ নিজেদের ঘর (বিএসইসি) থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবার আগে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। একজন বিএসইসির কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেননি। বরং তাদের রক্ষায় কাজ করছেন তিনি।
দুদক শিবলী রুবাইয়াত ছাড়া বিএসইসির যে ৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- সাবেক কমিশনার শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুবুল আলম, নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম, পরিচালক শেখ মাহবুবুর রহমান, পরিচালক মো. মাহমুদুল হক, অতিরিক্ত পরিচালক এস কে মোহাম্মদ লুৎফুল কবির ও যুগ্ম-পরিচালক ও চেয়ারম্যানের সাবেক একান্ত সহকারী মো. রাশিদুল আলম (বর্তমানে অন্য বিভাগে নিয়োজিত)।