দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বৈষম্য চলছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে। বঞ্চিত দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা এক দফা আন্দোলনে নেমেও তার সুরাহা হয়নি। সেসময় দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়ায় বঞ্চিতরা আন্দোলন স্থগিত করেন। অথচ সেই আশ্বাস বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।
পদোন্নতি বৈষম্য দূর করার দাবি আদায়ে বাধ্য ফের আন্দোলনে নামছেন ব্যাংকটির দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা। শনিবার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে পদোন্নতির দাবিতে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছেন পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা।
জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে দাবি-দাওয়া তুলে ধরে ৭ দিনের আলটিমেটাম দেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে পদোন্নতি ও পদোন্নতিতে অন্যান্য গ্রেডের সঙ্গে বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে এক দফা দাবি নিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে সাবেক এমডি মো. শওকত আলী ৩ বছরে পদোন্নতি প্রদান, পদোন্নতিতে ভাইবা পদ্ধতি বাতিল করে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের (এসিআর) ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদান, সুপারনিউমেরারি পদ্ধতিতে পদোন্নতি প্রদানসহ বেশ কিছু আশ্বাস দেন। এমডির আশ্বাসে কর্মকর্তারা মানববন্ধন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরে যান।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কৃষি ব্যাংকের তৎকালীন এমডি মো. শওকত আলী অন্য ব্যাংকে যোগদান করেন। কৃষি ব্যাংকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু ৩ মাস পার হলেও কর্তৃপক্ষ নানা আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করছেন। পদোন্নতির কোনো ব্যবস্থা এখনো করতে পারেনি। ফলে কর্মকর্তারা ক্ষোভে ফুঁসছেন।
কৃষি ব্যাংক সূত্র জানায়, ব্যাংকটিতে নবম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের কর্মকর্তাদের তিন বছর পরপর নিয়মিত পদোন্নতি হলেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সবাই বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখলেও কৃষি ব্যাংকের দশম গ্রেডের কর্মকর্তাদের ভাগ্যের শিঁকে ছেড়েনি।
অথচ এ গ্রেডের কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই ব্যাংকটির সিংহভাগ কাজ সম্পাদিত হয়ে থাকে। কিন্তু তারা বছরের পর বছর উপেক্ষিত। ৬-৭ বছর বা তদুর্ধ্ব সময় ধরে পদোন্নতি না পেয়ে একই গ্রেডে থাকায় কর্মকর্তাদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এমনকি ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পদোন্নতি বঞ্চিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, কর্তৃপক্ষ তাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করছেন। তাদের ৩ বছরভিত্তিক পদোন্নতির দাবি থাকলেও ৪ বছরভিত্তিক পদোন্নতিযোগ্য ২ হাজার ৫৪৯ জনের একটি তালিকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু সেটি অনুমোদন করানোর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ভাইবার মাধ্যমে অনৈতিকভাবে পদোন্নতি বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য করার সুযোগ থাকায় ম্যানেজমেন্ট কোনোভাবেই ভাইবা পদ্ধতি বাতিল করতে চাইছে না।
সার্বিক পরিস্থিতিতে পদোন্নতি বঞ্চিতরা প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন, অন্যান্য সকল গ্রেডের পদে ভাইবা কার্যক্রম বন্ধ, কর্মবিরতিসহ আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। পদোন্নতির ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এসআর