স্বর্ণ। সংগৃহীত ছবি।
স্বর্ণের মতো চকচকে জিনিসের প্রতি অনেকেরই আকর্ষণ প্রবল। প্রাকৃতিকভাবে স্বর্ণের কমতি এবং এটি আহরণের জটিলতাই ধাতুটিকে বিশেষ মূল্যবান ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে স্থান করে দিয়েছে। এটি প্রাকৃতিক ধাতু যার রাসায়নিক নাম অরাম। এটি মৌলিক পদার্থ এবং এর পরমাণু সংখ্যা ৭৯। স্বর্ণ কোনো যৌগ বা মিশ্রণ নয়, তাই একে ভাঙলে অন্য কোনো মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায় না।
বিশুদ্ধ স্বর্ণ ২৪ ক্যারেট হিসেবে পরিচিত। গয়না বা অলংকার তৈরির জন্য স্বর্ণের সঙ্গে সাধারণত তামা, রূপা বা দস্তা মেশানো হয়। এসব নমনীয় এই ধাতুটি দিয়ে তৈরি অলংকারকে মজবুত ও স্থায়িত্বশীল করে। ২২ ক্যারেটে ৯১.৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ স্বর্ণ, বাকি ৮.৪০ শতাংশ অন্যান্য ধাতু। ১৮ ক্যারেটে ৭৫ শতাংশ বিশুদ্ধ স্বর্ণ থাকে, আর এতে ২৫ শতাংশ অন্য ধাতু মেশানো হয়।
অত্যন্ত টেকসই ও রাসায়নিকভাবে স্থিতিশীল ধাতুটি কোনো প্রাকৃতিক অবস্থায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না এবং হাজারো বছর অক্ষত থাকতে পারে। মাটির নিচে বা সমুদ্রের নোনা পানিতেও স্বর্ণ এর বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখতে পারে। তিন হাজার বছর আগের প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা থেকে পাওয়া স্বর্ণের অলংকার এখনো একই রকম অবস্থায় রয়ে গেছে।
বিশুদ্ধ স্বর্ণ (২৪ ক্যারেট) সাধারণত নষ্ট হয় না, কারণ এটি অন্য কোনো পদার্থের সঙ্গে সহজে বিক্রিয়া করে না। তবে মিশ্রণ করা স্বর্ণ (১৮ ক্যারেট বা ২২ ক্যারেট) দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে খানিকটা ক্ষয়ে যেতে পারে।
উত্তোলিত স্বর্ণের পরিমাণ: মানব ইতিহাসে এখন পর্যন্ত মোট উত্তোলিত স্বর্ণের পরিমাণ আনুমানিক ২ লাখ ৮ হাজার ৮৭৪ টন (২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী)। এই স্বর্ণের প্রায় ৬৬ শতাংশই মানুষের হাতে এসেছে ১৯৫০ সালের পরে। আর এটি সম্ভবপর হয়েছে আধুনিক খনন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে। সম্প্রতি বছরপ্রতি এই ধরণিতে প্রায় ৩,০০০-৩,৫০০ টন স্বর্ণ উত্তোলন করা হচ্ছে।
বিশ্বের সর্বাধিক স্বর্ণ উত্তোলনকারী দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন। রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এর পরে।
স্বর্ণের প্রাকৃতিক অবস্থান: ভূত্বকের অন্যতম বিরল ধাতু হচ্ছে স্বর্ণ। অন্যান্য মৌলিক উপাদানের তুলনায় এটি অনেক কম পরিমাণে পাওয়া যায়। স্বর্ণের অধিকাংশ মজুদ ভূ-অভ্যন্তরে মাটির অনেক গভীরে থাকায় উত্তোলনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এখনও তেমন উন্নত হয়নি। সেই সঙ্গে এর খরচও অত্যন্ত বেশি।
স্বর্ণ সাধারণত শিলার মধ্যে মিশ্রিত অবস্থায় পাওয়া যায়। এর ঘনত্ব অনেক কম, যা উত্তোলন প্রক্রিয়াকে কঠিনতর করে তোলে।
শুধুমাত্র সেই স্বর্ণই উত্তোলন করা হয় যেখানে প্রতি টন শিলায় অন্তত ১-৫ গ্রাম স্বর্ণ পাওয়া যায় (১১ দশমিক ৬৬ গ্রামে ১ ভরি)। এর থেকে কম ঘনত্ব থাকলে সেটি উত্তোলন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয় না।
হাজার বছর আগে ভূত্বকের সহজলভ্য জায়গা থেকে স্বর্ণ উত্তোলন শুরু হয়। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে গত ৭০ বছরে সহজলভ্য স্বর্ণের সেই ভাণ্ডার দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অনেক অঞ্চলে খনন কাজ পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতি করতে পারে বলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
রিয়াদ