ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

প্রতিদিনের হিসাব প্রদানের নির্দেশ

সমন্বিত হিসাবের অর্থ আত্মসাৎ ঠেকাতে নতুন ‘প্ল্যাটফর্ম’

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ২১ নভেম্বর ২০২৪

সমন্বিত হিসাবের অর্থ আত্মসাৎ ঠেকাতে নতুন ‘প্ল্যাটফর্ম’

অর্থ আত্মসাৎ ঠেকাতে নতুন ‘প্ল্যাটফর্ম’

দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে বিনিয়োগকারীদের রক্ষিত অর্থ কনসোলিডেটেড কাস্টমার অ্যাকাউন্ট (সিসিএ) বা সমন্বিত গ্রাহক হিসাব থেকে আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কঠোরতা আরোপ করা হলেও পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে থেমে নেই সিসিএ-এর অর্থ লোপাট কর্মকাণ্ড।
এবার ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে একটি ‘প্ল্যাটফর্ম’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই প্ল্যাটফর্মের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইউনিফর্ম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম’। বিনিয়োগকারীদের মতে, সমন্বিত গ্রাহক হিসাব থেকে অর্থ তছরুপ রোধ করতে বিএসইসি এই যে উদ্যাগ নিয়েছে, তা খুবই ইতিবাচক। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করতে এই প্ল্যাটফর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এরই মধ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই-সিএসই) নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
এর লক্ষ্য হলো- ইউনিফর্ম অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্রোকারেজ হাউসগুলো প্রতিদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন শেষে তাদের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের তথ্য প্রদান বা আপলোড করবে। উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সেইসব তথ্য যাচাই-বাছাই করবে। কোনো অসঙ্গতি পেলে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজি ও সিকিউরিটিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিএসইসি এই উদ্যোগ নিয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ব্রোকারেজ হাউসগুলো থেকে অর্থ ও সিকিউরিটিজ তছরুপের সম্ভাবনা থাকবে না। এতে সুপাভিশন ও মনিটরিং আরও জোরদার হবে। ফলে আগামীতে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সমন্বিত গ্রাহক হিসাব থেকে অর্থ বা শেয়ার লোপাটের সম্ভাবনা কমে যাবে।
তবে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুনর্গঠত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বধীন কমিশনের এ  উদ্যোগটি প্রশংসনীয় বলে দাবি করা হলেও সেটার বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম  বলেন, বিএসইসির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে দেশের প্রেক্ষাপটে এটির বাস্তবায়ন খুবই কঠিন। ইউনিফর্ম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি থাকতে হবে। সেইসঙ্গে প্ল্যাটফর্মটি পরিচালনায় পর্যাপ্ত লোকবল ও সময় প্রয়োজন। পাশাপাশি এ কাজে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সর্বিক সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। অংশীজনদের প্রচেষ্টার ঘটতি থাকলে এই প্ল্যাটফর্ম যে উদ্দেশে তৈরি করা হচ্ছে, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
এদিকে বিএসইসি বলছে, ইউনিফর্ম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরির অগ্রগতি জানতে গত ৩১ অক্টোবর ডিএসই ও সিএসইকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২৯ এপ্রিল ডিএসই ও সিএসইর সঙ্গে ইউনিফর্ম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করার বিষয়ে বিএসইসির বৈঠক হয়েছে। পরবর্তীতে চলতি বছরের গত ৯ অক্টোবর ডিএসই ও সিএসইকে এই প্ল্যাটফর্ম তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরে আপনাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য অতিরিক্ত ২০ কার্যদিবস অর্থাৎ ৬ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। ইউনিফর্ম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানাতে অনুরোধ করা যাচ্ছে, বলা হয়েছে চিঠিতে।

এদিকে ইউনিফর্ম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরির বিষয়ে ডিএসই ও সিএসইকে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সমন্বিত গ্রাহক হিসাব বা সিসিএ গণনা পদ্ধতি যাচাই-বাছাই করবে ডিএসই ও সিএসই। একই সঙ্গে সিসিএ গণনা করার জন্য একটি মানসম্মত ফরমেট তৈরি করা হবে এবং সেটা কমিশনে জমা দিতে হবে। উভয় এক্সচেঞ্জ তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সিসিএ গণনা করার জন্য উল্লিখিত মানসম্মত ফরমেট প্রকাশ করবে। এ ছাড়া ডিএসই ও সিএসই একটি ইউনিফর্ম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে। যেখানে স্টক ব্রোকাররা প্রতিদিন লেনদেন শেষে তাদের সিসিএর তথ্য আপডেট করবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়মিতভাবে সিসিএর তথ্য নজরদারি করবে। যদি কোনো অসঙ্গতি বা পরিবর্তন খুঁজে পায় তবে তারা সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, ডিএসই ও সিএসই ইউনিফর্ম অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি কীভাবে তৈরি করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করছে। এরই মধ্যে ডিএসই একই কমিটিও গঠন করেছে। এ বিষয়ে শীঘ্রই একটি প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাত্বিক আহমেদ শাহ বলেন, এ বিষয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মের বিষয়ে কাজ করার জন্য আমরা একটা কমিটি করেছি। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আমাদের পরিচালনা পর্ষদকে দেওয়া হবে। এরপর সেটা আমরা কমিশনে দাখিল করব। তবে এ কাজটা তো এককভাবে করা সম্ভব নয়। 
বাংলাদেশ ব্যাংক, সিডিবিএল, সিসিবিএল, ব্রোকার হাউস এপিআই কানেক্টিভিটি লাগবে। এসব সংগঠনের সমন্বয়ে একটা টিম কাজ করছে। এগুলো কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে। সমন্বিত এই প্ল্যাটফর্ম চালুর বিষয়টি ‘সহজ নয়’ বলে মনে করেন সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুর রহমান মজুমদার। তিনি বলেন, ওএমএসের সঙ্গে ব্যাক অফিসের সমন্বয় (ইন্টিগ্রেশন) অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এর জন্য বাজার এখনো প্রস্তুত নয়। প্রযুক্তিগত দিক থেকেও আমাদের তেমন প্রস্তুতি নেই।  ব্যাকঅফিস সফটওয়্যার সরবরাহকারী ভেন্ডরদের বিএসইসিতে তালিকাভুক্তিই এখনো শেষ হয়নি।

×