সংগৃহীত ছবি।
দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের চাপ ক্রমশ বাড়ছে, যার ফলে নতুন বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগসহ নানা কারণে উৎপাদন খাতের গতিশীলতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, কারখানায় হামলা, হয়রানিমূলক মামলা, ব্যাংক হিসাব জব্দ, বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা, এবং ভিত্তিহীন প্রচারণা, যা ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
অনেক উদ্যোক্তা দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রম এবং বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকারখানা গড়ে তুলেছেন। তাদের উদ্যোগে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক মানুষের, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা মারাত্মক চাপে আছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিভিন্ন কারখানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এই হামলার ভয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। যদিও রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট নন, তবুও অনেক ব্যবসায়ীকে হয়রানিমূলক হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে, অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে আমদানি-রপ্তানি বা বিনিয়োগ বিষয়ক জরুরি কাজেও অনেক ব্যবসায়ী দেশ থেকে বাইরে যেতে পারছেন না। এর ফলে তারা ব্যবসা পরিচালনা এবং বাণিজ্য বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, ব্যবসায়ীদের হাতে পা বাঁধা হয়ে সাঁতার কাটার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি ৫০ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসা একজন ব্যবসায়ীও চাপের মুখে ব্যাংকের কাছে ঋণখেলাপি হওয়ার পথে চলে যাচ্ছেন।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, "বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ কিংবা নতুন বিনিয়োগ সম্ভব নয়। যদি বিনিয়োগকারীদের হয়রানি করা হয় এবং তাদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়, তাহলে এই সংকট থেকে উত্তরণ সহজ হবে না। যারা দেশে বিনিয়োগ করে সম্পদ সৃষ্টি করে, কর্মসংস্থান তৈরি করে, তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ যারা কখনোই বিনিয়োগ করেনি, তাদের পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সমাজের এই অযৌক্তিক আচরণ যতদিন না পরিবর্তিত হবে, ততদিন ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে না।"
বেসরকারি খাত দেশের কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মতে, দেশে মোট কর্মসংস্থানে সরকারি চাকরির অংশ ৩.৮ শতাংশ, বেসরকারি চাকরির অংশ ১৪.২ শতাংশ, এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিয়োজিত ৬১ শতাংশ কর্মী। তবে, বর্তমান সংকটের কারণে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, এবং পূর্বের কর্মচারীরাও ঝুঁকির মধ্যে আছেন।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, "ব্যবসা-বাণিজ্য সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। যদি এ ধরনের পরিবেশ না তৈরি করা যায়, তাহলে বিনিয়োগ টেকসই হবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রয়োজন, তবেই বিনিয়োগ টেকসই হবে।"
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হলে উৎপাদনশীল শিল্প ও সেবা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে, যেখানে বেসরকারি খাতের ভূমিকা অপরিহার্য। আর এই খাতে বিনিয়োগ টেকসই ও গতিশীল করতে হলে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে ভয় ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে তা দূর করা জরুরি। অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন, ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন, এবং অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধান হলে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে, এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে—এমন মত অর্থনীতিবিদদের।
নুসরাত