কম দামে হতাশ লবণ চাষিরা
কক্সবাজারের চৌফালডান্ডি গ্রামের আশপাশে রোদে ফেটে চৌচির জমি দেখে বোঝা যায় লবণ চাষের মৌসুম এসে গেছে। তবে বাজারে এই গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপণ্যের দাম কম হওয়ায় হতাশ লবণ চাষিরা।
চাষিদের ভাষ্য, গেল বার অনুকূল আবহাওয়ায় দেশে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদিত হয়েছিল। তবে আগের মৌসুমের অপরিশোধিত লবণ অবিক্রীত থাকায় এ বছর বাজারে এর দাম কম।
গত বছর লবণের মোট উৎপাদন হয়েছে ২৪ লাখ ৩৮ হাজার টন। গত ৬২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এবারও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও উপকূলীয় এই জেলার অনেকে লবণ চাষে আগ্রহী নন। বিশেষ করে অনেকের হাতে অবিক্রীত লবণ মজুত আছে।
গত রবিবার চৌফালডান্ডিতে গিয়ে দেখা যায়, কালো পলিথিনে ঢাকা লবণের স্তূপ মাঠজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। চাষিরা জানিয়েছেন, নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত ছয় মাস লবণের মৌসুম। তাদের হাতে আগের মৌসুমের লবণ আটকে আছে।
লবণ চাষি আব্দুর রহিম জানান, তিনি এক পাইকারের কাছে লবণ বিক্রি করেছিলেন। আগামীতে দাম আরও বাড়বে এই আশায় গত মৌসুমে এক হাজার মণ লবণ তার হাতে মজুত আছে। তিনি বলেন, তিন মাস আগে যে দাম পেয়েছিলাম এখন তা পাচ্ছি না। তখন মণপ্রতি লবণের দাম ছিল ৪০০-৪৫০ টাকা। এখন প্রতি মণ লবণ ৩১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রায় এক লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের পাইকারি বিক্রেতা মো. সরওয়ার কামাল বলেন, চাষিদের কাছ থেকে প্রতি মণ লবণ ৩১০ টাকায় কিনেছি। এরপর তিনি লবণ কারখানায় তা বিক্রি করেছেন মণপ্রতি ৪০০ টাকায়। পরিবহন ও শ্রমিকদের খরচ বিবেচনায় নিলে প্রতি মনে তার মুনাফা হয়েছে ১০-২০ টাকা।
তিনি জানান, আগের মৌসুমের লবণ মজুত থাকায় কারখানাগুলো বেশি দামে লবণ কিনতে রাজি হয়নি। সরওয়ার কামাল মনে করেন, বাজারের যে অবস্থা তাতে বোঝা যায় নতুন লবণের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক কম হবে। লবণ চাষি আব্দুর রহিম জানান, বর্তমান দামেও তারা লবণ বিক্রি করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, এক কানি জমি থেকে এক মৌসুমে প্রায় ৩০০ মণ লবণ পাই। এ বছর ইজারা, শ্রমিক, পলিথিন ও পানিসহ মোট খরচ হবে প্রায় এক লাখ টাকা। তাই প্রতি মণ ৩৩৩ টাকা পেলেই খরচ উঠবে। এর কম হলে লোকসান হবে।
কুতুবদিয়া উপজেলার ধুরুং এলাকায় এ বছর অনেক চাষি আগাম লবণ চাষ শুরু করেছেন। কিন্তু তারা কেউই কাক্সিক্ষত দামে লবণ বিক্রি করতে পারেননি। উত্তর ধুরুংয়ের এক কৃষক জানান, ওই এলাকায় এখন ২৩০ টাকা মণ দরে লবণ বিক্রি হচ্ছে। এতে অনেকেই হতাশ।
তবে ইসলামপুর ইউনিয়নের লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলমের ভিন্ন মত। তিনি বলেন, গত বছর চাষিরা লবণের বেশি দাম পাওয়ায় এ বছর জমি ইজারায় খরচ একর প্রতি এক লাখ টাকা হয়েছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিআইসি) সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের ৬৯ হাজার একর জমি থেকে ২৬ লাখ টন অপরিশোধিত লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা প্রায় সাড়ে ২৫ লাখ টন।