বিশে^র সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হয়েছেন। ২০ জানুয়ারি তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির মসনদে বসবেন। কিন্তু তার এই বিজয় বিশ^ অর্থনীতি ও পররাষ্ট্র নীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে বিশ^ব্যাপী নানা হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’, ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ নীতিতে পরিচালিত ট্রাম্পের মূল চিন্তা, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা ও বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ভূমিকা নিশ্চিত করা। এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ১০ জন ভোটারের ৪ জন অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে মনে করেন, ১০ জনের ২ জনের মত হলো অভিবাসন সমস্যা। ডোনাল্ড ট্রাম্প নাগরিকদের মনোভাবের প্রতিধ্বনি ঘটিয়ে নির্বাচনের আগে নাগরিকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিশ্বায়ন, প্রযুক্তি ও বাণিজ্য চুক্তির কারণে চাকরি হারানো মানুষজনের জন্য কাজ করার; অবৈধ অভিবাসীদের ঝেটিয়ে বিদায় করার; দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার এবং বিশে^র কয়েকটি অঞ্চলে চলা যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার। এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে নানা মতবিরোধ থাকলেও, সবাই মোটামুটি একমত যে, ট্রাম্পের নয়া জমানায় বিশ^ অর্থনীতি নানামুখী চাপে থাকবে। কারণ, তার অর্থ ও পররাষ্ট্র নীতির মূল উপজীব্যই হচ্ছে, যেকোনো মূল্যে যুক্তরাষ্ট্রের লাভের পাল্লা ভারী করা।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে বিশ^ অর্থনীতিতে কী প্রভাব ও পরিবর্তন আসতে পারে, তা বোঝার জন্য ট্রাম্পের অর্থনৈতিক ও পররাষ্ট্রনীতি যুগপৎভাবে পর্যালোচনা প্রয়োজন। বিশ^ায়নের এই যুগে অর্থনীতি নির্ভর করে রাজনৈতিক অর্থনীতির আলোকে, পররাষ্ট্র নীতি যার মূল চালিকাশক্তি। ট্রাম্পের অর্থ এবং পররাষ্ট্র নীতির প্রধান কয়েকটি দিক লক্ষ্য করলে, তার আমলে বৈশি^ক অর্থনীতির গতিপথ বোঝা সহজ হবে। তার অর্থনৈতিক নীতির ভিত্তি হচ্ছেÑ
১. কর হ্রাস ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
ট্রাম্প কর হ্রাসের জন্য ২০১৭ সালে একটি বড় কর সংস্কার আইন চালু করেন, যা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ধনীদের জন্য করের হার কমিয়ে দিয়েছিল। তার যুক্তি ছিল, কর হ্রাস বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে, যা আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ বয়ে আনে। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই নীতিতে স্বল্প মেয়াদে মার্কিন অর্থনীতিতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি দেখা দিলেও দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় ঋণ বাড়ে।
২. বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ
ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশী পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় প্রচেষ্টা চালানোয় বিশ^াসী। চীন, মেক্সিকো, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ব্যবধান কমানোর লক্ষ্যে ট্রাম্প উচ্চ শুল্ক নীতি গ্রহণ করেছিলেন। বিশেষ করে চীনের ওপর ধারাবাহিক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু করেছিলেন, যে কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে প্রভাব পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প এবার এই দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও জোরালো করবেন। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার খবরে ইউরোপের অর্থনীতিজুড়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে অস্থিরতা। জামার্নির চ্যান্সেলর তার অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে ২০২৫ সালের মার্চে আগাম নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
৩. যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি (ইএসএমসিএ)
ট্রাম্প নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এনএএফটিএ) পুনঃআলোচনা করে কানাডার সঙ্গে ইএসএমসিএ চুক্তি করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও বেশি সুবিধাজনক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই চুক্তি তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির স্পষ্ট প্রতিফলন, যা যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও কৃষি খাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে ট্রাম্পের মত ছিল। ২০২৪ সালে বিজয়ী হওয়ায় ট্রাম্প এ ধরনের আরও শক্তিশালী চুক্তি করবেন বলে অনেকে মনে করছেন।
৪. অভিবাসন নীতি
অভিবাসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প আগাগোড়াই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে বিশ^াসী। মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসন ঠেকানোর জন্য প্রাচীর নির্মাণ শুরু করা তার এই মনোভাবের প্রতিফলন। অভিবাসন সীমিত করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কর্মসংস্থান বাড়ানোই তার লক্ষ্য। তার এই নীতি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক থাকলেও, এবার যে অভিবাসন ক্ষেত্রে আরও বেশি কঠোর ও আক্রমণাত্মক হবেন, তা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই।
৫. পরিবেশ নীতি
ট্রাম্প প্রশাসন জীবাশ্ম জ্বালানিকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়। তার প্রশাসন নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ কমিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ায়, যা পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এবার আগেভাগেই তিনি বলেছেন, নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের সংরক্ষিত জ¦ালানি তিনি যেকোনোভাবেই হোক তুলে ফেলা শুরু করবেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথমবারের রাষ্ট্রক্ষমতার নীতি-দর্শনের ধারাবাহিকতা এবারও অব্যাহত থাকবে বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন। তবে ট্রাম্পের নতুন সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালার পাশাপাশি পররাষ্ট্র নীতির ওপরই আসলে বৈশি^ক অর্থনীতির গতিপথ ও ভালো-মন্দ নির্ভর করছে। তার পররাষ্ট্র নীতির মূল স্তম্ভগুলো হচ্ছেÑ
১. চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা
ট্রাম্পের বিগত শাসনামলে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও প্রতিযোগিতামূলক ও দ্বন্দ্বমুখর হয়ে ওঠে। অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও সামরিক শক্তিতে চীনের প্রভাব কমাতে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেন। চীনের সঙ্গে এই বাণিজ্য যুদ্ধের মাধ্যমে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন। ২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা নেওয়ার পর চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিবাদ-বিসংবাদ নতুন এক উচ্চতায় উঠবে বলে সবাই ধারণা করছেন।
২. ইরান নীতি
ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি (জেসিপিওএ) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে এবং ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ট্রাম্পের মতে, এই চুক্তি ইরানকে পারমাণবিক শক্তি অর্জনে উৎসাহিত করছিল। মধ্যপ্রচ্যে যুদ্ধ এবং ইসরাইলে ইরানের দুই দফা হামলার পর ট্রাম্পের সরকারের আমলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিতিশীলতা বাড়বে বলে অনেকেই মনে করছেন, যা বিশ^ অর্থনীতিকে নিশ্চিতভাবেই আরও সংকটে ফেলবে।
৩. উত্তর কোরিয়ার সাথে সম্পর্ক
ট্রাম্প প্রশাসন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সাথে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করে। যদিও এর ফলস্বরূপ দীর্ঘমেয়াদি কোনো চুক্তি হয়নি, তবে সরাসরি আলোচনা এই দ্বন্দ্ব নিরসনে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
৪. ন্যাটো ও ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক
ট্রাম্প ন্যাটোভুক্ত সদস্য দেশকে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর জন্য চাপ রাখায় বিশ^াসী। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছিল এবং অন্যান্য সদস্য দেশকেও তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। তার এই নীতি ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।
৫. ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্য
ট্রাম্পের প্রথমবারের প্রশাসন ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে এবং জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তার প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বেশ কয়েকটি আরব দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে, যা আব্রাহাম অ্যাকর্ডস নামে পরিচিত। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরাইলের দহরম-মহরম আরও বাড়বে বলে সবার ধারণা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক ও পররাষ্ট্র নীতি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সবার আগেÑএই মতবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা তার অর্থনৈতিক নীতি-দর্শনের মূল ভিত্তি, যা দেশীটার আমদানি শুল্কের হারকে ১৯৩০-এর দশকের স্তরে নিয়ে যেতে পারে। এতে করে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাবে, মার্কিন-চীন বাণিজ্যে ধস নামবে, প্রতিশোধমূলক বাণিজ্যিক পরিবেশ তৈরি হবে, বৈশি^ক সরবরাহ শৃঙ্খলায় ব্যাপক ওলটপালট ঘটবে। কারণ, ট্রাম্পের প্রশাসনের নীতি হলো, বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য ভারসাম্য ঠিক রাখতে প্রতিপক্ষের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ এবং পণ্য আমদানি সীমিত করা। চীনের সাথে ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য যুদ্ধ চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনকে ক্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। এবারও ট্রাম্প একই ধারা বজায় রাখলে, বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য সংরক্ষণবাদী মনোভাব বিশ্বায়নের গতি ধীর করতে পারে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার ওপর নির্ভরশীল অনেক দেশের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এই প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন দেশকে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে নিয়ে যেতে পারে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতির দিকে। ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি, বিশেষ করে কর হ্রাস এবং বড় ধরনের সরকারি বিনিয়োগ পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রে স্বল্প মেয়াদে বাজার বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। তবে এ ধরনের পদক্ষেপ দেশটিকে মুদ্রাস্ফীতির দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভকে সুদের হার বাড়াতে উৎসাহিত করবে। এতে করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ও উদীয়মান বাজারের মুদ্রার মানের পতন ত্বরান্বিত হবে এবং ঋণের খরচ বেড়ে যাবে। ট্রাম্প পরিবেশ সংরক্ষণ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ কমিয়ে প্রথাগত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে জোর দেওয়ায় বিশ^াসী। এই নীতির ফলে বৈশ্বিক পরিবেশনীতি ও জলবায়ু চুক্তি যেমনÑ প্যারিস চুক্তির মতো চুক্তিগুলোতে অগ্রগতি থমকে যেতে পারে, যা বৈশি^ক তেলের বাজারে অস্থিতিশীলতা ও পরিবেশগত প্রভাব উসকে দিতে পারে।
আগামী দিনের বিশে^ ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নীতির বৈশ্বিক প্রভাব হবে বৈচিত্র্যময়। কিছু ক্ষেত্রে এটি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অর্থনীতির সম্প্রসারণে সহায়ক হলেও বেশ কিছু দেশ ও খাতের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। প্রকৃত অর্থে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নয়া জমানায় বিশ^ অর্থনীতি কোন দিকে যাবে, কী রূপ পাবেÑতা বুঝতে বিশ^বাসীকে অন্তত ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তার আগে সব দেশকেই নিজের অর্থনীতিতে সংসহত ও টেকসই করতে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি