ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

দুর্বল ব্যাংককে আরও বেশি অর্থ সহায়তার আহ্বান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:০৫, ১২ নভেম্বর ২০২৪

দুর্বল ব্যাংককে আরও বেশি অর্থ সহায়তার আহ্বান

.

 আর্থিক অনিয়মে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকে আরো বেশি অর্থ সহায়তা দিতে সবল ব্যাংকগুলোকে আহ্বান জায়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। একইসঙ্গে যেসব ব্যাংক ঋণপত্র বা এলসি দায় পরিশোধে বিলম্ব করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেন গভর্নর। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকে ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের এমডি এবং বেসরকাখাতের ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন, সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ্, পূবালী, প্রাইম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, যমুনা, সাউথ-ইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীরা।
বৈঠকে ডলার মার্কেট, দুর্বল ব্যাংকের পরিস্থিতি, ক্রেডিট কার্ড রেট, রাইট-অফ পলিসি, ব্যাংকারদের ব্যধাতামূলক ডিপ্লোমা পরীক্ষা এবং সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হয়। হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘যেসব ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি ভালো রয়েছে, তারা যেন সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি তারল্য সহায়তা করে সেই আহ্বান জানিয়েছেন গভর্নর।
তিনি বলেন, ডলার মার্কেট নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না তা গভর্নর জানতে চান। ব্যাংকগুলো জানায়, ডলার মার্কেটে আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। জানুয়ারি পর্যন্ত আরও উন্নতি হবে। বর্তমানে ডলার মার্কেটে চ্যালেঞ্জ না থাকলেও ওভারডিউ বা মেয়াদোত্তীর্ণ এলসির দায় পরিশোধে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিছু ব্যাংক এলসির দায় যথাযথ সময় পরিশোধ করছে না। এতে করে অন্য ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়ছে।’
এ বিষয়ে গভর্নরের বক্তব্য উদ্বৃত করে তিনি বলেন, ডলার মার্কেটে কেউ যাতে কারসানা করে। কোনো ব্যাংক যাতে বেশি দরে বিক্রির জন্য ডলার ধরে না রাখে। আবার ক্রস কারেন্সিতে ট্রান্সফার করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা না করে। ভবিষ্যতে যেসব ব্যাংক এলসির দায় পরিশোধে বিলম্ব করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রসাশনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের এলসি খুলতে দেওয়া হবে না।’
মুখপাত্র বলেন, ক্রেডিট কার্ডের পেছনে ব্যাংকগুলোর অনেক খরচ। সেই অনুযায়ী সুদহার অনেক কম। তাই ব্যাংকগুলো সুদহার বাড়ানোর জন্য গভর্নরকে অনুরোধ করেছেন। এ ছাড়া রাইট-অফ পলিসি পরিবর্তনের করতে বলা হয়। রাইট-অফ করার দুই বছর পর যে মামলা করা যায়, তা যেন সঙ্গে সঙ্গে করতে পারে। তবে এই বিষয়ে গভর্নর কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেননি। ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি ব্যাংকের একজন এমডি বলেন, ‘বেশকিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ডলার মার্কেট উন্নতি হয়েছে, তা জানানো হয়েছে। আবার যেসব দুর্বল ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে, তাদের মধ্যে কিছু ব্যাংকের উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো অনেক ব্যাংকের সংকট রয়েছে। যেসব ব্যাংক এখনো তারল্য সংকটে ভুগছে, তাদের তারল্য সহায়তা করার জন্য যাদের তারল্য রয়েছে তাদের এগিয়ে আসতে বলেছেন গভর্নর। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপে কিছু ব্যাংকের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গ্রাহকদেরও আস্থা ফিরেছে। যারা এখনো সংকটে রয়েছে, তারা সহায়তা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২০ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তন আনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যার মধ্যে আটটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে ছিল এস আলম গ্রুপ। এগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল তারা। এ ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে। তবে এর মধ্যে ৬টি ব্যাংকের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তাদের অনেক শাখায় লেনদেন করার মতো নগদ টাকা নেই, লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আমানতকারীদের চাপে শাখা ব্যবস্থাপকসহ ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা প্রতিদিনই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মার্কেট থেকে ভালো ব্যাংকগুলো থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংকগুলোর পক্ষে গ্যারান্টি দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে গত দেড় মাসে ৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

×