দেশের যেকোনো সংকটে সাধারণত প্রথম প্রভাব পড়ে শেয়ার বাজার, বন্ড ও মুদ্রার মূল্যে। আর সংকটময় পরিস্থিতিতে মানুষ চায় নিরাপদ বিনিয়োগ। কেননা শেয়ারবাজারে হঠাৎ ধস নামতে পারে, ডলারের মূল্য ওঠানামা করতে পারে। কিন্তু স্বর্ণের বেলায় তেমনটা হয় না। তাই স্বর্ণই হয়ে ওঠে বিপদের বন্ধু। ডলারে আস্থাহীনতা স্বর্ণের চাহিদা বাড়ার অন্যতম কারণ। বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলিপ আগারওয়াল বলেছেন, যেকোনো ধরনের বৈশ্বিক সংকট স্বর্ণের দামে প্রভাব ফেলে, হতে পারে যুদ্ধ বা মহামারিও।
কারণ যখনই মানুষ ডলারের উপরে আস্থা হারায় তখন স্বর্ণের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কাছাকাছি সময়ে যতগুলো যুদ্ধ হয়েছে, ইরান, ইরাক, লিবিয়া এমনকি চীন ও আমেরিকায়। তখনও আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের রেট বেড়েছে। এখন পুরো ইউরোপ স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছে। এই কারণে সংকট এলে স্বর্ণের দাম বাড়ে। আবার বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন সংকটের সময় স্বর্ন বেশি কেনে, তখনও এর দাম বেড়ে যায়।
আগারওয়াল ব্যাখ্যা করেছেন, ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেল এবং স্বর্ণ একে অপরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যেমন ডলার থাকে, তেমনি থাকে স্বর্ণও। মূল্যবান এ ধাতুটি মূল্য পরিশোধেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তেলের দাম বাড়লে বাড়ে স্বর্ণের দাম। আবার উল্টোটাও হতে পারে।
করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে অর্থনীতিতে ধস নেমেছিল। বিনিয়োগে দেখা দেয় এক ধরনের অনিশ্চয়তা। বৈশ্বিক অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন মানুষের অন্য কোন খাতে বিনিয়োগের তুলনায় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণকে বেছে নেবার প্রবণতা অনেক বাড়ে। কেননা স্বর্ণ তেল ও গ্যাসের মতো শেষ হয়ে যায় না। নানা হাত ঘুরে তা শেষ পর্যন্ত পৃথিবীতেই থাকে। তাই স্বর্ণের স্থায়িত্ব আছে। অন্যদিকে পৃথিবীতে স্বর্ণের মজুদ নির্দিষ্ট পরিমাণেই রয়েছে। সাধারণত বাজারে যেকোনো পণ্যের দাম নির্ধারিত হয় সেই পণ্যের চাহিদা এবং যোগানের ভিত্তিতে। কিন্তু স্বর্ণের দাম যোগানের চেয়ে ভোক্তার আচরণের উপর বেশি নির্ভরশীল।
উল্লেখ্য, তাত্ত্বিকভাবে পারদ বা মারকিউরি থেকে নিউক্লিয়ার ফিউশন ও তেজস্ক্রিয় ক্ষয় বিক্রিয়ার সাহায্যে স্বর্ণ উৎপাদন করা সম্ভব। তবে পরীক্ষামূলকভাবে সোনা তৈরি বেশ ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া এবং দামও অনেক বেশি হবে। কিন্তু খনি থেকে সোনা উত্তোলন সহজ।
এ পর্যন্ত পৃথিবীতে ২ লাখ টন স্বর্ণ উত্তোলন করা হয়েছে, যা প্রায় ৪টি অলিম্পিক সাইজ সুইমিংপুলের সমান। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরের ১ কিলোমিটারের মধ্যে আরও ১ লাখ টন সোনা আছে।
রাজু