রমজান সামনে রেখে আগেভাগেই বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি
আগামী মার্চ মাসে রমজান সামনে রেখে আগেভাগেই বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার। খাদ্যপণ্যের এই তালিকায় রয়েছে চাল, গম, চিনি, ডাল, ছোলা, ভোজ্যতেল, খেজুরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটিতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চাল-গম এবং ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ হাজার টন চিনি কেনার ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। ইতোপূর্বে গত সপ্তায় ভোজ্যতেল ও ডাল কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। শুধু তাই নয়, রমজান মাস সামনে রেখে আগামী ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে আরও বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। মূলত রমজান সামনে রেখে বাজারে স্বস্তি ফেরাতেই এই উদ্যোগ।
এ প্রসঙ্গে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, সরকারি পর্যায়ে আরও সার, চিনি, গম ও চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সে জন্য অর্থের বরাদ্দ নিশ্চিত করেছে সরকার। এ ছাড়া রোজার আগে খেজুর ও মসুর ডাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি বা দাম বৃদ্ধির কারণে যেন ভোক্তাদের কষ্ট না হয় তা নিশ্চিত করা হবে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ২০২৪ সালের একাদশ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিবিধ বিষয়সহ সর্বমোট আটটি প্রস্তাব উদযাপিত হয়। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, খাদ্যদ্রব্যের মজুত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে কী কী জিনিস আমদানি বা মজুত করতে হবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে, এসব বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। কী কী জিনিস আমদানি করতে হবে, কোন দামে ও কখন করতে হবে, তাও মন্ত্রণালয় থেকে বলে দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে তা আসবে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, দেশে ইতোমধ্যে ধান উঠতে শুরু করেছে। ধান ও চাল কী দামে কিনতে হবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে যে মজুত আছে এবং বুধবার যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তা যোগ করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে হিসাব কিছুটা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে। বৈঠকে আরেকটি বিষয় আলোচনা হয়েছে, যেটা ঠিক আলোচ্য সূচিতে ছিল না। সেটা হলো কৃষকের কাছ থেকে যে দামে ধান কেনা হয় এবং যে দামে তা ভোক্তাদের কাছে বিক্রি হয়, সে ক্ষেত্রে যেন তেমন একটা ব্যবধান না থাকে।
সে জন্য বাজার মনিটরিং বা পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা। একইসঙ্গে সুলভ মূল্যে সুষম খাদ্য নিশ্চিত করার কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা। ভাতের সঙ্গে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধের প্রাপ্যতা যেন থাকে, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা। এদিকে বৈঠকে যেসব প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে, তার মধ্যে আছে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-১ এর আওতায় ৫০ হাজার টন গম ক্রয়ের প্রস্তাব। প্রতি টন ৩০১ দশমিক ৩৮ মার্কিন ডলার দরে মোট ১৮০ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় এই গম কেনা হবে।
কাতার থেকে চতুর্থ লটের ৩০ টন ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। প্রতি টনের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৮৯ দশমিক ৬৭ মার্কিন ডলার, মোট ক্রয়মূল্য ১৪০ কোটি ২৮ লাখ ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী সেদ্ধ চাল ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। প্রতি টন ৪৭৭ মার্কিন ডলার দরে ২৮৬ কোটি ২০ লাখ টাকায় এই চাল কেনা হবে।
এ ছাড়া জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ড থেকে দুই কার্গো তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ২৫৪ কোটি ৩২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৬৪ টাকা। সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার টন গম এবং ও ভারত থেকে ৫০ হাজার টন বাসমতি চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৪৬৭ কোটি ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে ৫ হাজার টন চিনি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ চিনি কিনতে ব্যয় হবে ৬০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
প্রতিকেজি চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০ টাকা ৯০ পয়সা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে এ চিনি বিক্রি করা হবে। এ ছাড়া কাতার থেকে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্রিল্ড ইউরিয়া আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৪০ কোটি ২৮ লাখ ১২ হাজার টাকা। কাতারের মুনতাজাত থেকে এ সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।