.
পশ্চিমের দেশগুলোর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ডেনিমের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ীরা। তুরস্ক, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামসহ প্রায় সব প্রতিযোগী দেশ সব সময়ই ডেনিম বাজারে শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে। করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের দেশগুলোয় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গত তিন বছরে ডেনিম পণ্যের বিক্রি কমেছে। প্রতিদিন দেড় লাখের বেশি ডেনিম ট্রাউজার উৎপাদনকারী প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, ‘২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ইইউর শর্ত পূরণ ও ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে হবে বিধায় পোশাক খাতের সামগ্রিক রপ্তানি বড় চ্যালেঞ্জে আছে।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় ভালোভাবে টিকে থাকতে দেশের ডেনিম কারখানাগুলোর আরও ভিন্ন ভিন্ন পণ্যের প্রয়োজন। তার প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের শেষ নাগাদ অন্তত ১২ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শুরু হওয়া ১৭তম ডেনিম এক্সপো অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। টিম গ্রুপের পরিচালক মো. আলী রসুল (তুহিন) বলেন, তৈরি পোশাকের বিদেশী ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো দেশের শিল্পকারখানায় সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষের পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ তারা সময়মতো পণ্য হাতে চায়। তার মতে, যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তবে ব্যবসা বাড়বে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অন্য দেশে চলে যাওয়া পোশাকের কার্যাদেশ আবার ফিরতে শুরু করবে।
ডেনিম প্রদর্শনীর ফাঁকে সেমিনারে সুইডিশ রিটেইল জায়ান্ট এইচঅ্যান্ডএমর রিজিওনাল কান্ট্রি ম্যানেজার, প্রোডাকশন (বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়া) জিয়াউর রহমান বলেন, শ্রমিকদের দাবি বা অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু অশান্তি করা যাবে না। সম্মিলিত আলোচনা দরকার। ভাঙচুর করে কেউ জিতবে না। সরবরাহ ব্যবস্থার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রয়োজন। স্বচ্ছতাই মূল চাবিকাঠি। সরবরাহ ব্যবস্থা হতে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা ছাড়া আর কেউ আমাদের নজরদারি করবে না। নিজেদের দায়িত্ব নিজেদেরই নিতে হবে। জনগণ ও তাদের উন্নয়নে আরও বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রযুক্তিকে গ্রহণ করুন। এ দেশে উদ্ভাবন ও গবেষণার অভাব আছে। তিনি বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়াতে আরও নতুন ধাঁচের পণ্য উৎপাদনের পরামর্শ দিয়েছেন। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় এক দশমিক আট ট্রিলিয়ন ডলার। তুরস্কের ডেনিম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বোসার প্রতিনিধি ইলমাজ ডেমির বলেন, ডেনিমের চাহিদা কমে যাওয়া সাময়িক। মূল্যস্ফীতির চাপ কমে আসায় ব্যবসা বাড়বে।
করাচির নাভিনা গ্রুপের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মনসুর বিলাল বলেন, দাম ও মানের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আছে।
তিনি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বছরে ৫০ লাখ মিটার ডেনিম কাপড় সরবরাহ করেন। আগামী বছরে বাংলাদেশে তার ব্যবসা অন্তত ২৫ শতাংশ বাড়বে বলেও আশা করছেন। ডেনিম এক্সপোর আয়োজক মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছে ভালো দাম চাই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি করতে হবে, যাতে বাংলাদেশের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা বজায় থাকে।’ এক্সপোর আয়োজকরা জানান, এ বছর ভিসা না পাওয়ায় অনেকে আসতে পারেননি। তারপরও ১৮ দেশের ৫৬ প্রতিষ্ঠান দুই দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে।