পেঁয়াজ একটি মসলা জাতীয় ফসল
পেঁয়াজ একটি মসলা জাতীয় ফসল যা বাংলাদেশের কিছু এলাকায় অর্থকরি ফসল হিসেবে চাষ হয়ে থাকে। এখানে অনেক উচ্চফলনশীল জাতের উদ্ভাবন হয়েছে কিন্তু আমদানিনির্ভরতা কমেনি। যেহেতু সারা বছর এর চাহিদা রয়েছে আমাদের খাদ্য প্রক্রিয়ায়। বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানি হয়ে থাকে মূলত ভারত থেকে অবস্থানগত কারণে। পেঁয়াজের বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে যেমন পুষ্টিগুণ বৃদ্ধিতে, ক্যালসিয়াম, সালফার, ভিটামিন সংযোজনে, শরীরের তাপমাত্রা কমাতে, লিভারের হজম শক্তি বাড়াতে, ত্বকের সমস্যা নিরসনে, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিক রোগ নিয়ন্ত্রণে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, বিগত অর্থবছরগুলোতে দেশে পেঁয়াজের গড় উৎপাদন ছিল ২৬ লাখ ১৯ হাজার টন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে বছরে ২৪ লাখ টন। আবার উৎপাদিত পেঁয়াজের একটি অংশ (প্রায় ৩০ শতাংশের মতো) বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয় বিধায় মোট ঘাটতি ৮ থেকে ৯ লাখ টন থেকেই যায় যা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। প্রতি বছরই অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, যার ৯৫ ভাগের বেশি আসে ভারত থেকে।
ক্রেতার চাহিদা বুঝে বাংলাদেশের আমদানিকারকেরা সাধারণত ভারত থেকে নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ আমদানি করেন। এই মৌসুমে আমদানি করা পেঁয়াজের এলসি মূল্যই থাকে ৫৫০ মার্কিন ডলার। এই দামে ৮ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানিতে প্রতিবছর দেশকে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়। যদিও এর পুরোটাই সাশ্রয় করা সম্ভব, যদি দেশেই ভারতীয় নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজের আবাদ বাড়ানো যায়। আর এখানেই হচ্ছে সম্ভাবনার সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র।
আশার খবর হচ্ছে, কৃষি বিভাগ বলছে, ইতোমধ্যেই দেশে এ জাতের পেঁয়াজের উৎপাদন শুরু হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ২০২০ সালে শুরু হওয়া উদ্যোগ এখন রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোরসহ বেশ কিছু জেলায় ভারতীয় এই জাতের পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। এ জাতের পেঁয়াজ উৎপাদনের খরচ কম। মাত্র আড়াই মাসের মাথায় ফলন পাওয়া যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফসল
শাখার পরিচালক ড. কাজী আফজাল হোসেন বলেছেন, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো এবং আমদানিনির্ভরতা কমানোই নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষের উদ্দেশ্য। এতে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে কোথাও কোথাও। ফলাফল ভালো থাকলে ভবিষ্যতে চাষ আরও বাড়বে। দৈনন্দিন জীবনে অত্যাবশ্যকীয় একটি কৃষিপণ্য হচ্ছে পেঁয়াজ। ধনী-গরিব সবার রান্নাঘরে এর রয়েছে ভীষণ কদর।
তবে প্রতিবছর আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর-এই তিন মাস দেশে পেঁয়াজের বড় সংকট থাকে। এই সময়ে সরবরাহ সংকটের গভীরতা অনুযায়ী কোনো বছর এর দাম ট্রিপল হাফ সেঞ্চুরি থেকে ডাবল সেঞ্চুরিও পার হতে দেখা গেছে। এতে ভোক্তার নাভিশ্বাস সরকারকেও ফেলেছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক বলেছেন, এখন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের চাহিদা বাড়ার কারণে পেঁয়াজের ব্যবহার আরও বেড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলেছে, আগে শুধু শীতকালেই মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ হতো। ২০২০-২১ মৌসুম থেকে শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ। নাসিক-৫৩ জাতের ভারতীয় এ পেঁয়াজের বীজ আমদানি করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।
ওই পেঁয়াজবীজ প্রণোদনা হিসেবে বিনা মূল্যেই চাষিদের সরবরাহ করা হয়। মাঠে মাঠে চাষ হয়েছে ভারতীয় নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ। এ পেঁয়াজ হয় মাটির ওপরেই। ইতোমধ্যে জমিতে পেঁয়াজ দেখা দিয়েছে। তা দেখে আশায় বুক বেঁধেছেন চাষিরা। বিঘাপ্রতি লাখ টাকা লাভের আশা তাঁদের। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খেতুর গ্রামে এহসানুল কবির টুকু এবং রাকিব আলী জানান, নভেম্বরের শেষের দিকে তাঁরা জমি থেকে পেঁয়াজ তুলবেন। তখন একেকটি পেঁয়াজই হবে ১০০ গ্রাম।
প্রতি বিঘায় ১২০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা তাঁদের। যদি ৮০ মণও হয়, তাহলেও অন্তত ১ লাখ টাকা লাভ হবে হবে। কারণ, বিঘাপ্রতি খরচ পড়বে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। গোদাগাড়ীর কাঁঠালবাড়িয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আতিয়া রহমান বলেছেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হলে এই পেঁয়াজ চাষে কোনো সমস্যা হবে না।
সরকারিভাবে মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেশকিছু কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ। ফলে এবার ঠাকুরগাঁওয়ে উল্লেখযোগ্যহারে মোয়াজ্জেম ও মাসুদ রানার মতো অনেকই পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করেছেন। ভোক্তা, উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনায় রেখে আমদানি বাণিজ্যে আমদানিকারকদের সকল বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করতে হবে।
অর্থনীতি প্রতিবেদক