ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১

লাইভ বেকারি

ক্রেতাদের আস্থায় পথচলা

জলি রহমান

প্রকাশিত: ০০:০১, ৩ নভেম্বর ২০২৪

ক্রেতাদের আস্থায় পথচলা

ক্রেতাদের আস্থায় পথচলা

এসএসসি পরীক্ষার পরেই বিয়ে হয় সানজিদার। ত্রিশোর্ধ্ব এ নারীর বড় মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আর ছোট মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী। মেয়েরা বড় হওয়াতে অলস সময় যেন কাটতেই চায় না। তার মাথায় আসে নানা চিন্তা। একসময়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে অনলাইন বিজনেসের কথা ভাবতে থাকে। কিন্তু সেখানে প্রতিদিন লাইভ ভিডিও করতে হবে। আর সেগুলোতে অনেক প্রস্তুতি প্রয়োজন।

তাই সে চিন্তা বাদ দিয়ে ভাবতে থাকেন, তার এক বন্ধু লাইভ বেকারির বিজনেস করছে, যা বেশ লাভবান। আর সেই ভাবনা থেকে প্রায় পাঁচ মাস আগে নিজেই দিলেন একটি লাইভ বেকারি। মেশিন কিনতে এবং ডেকোরেশন করতে প্রাথমিক পর্যায়ে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৭ লাখ টাকা। প্রথম দুই-তিন মাস তেমন লাভ না হলেও এখন ভালোই চলছে। রয়েছে দুজন বিক্রয়কর্মী এবং একজন ম্যানেজার। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় নিজ দোকানে আসেন সানজিদা।

সকালে এসে দেখেন খাবার ঠিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে কিনা। আবার প্রতিটি খাবার অল্প করে খেয়ে দেখেন খাবারের গুণগতমান ঠিক আছে কিনা। এলাকায় সুনাম কুড়িয়েছেন পাঁচ মাসেই। ক্রেতাদের কাছে মানের ব্যাপারে স্বচ্ছতা এবং ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতার কারণে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বেশ। বেকারিতে সদ্য বেক করা গরম গরম ব্রেড, কাপ কেক, ঝাল পেটিস কিনতে ভিড় করছে ক্রেতারা। ভোজনপ্রেমীদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে লাইভ বেকারি।

মগবাজার রেললাইনের খুব নিকটবর্তী সানজিদার ‘হালাল ফুড’ নামক এ দোকানে কথা হলো মিজান (ছদ্মনাম) নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেছেন, ‘এখানে আমার প্রতি সপ্তাহেই আসা হয়। বাচ্চাদের এবং নিজেদের খাবারের জন্য বেকারি আইটেমগুলো এখান থেকেই কিনে নেই। গরম গরম ফ্রেশ খাবার পাওয়া যায়। আগে থেকেই লাইভ বেকারি ভালো লাগতো কিন্তু দূরে বিধায় সবসময় যাওয়া সম্ভব হতো না।

এখন ঘরের কাছে হওয়ায় দাম একটু বেশি হলেও আস্থার সঙ্গে ফ্রেশ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করি।’  সানজিদা এবং তার স্বামী সাহিদ ভাষাণী দুজন মিলে এ দোকানটি পরিচালনা করছে। প্রতিদিন বিক্রি হয় প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার। ব্যবসা সফলভাবে পরিচালিত হলে এর শাখা বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে সানজিদার।
গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) মগবাজারের পথ ধরে হেঁটে কিছুটা সামনে এগোলে রেড ক্রিসেন্টের সামনেই চোখে পড়ল আরেকটি লাইভ বেকারির দিকে। এটির ডেকোরেশন চলছে। দোকানের মালিক আশিকুর রহমান খান  জানাল, আগামীকাল এর উদ্বোধন হবে। কানাডা থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে এসেছেন তিনি। বেশকিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকরিও করেছেন।

অবশেষে মানুষকে ফ্রেশ খাবারের নিশ্চয়তা দিতে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করে বেশ বড় পরিসরে শুরু করছেন এ ব্যবসা। তার মতে, ‘বিদেশে এরকম অনেক দেখা গেলেও বাংলাদেশে সম্প্রতি এর বিস্তার ঘটেছে। এটি যথেষ্ট ইতিবাচক দেশের জন্য। খুব সহজেই কিছু পুজি নিয়ে শুরু করা যায় এ ব্যবসাটি। এটা যেহেতু কোনো ব্র্যান্ড না, তাই খুব সহজেই মানুষ বিশ^াসও করে।  
লাইভ বেকারি কি? 
লাইভ বেকারি হলো এমন একটি দোকান যেখানে বেকিংয়ের পুরো প্রক্রিয়াটি দেখতে পান ক্রেতারা। বেকড পণ্যের কাঁচা উপাদান থেকে কিভাবে প্রস্তুত হয় ব্রেড, কেক, পেস্ট্রিসহ নানা আইটেম। সবকিছুই ঘটে ক্রেতাদের সামনে। যা চোখের শান্তি ও বেকারির প্রতি আস্থা তৈরি করে। তাকে সাজানো থাকে নানান খাবারের আইটেম, যার সুঘ্রাণ ছড়িয়ে যায় বহুদূর।

বর্তমানে লাইভ বেকারি ক্রেতাদের কাছে একটি সফল উদ্যোগ হিসেবে গড়ে উঠেছে। এখানে বিনিয়োগের ঝুঁকিও খুব কম। যুগ যুগ ধরে বাঙালিদের আবার চায়ের সঙ্গে টা না হলে চলে না। ঘুম থেকে উঠে ধোঁয়া ওঠা এককাপ চা আর দুটি বিস্কিট হলে মনটা থাকে বেশ ফুরফুরে। আর বিস্কিট, ড্রাইকেকসহ নানা বেকারি আইটেম আজকাল প্রায় প্রতিটি বাসায়ই থাকে। তবে সবাই চায় যেকোনো খাবারই হোক ফ্রেশ। সেক্ষেত্রে বর্র্তমানে লাইভ বেকারি খাবারের ব্যাপারে বেশ নির্ভরশীল।

বছরখানেক আগেও লাইভ বেকারি খুব একটা দেখা যেত না। এখন রাজধানীর অলিতে-গলিতে প্রায়ই চোখে পড়ে। দোকানের অনেক দূর থেকেই নাকে আসে হরেক রকম খাবারের ঘ্রাণ। যেহেতু প্রতিনিয়ত বাড়ছে লাইভ বেকারির সংখ্যা, তাই অধিক লাভ করার প্রবণতা থেকে এক ধরনের পরোক্ষ প্রতিযোগিতা তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রত্যাশা থাকবে খাবারের গুণগতমান যেন সবসময়ই ঠিক থাকে। কম দামের উপাদান দিয়ে খাবার তৈরি করে লাভের আশা করলে সাময়িক লাভবান হলেও, তা দীর্ঘসময়ের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

×