শিপিং করপোরেশন
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত শিপিং করপোরেশন ৫২ বছরের ইতিহাসে গত অর্থবছরেই প্রথম ২৫০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০১৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে মুনাফার কারণে আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি অর্থায়নে জাহাজ কেনার পর সরকারকে ঋণের টাকা পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। পাশাপাশি এবার নিজ খরচে দুটি জাহাজ কেনার সিদ্ধান্তও নিয়েছে করপোরেশন।
বুধবার অনুষ্ঠিত করপোরেশনের পর্ষদ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা। শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নেওয়ার পর করপোরেশনের ব্যবসা বৃদ্ধিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নতুন নতুন গন্তব্যে জাহাজ পরিচালনাসহ নানামুখী উদ্যোগের প্রেক্ষিতে ৫২ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে যা হয়নি, তা করার সিদ্ধান্তও নিয়েছি আমরা। সরকারি অর্থায়নে জাহাজ কিনলেও এবার নিজেদের অর্থায়নে জাহাজ কিনবে শিপিং করপোরেশন, যা প্রতিষ্ঠানটির নিজের সক্ষমতার বড় উদাহরণ। নতুন জাহাজ যুক্ত হলে জাহাজের বহর বাড়বে, পাশাপাশি ব্যবসারও উন্নয়ন হবে। সরকারের ঋণ পরিশোধের বিষয়ে করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাংলাদেশ ও চীন সরকারের সঙ্গে জি-টু-জি চুক্তিতে শিপিং করপোরেশন ৬টি জাহাজ কিনেছে।
বাংলাদেশ সরকার জাহাজ কেনার ওই টাকা চীনকে পরিশোধ করেছে। সরকারের সঙ্গে একটি ঋণ পরিশোধ-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের পর বোর্ড সভায় প্রথম ধাপে ৪৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগে আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় সরকারকে টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন সেই টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। ধাপে ধাপে সব টাকাই পরিশোধ করা হবে। কর্মকর্তারা জানান, দুটি জাহাজ কিনতে কর্পোরেশনের ব্যয় হতে পারে ৭৫০-৮০০ কোটি টাকার মতো।
তবে জাহাজ কেনা প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার পর এই ব্যয় কম-বেশি হতে পারে। এর আগে সরকারি অর্থায়নে জি-টু-জি ভিত্তিতে জাহাজ কিনেছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন থেকে ৬টি জাহাজ কিনেছে শিপিং কর্পোরেশন। এসব জাহাজ কিনতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
সরকারি অর্থায়নে জাহাজ কেনার পর এবারই প্রথম সরকারকে ঋণের টাকা পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিপিং করপোরেশন। বর্তমানে করপোরেশনের কেনা ওই ছয়টি জাহাজের মধ্যে ৫টি জাহাজ বিভিন্ন রুটে পণ্য পরিবহন করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনের বন্দরে নোঙর করে থাকা অবস্থায় মিসাইল আক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ।