পেঁয়াজের দাম কমাতে শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ
সপ্তাহের ব্যবধানে জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজে ২০-৩০ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৬০ টাকায়। ঢাকার কোনো কোনো বাজারে দাম আরও বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। এ অবস্থায় পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারে এনবিআরকে সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। আশা করা হচ্ছে, শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে।
এদিকে দাম বাড়ায় পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কয়েক বছর ধরেই অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম বাড়াতে তৎপর থাকে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। সাধারণত এই সময়ে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে দাম বাড়ানো হয়। আর এই দাম বাড়ানোর সঙ্গে একটি অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বরাবরই জড়িত। এরাই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ফলে আমদানি অব্যাহত থাকার পাশাপাশি দেশীয় সরবরাহ থাকার পরও বাড়ছে মসলা জাতীয় এই পণ্যের দাম।
এ অবস্থায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে বাজার তদারকি করা হলেও দাম কমছে না। বরং বাজারে দ্রুত সরবরাহ বাড়ানো সম্ভন না হলে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় আমদানি করা পেঁয়াজের ওপর থেকে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করার জন্য এনবিআরকে সুপারিশ করেছে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৬-২৭ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ৭৫-৮০ শতাংশ দেশীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। বাকি চাহিদাপূরণে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, যার বেশিরভাগই আসে ভারত থেকে।
স্থানীয় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমাতে আমদানি করা পেঁয়াজের ওপর থেকে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করার জন্য এনবিআরকে সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। এ বিষয়ে এনবিআরকে একটি সুপারিশপত্র পাঠিয়েছে। কমিশনের চিঠিতে বলা হয় বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে স্থানীয় পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ১৫০-১৬০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গত এক মাসে দেশীয় পেঁয়াজের দাম ৩০.২৩ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৭.৮৯ শতাংশ বেড়েছে।
ভারতে এ বছর ভারি বৃষ্টির কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় পেঁয়াজ রপ্তানিতে দেশটি ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। যার ফলে বাংলাদেশে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কমিশন আরও জানায় অক্টোবরে পেঁয়াজের আমদানি আগের মাসের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে স্থানীয় বাজারে এখনো পণ্য সরবরাহে ঘাটতি রয়ে গেছে। পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি করে দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এ মুহূর্তে ৫ শতাংশ শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করা যায়। এতে আমদানির খরচ কমবে এবং পেঁয়াজ আমদানিকে উৎসাহিত করা হবে।
ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ মোট ৪৩ হাজার ৯৩৭ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে, যার গড় মূল্য ছিল টনপ্রতি ৪৬৬.১৪ ডলার। এর বিপরীতে, অক্টোবরে আমদানির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৮০ হাজার ৯৭৩ টনে পৌঁছেছে। এ মাসে গড় মূল্য ছিল টনপ্রতি ৪২৮ ডলার। এ ছাড়া গত দুই মাসে মোট এক লাখ ৪০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে। ভারত থেকে আমদানির খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক বছরে পেঁয়াজের দাম ১১৬.৪৯ শতাংশ বেড়েছে। তবে গত মাসে দাম ৬.৩৮ শতাংশ হ্রাস পেলেও গত সপ্তাহে তা আবার ৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
অভিযোগ রয়েছে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে সম্প্রতি পেঁয়াজ আমদানি বেড়েছে। এ ছাড়া বাজারে দেশী পেঁয়াজের সরবরাহও ভালো। কিন্তু এরপরও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারি সংস্থাগুলো বাজার তদারকিতে গিয়ে দাম বেশি নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।