শেখ হাসিনা
শুধুমাত্র ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছাপিয়েছেন ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এতো টাকা দিয়ে করেছেন টা কী? দুর্নীতি নাকি ভিন্ন কিছু? এটাই এখন প্রশ্ন গণমানুষের।
এছাড়াও গত ১৫ বছরে কত হাজার কোটি টাকা ছাপিয়েছে লীগ সরকার এটাই এখন বড় প্রশ্ন?
সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, লীগ সরকার ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে নানা ধরনের ব্যয় নির্বাহ করেছেন। তবে এই টাকা কতদিনে ছাপানো হয়েছে তা স্পষ্ট করেননি সাবেক গভর্ণর।
একটি গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে শুধুমাত্র ২৩-২৪ অর্থবছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাপানো হয়েছে
আর ২০২২ ২৩ অর্থ বছরে সরকার ৭৮ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে
সরকার যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেয় সেটি টাকা ছাপানোরই নামান্তর
এর আগের বছরগুলোতেও সরকার টাকা ছাপানোর মাধ্যমে খরচ করেছে। তবে স্বাধীনতার পর থেকে অন্য কোন সরকার এক বছরে এত টাকা ছাপানোর ধারে কাছেও যায়নি।
জনমনে প্রশ্ন সরকার কি চাইলেই ইচ্ছামত টাকা ছাপাতে পারে??
টাকা ছাপানো বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিয়ম মাফিক কাজ। পুরনো নোট তুলে নিতেই সরকার নিয়মিতভাবে নতুন নোট ছাপে। প্রশ্ন হচ্ছে পুরানো ছাড়াই যখন সরকার নতুন নোট ছাপে। সেটার ভিত্তিটা কি?
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার বিশ্লেষণ করে কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন টাকা ছাপানোর কাজ করে থাকে যদিও এমন কোন ধরাবাধা নিয়ম নেই কত টাকা ছাপানো যাবে বছর তবে একটি নির্দিষ্ট অংকের বাইরে টাকা ছাপানো যাবে না। পুরো বিষয়টি নির্ভর করে দেশের অর্থনীতির উপর
দেশের সম্পদ কত বেশি তার ওপর টাকা ছাপানো টা নির্ভর করে। যখন দেশের সম্পদ না বাড়লেও টাকা ছাপানো হয় তখন দেশের দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায় তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপানোর কাজে ভারসম্য নীতি অনুসরণ করে
যদি টাকা ছাপানোর মাধ্যমে উৎপাদন মূলক কাজে ব্যয় করা হয় এবং সেখানে কোন দুর্নীতি না হয় তাহলে টাকা ছাপানো হলে অর্থনৈতিক বাজে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে। তবে তারও একটি সীমা রয়েছে তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত নতুন টাকা ছাপানো বা সরকারকে সরাসরি ঋণ দিতে চায় না।
তাই সাধারণত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে তারল্য সংকট টাকায় সে বছর ব্যাংক গুলো থেকে ঋণ নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। যার ফলে সাবেক সরকার ব্যয় নির্বাহ করতে এবং অবকাঠামো উন্নয়ন চালিয়ে যেতে বাধ্য হয়ে টাকা ছাপায় কিন্তু হাসিনা সরকার এরপরও প্রশাসনিক ব্যয় কমাতে কিংবা উন্নয়নের পিছনে ব্যয় সংকোচন করতে চায়নি, বলে জানিয়েছে ব্যাংকিং সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
বিশেষ করে ২০২৪ সালের নির্বাচনে আগে সরকার বেল লাগাম টানতে অনিচ্ছুক ছিল তাছাড়া টাকা ছাপিয়ে ঋণ নেয়া সরকারের জন্য সবচেয়ে সহজ কাজ। তাই সরকার সহজ পথের দিকেই এগিয়েছে
তবে অর্থনীতিবীদের সমালোচনার মুখে ২০২৩/২৪ অর্থবছরে সরকার ছাপানোর মাধ্যমে টাকা নেয়ার পরিমান কিছুটা কমিয়ে দেয়।
বৈদেশিক মুদ্রার আয় কিংবা উৎপাদন না বাড়িয়ে শুধু ছাপানোর মাধ্যমে নিজস্ব মুদ্রা সরবরাহ দেশে দ্রব্যমূলের দাম বেড়ে যায়। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়। ধরুন ১ টাকার সম্পদ রয়েছে আপনার। কিন্তু আপনি টাকা ছাপিয়ে ২ টাকা করে ফেললেন একই সম্পদের দাম হয়ে যাবে ২ টাকা। আবার টাকা বেশি ছাপানো হলে চাহিদা জনিত মূল্যস্ফিতিও হয়
ধরুন আপনি প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে খরচ করতে থাকেন। আজকে যদি আপনাকে ১০০০ হাজার টাকা করে দেয়া হয় আপনি যেকোনো কিছু কেনার ক্ষেত্রে দামের চিন্তা করবেন না একই সঙ্গে মাঝে নতুন নতুন চাহিদা তৈরি হবে
চাহিদা জনিত চাপের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে কারণ চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদন বাড়ে।
আবার বড় সমস্যা হলো যখন টাকা সরবরাহ বাড়ে তাঁর সরাসরি উপকারটা পায় আসলে উউচ্চবিত্তরা। কারণ তাদের আয় বেশি ক্রয় ক্ষমতাও বেষী। কিন্তু দরিদ্র মানুষের ওই পণ্য কেনা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে যারা দরিদ্র তাদের জন্য সমস্যা হয়ে পড়ে
সাধারণত এক টাকা ছাপানো হলে অর্থনীতিতে সরবরাহ বাড়ে ৫ টাকা সপরিমাণ, অর্থনীতির ভাষায় যাকে বলে ভেলোসিটি অফ মানে বলা হয়। এজন্য টাকা ছাপানো হলে তা সরাসরি দ্রব্যমূল্য বাড়াতে সহায়তা করে
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নতুন টাকা ছাপানো হয়েছে হয় প্রশাসনিক কাজে অথবা উন্নয়নে যেখানে আবার দুর্নীতি হয়েছে চরমভাবে যে কারণে মূল্যস্ফীতির হার অন্তত গত ১ যুগের মাঝে সর্বোচ্চ উঠেছে মূল্যস্ফিতি। কষ্ট পেয়েছে নিন্মবিত্ত মানুষ।
তবে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার অর্থনীতির এই ভঙ্গুর অবস্থা থেকে দেশকে উপরে তুলে আনবেন এমনটাই ধারণা করছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা।
বারাত