ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১

সিন্ডিকেটের নতুন কৌশল

কাপ্তানবাজারের ডিম যাচ্ছে নরসিংদী সাভারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

কাপ্তানবাজারের ডিম যাচ্ছে নরসিংদী সাভারে

কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে দাম বেশি

কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে নিতে ঢাকার কাপ্তান বাজারে ডিম না পাঠিয়ে নরসিংদী ও সাভারের বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ডিমই কয়েক হাত ঘুরে আবার আসছে কাপ্তান বাজারে। এটা অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নতুন কৌশল। এতে করে কাপ্তান বাজারেই প্রতিদিন ডিমের সংকট হচ্ছে প্রায় ৩০ লাখের মতো। এই বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ পিস ডিম বিক্রি করে থাকেন। সেখানে এখন ১৫-২০ লাখ ডিম বিক্রি হচ্ছে। একই অবস্থা ঢাকার কাওরানবাজারসহ অন্যান্য বাজারেও। ফলে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে ডিমের বাজারে স্বস্তি ফিরে আসছে না। 
রবিবার সকালে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমানের  নেতৃত্বে কাপ্তানবাজার পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে সংগঠনটির বাজার মনিটরিং সেল। প্রশাসকের সঙ্গে বাজার পরিদর্শনে অংশগ্রহণ করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও খন্দকার গ্রুপের চেয়ারম্যান খন্দকার রুহুল আমীন। এ সময় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ডিমের মূল্য ও সরবরাহ পরিস্থিতি বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করেন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক।

পরে কাপ্তানবাজারের ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির  নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। ডিমের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা আহ্বান করেন তিনি। প্রশাসক বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে আপনাদের ভূমিকা দেখতে চায় এফবিসিসিআই। কেউ যদি কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করে তাদের তথ্য আমাদের দিন। আমরা এসব তথ্য সরকারকে হস্তান্তর করব। 
সরকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা  নেবে। এ প্রসঙ্গে খন্দকার রুহুল আমীন বলেন, ডিমের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এটা অনেকটাই প্রমাণ হয়েছে। ঢাকার অন্যতম পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত কাপ্তান বাজারে দৈনিক ডিমের চাহিদা ৪০-৫০ লাখ পিস, কিন্তু সেখানে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ১৫-২০ লাখ পিস। তা হলে তো সঙ্কট হবেই। আর এসব ডিম নরসিংদী, সাভার এবং রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ডিমই কয়েক হাত ঘুরে আবার ঢাকায় আসছে। পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগী এবং অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা জড়িত।

তিনি বলেন, এফবিসিসিআই প্রশাসক যাতে রাতে কাপ্তান পরিদর্শন করেন আমরা সেই প্রস্তাব রেখেছি। তা হলে তিনি প্রকৃত অবস্থা জানতে পারবেন। দ্রুত এফবিসিসিআই থেকে রাতে পাইকারি বাজার পরির্দশন করা হবে।  বিশেষ করে কাপ্তান বাজাডরে রাত ৯ থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত বেচাবিক্রি হয়ে থাকে। খন্দকার রুহুল আমীন বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিদপ্তর ও এফবিসিসিআইসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার কঠোর বাজার মনিটরিং প্রয়োজন। একইসঙ্গে ডিম, আলু, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ ও মুরগিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা দিতে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত রয়েছে। কোনো সিন্ডিকেট এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের সমর্থন করে না এফবিসিসিআই। তিনি বলেন, ফেসবুক ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেন। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। 
তবে বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষে এফবিসিসিআইয়ের সকল কার্যক্রমে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান কাপ্তান বাজারস্থ ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম। সরকার নির্ধারিত দামে এবং চাহিদা অনুযায়ী ডিমের সরবরাহ বজায় থাকলে বাজারমূল্য কমে আসবে বলে জানান তিনি। এজন্য ডিমের উৎপাদন বাড়ানো এবং ফিডের দাম কমানোর ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতিনিধি, ছাত্র সমন্বয়কসহ অন্যান্যরা।

এদিকে, রবিবার ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতিডজন ফার্মের ডিম ১৫৫-১৬০ টাকা এবং প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯৫-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে ফের এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে মুরগির দাম বাড়তে শুরু করেছে। মুরগির পাশাপাশি অস্থির হয়ে পড়েছে পেঁয়াজ, চালসহ অন্যান্য পণ্যের দাম। অথচ দাম নিয়ন্ত্রণে এসব পণ্যের শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা দিয়ে রেখেছে সরকার। এ ছাড়া প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতও চালের রপ্তানি শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা অনেক কমদামে চাল আনতে পারছেন। এ অবস্থায় দাম বাড়া যৌক্তিক নয় বলে মনে করা হচ্ছে।

×