ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১

বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি

শেয়ারবাজারে সূচক চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২:৪২, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

শেয়ারবাজারে সূচক চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

শেয়ারবাজারের নাজুক পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে

শেয়ারবাজারের নাজুক পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। পতনের তীব্রতা এত বেশি যে, একদিনে প্রধান শেয়ারবাজারের সূচক ১৪৯ পয়েন্ট কমে চার বছরের সর্বনি¤œ পর্যায়ে চলে এসেছে। পুঁজি হারিয়ে রাস্তায় নেমে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। 
সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকেই আশা প্রকাশ করেছিলেন শেয়ারবাজারে স্বস্তি ফিরবে। কিন্তু ঘটছে উল্টোটা। শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতনে দিশাহারা বিনিয়োগকারীরা। তারা চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছাড়তে শুরু করেছেন। নিয়মিত সিকিউরিটিজ শূন্য হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার পোর্টফোলিও।
আস্থাহীনতার কারণে টানা পতনের কারণে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সূচকটি ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে সর্বনি¤œ অবস্থায় নেমে গেছে। অর্থাৎ রবিবারের সূচকটি গত প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর সূচকটি রবিবারের তুলনায় কম ছিল। ওইদিন ডিএসইএক্স ছিল চার হাজার ৯৩৫ পয়েন্টে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে। যা গত সপ্তাহে কমেছে ১৪৩ পয়েন্ট। অর্থাৎ একদিনেই পুরো সপ্তাহের চেয়ে সূচক বেশি কমেছে। রবিবারের পতনটি সবচেয়ে হতাশাজনক বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। 
এদিকে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে গত কয়েকদিনের মতো রবিবারও মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের বিনিয়োগকারীরা।
দুপুরে বিভিন্ন ব্যানারে বিনিয়োগকারীরা এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। বিনিয়োগকারীদের দাবি, বিএসইসি চেয়ারম্যান শেয়ারবাজার বোঝেন না, যার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এই লোকের পদত্যাগ খুবই জরুরি। যার কোনো বিকল্প নেই।
মানববন্ধন পালনকালে শেয়ারবাজার পতন রোধে তাৎক্ষণিক করণীয় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নূরুল ইসলাম মানিক বলেন, বর্তমান মার্কেট পরিস্থিতির কারণে গেইন-ট্যাক্স দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। এই সময়ে বিনিয়োগকারীরা জানান, বর্তমান মার্কেট পরিস্থিতির কারণে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে (তদন্ত ও অসময়ে জেড গ্রুপে প্রেরণ)। কোম্পানিসমূহের শেয়ারে কোনো ক্যাটাগরি থাকতে পারবে না (এ, বি, জেড ইত্যাদি)। কোম্পানিগুলোকে আয়ের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করতে হবে।
ব্যাংক, ফাইন্যান্স, ইন্স্যুরেন্স, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও আইসিবিসহ পুঁজিবাজারে তাদের যতটুকু বিনিয়োগ করার কথা, তা শতভাগ কার্যকর করতে হবে। এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড মার্কেটে (ইটিএফ) দ্রুত বিনিয়োগ করতে হবে। কোম্পানিগুলোকে ন্যূনতম শেয়ার ধারণ ৩০ শতাংশ অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। বিএসইসি’র দায়িত্ব অন্তত ১০টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজার বিনিয়োগ নিয়ে আসা। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি পরপর দুই বছর লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থ হলে তার বোর্ড পুনর্গঠন করতে হবে। সর্বশেষ ফোর্স সেল বন্ধ করতে হবে।
পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনও কিছুটা কমেছে। ডিএসইতে ৩০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার পরিমাণ আগের দিন হয়েছিল ৩০৬ কোটি এক লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন কমেছে দুই কোটি ২০ লাখ টাকা বা এক শতাংশ।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৬টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২৯টি বা ৭.৩২ শতাংশের। আর দর কমেছে ৩৪১টি বা ৮৬.১১ শতাংশের ও দর পরিবর্তন হয়নি ২৬টি বা ৬.৫৭ শতাংশের।
অপরদিকে সিএসইতে রবিবার চার কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২০৪টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ২৩টির, কমেছে ১৭৩টির এবং পরিবর্তন হয়নি আটটির। এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৯৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪০০৭ পয়েন্টে।

×