ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের

সমবায় ব্যাংকের স্বর্ণ আত্মসাতের তদন্তে নতুন মোড়

নিয়াজ আহমেদ লাবু

প্রকাশিত: ২২:২৮, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

সমবায় ব্যাংকের স্বর্ণ আত্মসাতের তদন্তে নতুন মোড়

একশ’ কোটি টাকার সোনা আত্মসাত

বহুল আলোচিত সমবায় ব্যাংকে গ্রাহকের বন্ধককৃত একশ’ কোটি টাকার সোনা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। ওই কেলেঙ্কারির হোতা ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদকে আগে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হলেও এখন তাকে জড়ানো হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে নতুন একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে চার কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে। একই সঙ্গে চলছে সোনা আত্মসাতের ঘটনার তদন্ত। 
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সোনা জমা বা বন্ধক রেখে সমবায় ব্যাংক  থেকে ঋণ নিয়েছিলেন সাধারণ গ্রাহকরা। গ্রাহকদের সেই সম্পদ ভুয়া মালিক সাজিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ। নথিপত্র বলছে, সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ২০২০ সালে মহিউদ্দিন আহমেদ মোট ৭ হাজার ৩৯৮ ভরি সোনা বিক্রি করে দেন, যার বর্তমান বাজারমূল্য অনুমানিক একশ’ কোটি টাকা। এতে ব্যাংকটির ২ হাজার ৩১৬ জন গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আত্মসাতের অপকর্ম ছাড়াও প্রভাব খাটিয়ে নিজের ৬৩ জন স্বজন ও আত্মীয়কে নিয়োগ দিয়েছেন ব্যাংকটিতে। 
মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এর আগে যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। 
সোনা বিক্রি ঘটনা ফাঁস  হওয়ার পর তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিল পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। সমবায় ব্যাংকটি তাদের অধীনে পরিচালিত হয়। ২০২১ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সোনা বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনায় মামলা করে। মামলার এজাহারে ৯ আসামির মধ্যে মহিউদ্দিন ১ নম্বর আসামি ছিলেন। তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগপত্র থেকে নিজের নামটি বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। সমবায় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সেই তদন্ত প্রভাব খাটিয়ে থামিয়ে দেন মহিউদ্দিন আহমেদ। 
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মহিউদ্দিন আহমেদ সস্ত্রীক আত্মগোপনে চলে যান। এর পর সমবায় ব্যাংকে গচ্ছিত সোনা বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাটি পুনরায় সামনে চলে আসে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার ও সমবায় উপদেষ্টা হাসান আরিফের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার কোটবাড়ীতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) এক অনুষ্ঠানে হাসান আরিফ বলেন, সমবায় ব্যাংকের অবস্থা দেখতে গিয়ে জানলাম, ১২ হাজার ভরি (দুদকের মামলায় ৭ হাজার ৩৯৮ ভরি) সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার মন্তব্যের পর নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সমবায় ব্যাংকে সোনা বন্ধক রাখা গ্রাহকদের মধ্যে। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর ও ১অক্টোবর মতিঝিলে সমবায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনেক গ্রাহক জড়ো হন। অনেকে বন্ধক রাখা সোনা দেখানোর দাবি করেন। 
সমবায় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক আহসানুল গনি জানান, ২০২০ সালে বন্ধককৃত সোনা বিক্রি নিয়ে অনিয়ম ধরা পড়ে। দুদকের প্রতিবেদনেও তা উঠে এসেছে। সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন গ্রাহকের এই সোনা বিক্রি করেছেন, যার বর্তমান বাজারমূল্য ১০০ কোটি টাকা। 
যেভাবে জালিয়াতি ধরা পড়ে ॥  ২০২১ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সোনা বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনায় মামলা করে। মামলায় মহিউদ্দিনের ১ নম্বর আসামি করা হয়। 
দুদকের মামলায় বলা হয়, সমবায় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্ত কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক নয়। এটি বিশেষায়িত ব্যাংক। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীনে তা পরিচালিত হয়। সোনা বন্ধক রেখে সমবায় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় সাধারণ গ্রাহক।

বর্তমানে প্রতি ভরি খাঁটি সোনার (খাদ বাদে) বিপরীতে ৫৫ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এর বিপরীতে ১৭ শতাংশ সুদ দিতে হয়।  বাড়তি ১ শতাংশ বিমা খরচ দিতে হয়। ঋণ নেওয়ার পর সুদ ও আসল টাকা পরিশোধ করে সোনা ফেরত নিতে পারেন গ্রাহকরা। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো গ্রাহক নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে ওই বন্ধকী সোনা নিলামে বিক্রি করা যায়। 
দুদকের মামলার এজাহার বলছে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর সময়ে সমবায় ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বন্ধক রাখা সোনা নিলামে না তুলে ভুয়া মালিক সাজিয়ে বিক্রি করে দেন। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করা হয়। মহিউদ্দিন আহমেদকে জালিয়াতিতে সহায়তাকারীদের একজন সমবায় ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার (ক্যাশ) নুর মোহাম্মদ। তিনি মহিউদ্দিন আহমেদের ভাগনে। দুদকের মামলায় নুর মোহাম্মদ ৬ নম্বর আসামি। মামলাটি এখন বিচারাধীন। 
মহিউদ্দিন আহমেদ সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন ২০০৯ সালে। তখন তিনি যুবলীগের নেতা ছিলেন। সমবায় সমিতি আইনে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের তিন মেয়াদের বেশি থাকার সুযোগ নেই। সে হিসাবে চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাঁর ২০১৮ সালে বিদায় নেওয়ার কথা। যদিও ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। ২০২২ সালে তিনি সমবায় ব্যাংক থেকে বিদায় নেন। 
মামলার আরও বলা হয়, ২০২০ সালে মতিঝিলে সমবায় ব্যাংকের সদর দপ্তরে জমা রাখা সোনা ফেরত নিতে অনেক গ্রাহক আবেদন করেন। এর মধ্যে ৪৫৫টি আবেদন যাচাই-বাছাই করে দুদক। তাতে দেখা যায়, ৩৩৫টি আবেদনপত্রে মূল নথিপত্রের সঙ্গে স্বাক্ষর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের মিল নেই। অর্থাৎ, ভুয়া মালিক সাজিয়ে সোনা ফেরত নেওয়া হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। পরে সেই সোনা বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ব্যাংকের প্রাপ্য টাকা পরিশোধ করে বাকি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। 
জালিয়াতি করে ঢাকা সমবায় অফিসে বিক্রি করা হয়েছে ১ হাজার ৫৯৪ ভরির কিছু বেশি সোনা। অন্যদিকে সমবায় ব্যাংকের সদস্য প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেড সোনা বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে। সেখানকার সোনা পুনঃবন্ধক রাখে সমবায় ব্যাংক। দুদকের মামলার এজাহার বলছে, নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেডের ৫ হাজার ৮০৩ ভরির কিছু বেশি সোনা একই কৌশলে বিক্রি করে দেন মহিউদ্দিন আহমেদ। 
দুদকের মামলার এজাহার অনুযায়ী, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ২ হাজার ৩১৬ জন গ্রাহকের ৭ হাজার ৩৯৮ ভরি সোনার তৎকালীন বাজারমূল্য ছিল ৪০ কোটি টাকার বেশি। এর বিপরীতে ঋণের সুদ ও আসল ছিল প্রায় ২৯ কোটি টাকা। এই টাকা পরিশোধ দেখিয়ে ১১ কোটি টাকা ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেডে ২০১১ সালে আট ভরি সোনা বন্ধক রেখে ৯৩ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন রাজধানীর স্বামীবাগ এলাকার বাসিন্দা কাকলি জাহান। পরে ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা দিয়ে সোনা ফেরত আনতে গেলে তাঁকে তা দেওয়া হয়নি। এক বছর ধরে ঘুরছেন তিনি। 
কাকলি জাহান জানান, সমবায় ব্যাংকের তিনি স্বর্ণ বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছেন। জমা রাখা সোনার এখনকার বাজারমূল্য প্রায় ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তিনি সমিতিতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন। কোনোটাই ফেরত পাচ্ছেন না। সমবায় উপদেষ্টার বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, সেটাও বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। 
যেভাবে মহিউদ্দিনের নাম বাদ দেওয়া হয় ॥ দুদকের মামলার এজাহারে সমবায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন ১ নম্বর আসামি ছিলেন। সোনা বিক্রির ঘটনায় তাকে দায়ী করা হয় সে সময়। এরপর রহস্যজনক কারণে সে সময় অভিযোগপত্র থেকে তার নাম বাদ দেয় দুদক। 
তাকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্রে আটজনকে দায়ী করা হয়। এরা হচ্ছেন, সমবায় ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক আবদুল আলীম, সহকারী মহাব্যবস্থাপক হেদায়েত কবীর, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আশফাকুজ্জামান, সাবেক প্রিন্সিপ্যাল অফিসার মাহাবুবুল হক, প্রিন্সিপাল অফিসার ওমর ফারুক, সিনিয়র অফিসার নুর মোহাম্মদ, সহকারী অফিসার আব্দুর রহিম ও সহকারী অফিসার নাহিদা আক্তার। সমবায় ব্যাংক অভিযোগপত্রে নাম থাকা আটজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। তাঁরা সবাই জামিনে আছেন। 
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানান, এটি বিচারাধীন বিষয়। এ বিষয়ে মন্তব্য ঠিক হবে না। 
আর যত অনিয়ম-দুর্নীতি ॥ মহিউদ্দিন আহমেদের সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে তার বিরুদ্ধে আরও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সে সময় নারায়ণগঞ্জে সমবায় ব্যাংকের ১০তলা একটি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণেও অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩১ কোটি টাকা। তিনি তার চেয়ে পাঁচ কোটি টাকা বেশি খরচ করেন। এই বাড়তি খরচের ক্ষেত্রে সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ কারও কাছ থেকে তিনি অনুমোদন নেননি। তার বিরুদ্ধে ভবনটির স্পেস (জায়গা) বরাদ্দের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

সমবায় অধিদপ্তরের একটি তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহিউদ্দিন আহমেদ ওই ভবনের জায়গা একাংশ বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের এক আত্মীয়ের কাছে ভাড়া দেন। বর্গফুটপ্রতি ২১ টাকা ভাড়া নেওয়া হয় মাত্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সেখানে প্রতি বর্গফুট জায়গার ভাড়া অন্তত ১০০ টাকা।  ১০তলা ওই ভবনটির আরেকাংশ আরেক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে বর্গফুটপ্রতি ৫ টাকা করে। গত চার বছর ধরে তারা ভাড়া দিচ্ছেন না।
নিয়োগে ছিল স্বজনপ্রীতি ॥ সমবায় ব্যাংকে ২০১০ থেকে ২০১৮ সময়ে বিভিন্ন পদে ১৭৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেন তৎকালীন চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ। গত সেপ্টেম্বরে স্থানীয় সরকার ও সমবায় উপদেষ্টাকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলো হয়েছে, মহিউদ্দিন আহমেদ সমবায় ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা না করে এই নিয়োগগুলো দিয়েছেন। নিয়োগ পাওয়াদের বড় অংশের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার। যেটি মহিউদ্দিন আহমেদের জন্মস্থান। এর মধ্যে ৬৩ জন তার আত্মীয়। 
সমবায় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, মহিউদ্দিন আহমেদের সময় নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের অধিকাংশই অদক্ষ, অসৎ ও উচ্ছৃঙ্খল। তাদের অন্তত ১৩০ জন গৃহনির্মাণ ঋণ নিয়েছেন। অনেককেই প্রাপ্যতার চেয়ে বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে। ঋণের বিপরীতে উপযুক্ত জামানতও নেই। ফলে সমবায় ব্যাংক প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে। উল্লেখ্য, সমবায় ব্যাংকের কর্মীরা ৫০ থেকে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ পান। 
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সমবায় ব্যাংকের এসব ঘটনা এখন আর বিস্মিত করে না। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের চর্চাই ছিল এটি। একইভাবে বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের জালিয়াতি হয়েছে। তারা বহুমাত্রিক দুর্নীতি করেছে। তিনি জানান, দুদক ক্ষমতাসীনদের যে কিছুই করতে পারে না, সমবায় ব্যাংকের ঘটনা সেটির একটি উদাহরণ মাত্র। অচিরেই দুদককে সংস্কার করা হবে। এজন্য জনগনের মতামত নেওয়া হচ্ছে।
আরও এক মামলা ॥ প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ ওরফে মহি এবং তার স্ত্রী নূরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে পৃর্থক দুইটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানান।
প্রথম মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মহিউদ্দিন আহমেদ দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে তিন কোটি ৯৭ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৩ টাকার সম্পদের তথ্য ঘোষণা প্রদান করেন। যাচাইকালে তার বিরুদ্ধে এক লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত দুই কোটি ৭০ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮ টাকার সম্পদের প্রমাণ মিলেছে। 
অপর মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী নূরজাহান বেগম দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে এক কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৭৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৫৬৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ মিলেছে। অন্যদিকে দুদকের অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে এক কোটি ১৯ লাখ ৬৪ হাজার ৮০২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় মামলা দুইটি দায়ের করা হয়েছে।

×