ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

কমেছে পর্যটক

আর্থিক সংকটে তারকা মানের হোটেল শিল্প খাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৯, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

আর্থিক সংকটে তারকা মানের হোটেল শিল্প খাত

আর্থিক সংকটে তারকা মানের হোটেল শিল্প খাত

ভিআইপি অতিথি ও পর্যটকের অভাবে ভুগছে দেশের তিন, তিন, চার ও পাঁচ তারকা মানের বিলাসবহুল হোটেলগুলো। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় পরিচালন ব্যয় বাড়লেও সেই তুলনায় আয় বৃদ্ধি পায়নি এ শিল্প খাতের। এতে করে এ খাতের উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা চাপের মুখে পড়েছেন।

একদিকে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার পরিশোধ করতে হচ্ছে, অন্যদিকে আয় কমে গেলেও সময়মতো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও ইউটিলিটিবিল পরিশোধ করতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষের। ফলে এ খাতে অর্থনৈতিক সংকট প্রকট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তাঁদের মতে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বিভাগীয় শহরগুলোতে অবস্থিত তারকা মানের হোটেলগুলো এখনো তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসতে পারেনি।

বিশেষ করে গত কয়েক মাসের অস্থিরতার কারণে পর্যটক, অতিথি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানসহ বড় বড় সামাজিক সংগঠনের অনুষ্ঠানাদি কমে যাওয়ায় তারকা মানের হোটেলগুলোর আয় উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এতে করে এ শিল্পে দ্রুত আর্থিক সংকট তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ শিল্পের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন (বিহা) সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে গত জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে কঠিন সময় পার করছে তারকা মানের হোটেলগুলো। কারণ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় পর্যটক বাংলাদেশে ভ্রমণে সেই সময় অনাগ্রহী ছিলেন। তবে আগের তুলনায় পরিস্থিতি এখন কিছুটা উন্নতি হলেও পর্যটক ও অতিথি সংকটে ভুগছে হোটেলগুলো। 
বিহার মতে, তারকা মানের হোটেলগুলোর পর্যটক ও অতিথি  উপস্থিতির হার ২০-৩০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা সাধারণত ৭০-৮০ শতাংশের মধ্যে থাকে। হোটেলগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত আয় করতে পারছে না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কিছু বিদেশী দেশের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা যা এখনো তুলে নেওয়া হয়নি। এতে করে এ শিল্প আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযাযী, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫১টি নিবন্ধিত তারকা মানের হোটেল রয়েছে। এর সঙ্গে প্রায় আরও ২ হাজার অতিরিক্ত হোটেল রয়েছে যেগুলো রেটিং ছাড়াই পরিচালিত হয়।

হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে এই শিল্পে প্রায় ১ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে এবং যার সঙ্গে প্রায় ৫-৬ লাখ মানুষের ভাগ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। 
শুধু তাই নয়, দেশের জিডিপির প্রায় ৪ শতাংশ অবদান রাখছে এ শিল্প খাত। বিহার তথ্যমতে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে নিবন্ধিত তারকা মানের হোটেলগুলোর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে বিহার সভাপতি হাকিম আলী জানান, বছরের এই সময়ে সাধারণত বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে উচ্চ উপস্থিতির হার দেখা যায়, যেখানে বিদেশী পর্যটকরা দেশের জনপ্রিয় পর্যটনস্থানগুলো পরিদর্শন করেন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন।

বিলাসবহুল হোটেলগুলো কাক্সিক্ষত পর্যটক ও অতিথি পাচ্ছে না। এতে করে এ শিল্প খাতের আয় কমে যাওয়ায় চাপের মুখে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। পরিচালন ব্যয়  মেটাতে তাঁদের ঋণ ও সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হলে সরকারের নীতিগত সহায়তা দরকার। বিশেষ করে নমনীয় ঋণের শর্তাবলী, ইউটিলিটি বিল মওকুফ এবং আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত এসব উদ্যোগ নেওয়া হলে এ শিল্পখাত বর্তমান সংকট থেকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সম্ভাবনাময় এ শিল্পখাতটির পাশে দাঁড়াবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বিহার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন স্থায়ী কমিটির কো-চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন জানান, অনেক অতিথি তাদের বুকিং বাতিল করেছেন, যা সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। তিনি বলেন, আমরা করপোরেট ইভেন্ট থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয় হারিয়েছি।

যার মধ্যে ব্যবসায়িক বৈঠক, সেমিনার এবং কর্মশালা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি সরকারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের মতোই হোটেল শিল্পকেও প্রণোদনা ও অর্থ প্রদানের মেয়াদ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ ও আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে পুনর্গঠনের  প্রচেষ্টা থেকে উপকৃত হতে পারে এ শিল্পখাত।

×