ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

বার্ষিক সভায় অংশ নিচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ থেকে সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা

এম শাহজাহান

প্রকাশিত: ২২:১৮, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ থেকে সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ থেকে সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ করে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পাওয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছেন। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই সহায়তা পাওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বব্যাংক থেকে দেড় থেকে দুই বিলিয়ন ডলার আসতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভা শুরু হয়েছে। আগামী ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এই সভা। এই সময়ের মধ্যেই সংস্থা দুটি থেকে কাক্সিক্ষত বাজেট সহায়তা নিশ্চিত করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আরও অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব, অর্থমন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।  প্রতিনিধি দলটি নতুন অর্থায়ন পদ্ধতি এবং সংস্কারের শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে মূল অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসবে।

একইসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বহুপক্ষীয় বিনিয়োগ গ্যারান্টি এজেন্সি (এমআইজিএ), ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) ও আরও কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে নানা ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয়  বৈঠক করবে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমকে সমর্থন জানিয়ে প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ। 
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবির কাছ থেকে ব্যাংকিং এবং অন্যান্য খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য সংস্কার কার্যক্রমের জন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন থেকে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা আসতে পারে। ঋণদাতারা এ জন্য বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পারে রাজস্ব, সরকারি ব্যয় এবং তথ্য সংক্রান্ত কিছু বিষয়।

এ ছাড়া গত বছরের জানুয়ারিতে অনুমোদন হওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ছাড়াও আইএমএফের একটি পৃথক কর্মসূচির আওতায় ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন হতে পারে। আগের অনুমোদন হওয়া ঋণ মোট সাত কিস্তিতে আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত  দেওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে তিন কিস্তির ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। নতুন ঋণ কী শর্তে কত কিস্তিতে দেওয়া হবে, সে রূপরেখা বার্ষিক সভার ফাঁকে বৈঠকে চূড়ান্ত হবে।
এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরে নতুন করে দেড়  থেকে দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে বলে আশা করছে সরকার। এর মধ্যে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এক বিলিয়ন পাওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্বব্যাংক অর্থনৈতিক সুশাসন ও সংস্কার কর্মসূচি জোরদার করতে ৭৫-১০০ কোটি ডলার দেবে। আরও ২৫ কোটি ডলার অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দেওয়া হবে। এডিবি থেকে সরকার চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার আশা করছে।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং সুশাসন জোরদার করার জন্য একটি কর্মসূচির জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে ৬৫ কোটি ডলার পাওয়া যাবে। অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংকিং খাতের জন্য এডিবির কাছে ১ বিলিয়ন ডলার এবং জ্বালানি খাতে আরও ১ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতে ১ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার  ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, তারা আইএমএফের কাছে তিন বিলিয়ন ডলার চাইবেন। ঋণের জন্য ইতোমধ্যে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৪.৫ শতাংশ করেছে আইএমএফ। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও এর আগে প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। মহামারি প্রভাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছর বাদে ২০ বছরের মধ্যে এটিই সংস্থাটির বাংলাদেশ সম্পর্কে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ। চলতি মাসের শুরুতে বিশ্বব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমে মাত্র ৪ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দেয়। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সাম্প্রতিক বন্যা এর অন্যতম কারণ বলে বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করে। এর আগে এপ্রিলে ঋণদাতা সংস্থাটি ৫.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। এস ছাড়া, গত মাসে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের ৬.৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫.১ শতাংশে নামায়। একদিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। 
এ অবস্থায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়ন এবং অবকাঠামো উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের ঋণ প্রয়োজন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশকিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নেও ঋণ সহায়তা লাগবে। সম্প্রতি সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, সরকার বিভিন্ন চলমান ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচির জন্য বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা চেয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতের সংস্কার, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার, আয়কর ও ভ্যাট আদায় বৃদ্ধিসহ কর সংস্কারের মতো ক্ষেত্রে সহায়তা  চাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের জন্য সরকারের সম্পদের প্রয়োজন। সহায়তার জন্য আইএমএফকে অনুরোধ করা হলেও পুনরাবৃত্তি এড়াতে অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গেও সমন্বয় করছে সরকার। এদিকে, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগে সহায়তা করতে বিশ্বব্যাংক সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার দেবে। এর মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলার নতুন ঋণ এবং দুই  বিলিয়ন ডলার বিদ্যমান কর্মসূচি থেকে পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

×