ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

আট বছরেও লিয়েন ছুটি শেষ হয়নি, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষোভ

সচিবদের খুশি রেখে ইআরডি কর্মকর্তার বিশ্বব্যাংকে চাকরি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৯, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

সচিবদের খুশি রেখে ইআরডি কর্মকর্তার বিশ্বব্যাংকে চাকরি

লিয়েন ছুটি নিয়ে আট বছর ধরে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চাকরি

বিধিবহির্ভূতভাবে লিয়েন ছুটি নিয়ে আট বছর ধরে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চাকরি করছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রটোকল অফিসার মোহাম্মদ খালিদ হাসান। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক থাকার সূত্র ধরে তিনি একের পর এক সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন। সচিবদের খুশি রেখেই করছেন চাকরি। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ অফিসে চাকরি অনেকটা স্থায়ী করে নিয়েছেন।

সরকারি চাকরি করলেও তিনি এখন আমেরিকার ওয়াশিংটনেই পরিবার নিয়ে সেটেল। হয়েছেন বিপুল অর্থ সম্পদ ও বাড়ি গাড়ির মালিক। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও আবার লিয়েন ছুটির আবেদন করে চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর পাঁয়তারা শুরু করেছেন। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কয়েকবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে দেশে ফিরে কাজে যোগদান করতে নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি তা আমলে নেননি। বরং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বারবার বিশ্বব্যাংকেই তার প্রোগ্রাম সহকারী নির্বাহী পরিচালক পদের লোভনীয় পোস্টিং বহাল রেখেছেন। তাকে আর দেশে ফিরে আসতে হয়নি।

ফলে এ ঘটনায় ইআরডির কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা ও আমলাদের তদবির ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বারবার পোস্টিং বহাল রাখায় মন্ত্রণালয়ের অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন। যোগ্যতা থাকার পরও তারা এ পদে নিয়োগ পাননি। ফলে তাদের মধ্যে বঞ্চনার ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইআরডির একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে খালিদ হাসান বিশ্বব্যাংকে চাকরি করছেন।

আর এক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ সফিউল আলম ও সাবেক মুখ্যসচিব ও বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ড. আহমেদ কায়কাউস প্রমুখ। জানা গেছে, ২০০৫-০৬ সালের দিকে ইআরডিতে অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান খালিদ হাসান। এর কয়েক বছরের মধ্যেই প্রটোকল অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কয়েকজন প্রভাবশালী সিনিয়র সচিব ও সচিবের টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচারে সরাসরি সহযোগিতা করেছেন খালিদ হাসান।

ওয়াশিংটনে চাকরির সুবাধে তিনি এ ধরনের অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করতে পেরেছেন। এখন তিনি নিজেও বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক সচিবদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডায় বসেন তিনি। এর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের মাধ্যমে বিশেষ তদবিরে নিউইয়র্ক পারমানেন্ট মিশনে ২০১৪ সালে পোস্টিং নিয়ে চার বছর পোস্টিং শেষ করে ২০১৮ সালে ইআরডি মন্ত্রণালয় থেকে লিয়েন ছুটি নিয়ে বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের বিদ্যমান নির্ধারিত দুটি পোস্টের একটি পোস্টে নিয়োগ নেন। 
চার বছর লিয়েন ছুটি শেষ হলে তিনি নিজ মন্ত্রণালয়ে যোগদান না করে আরও এক বছর লিয়েন ছুটির জন্য আবেদন করেন এবং ছুটিও বাগিয়ে নেন। বিশ্বব্যাংকের সেই একই পদে পরবর্তী এক বছরের জন্য আবারও নিয়োগ পান তিনি। একের পর এক লিয়েন ছুটি প্রাপ্তি ও বিশ্বব্যাংকের একই পদে বারবার নিয়োগ প্রাপ্তিতে তাকে সহযোগিতা করেন উল্লেখিত সাবেক সচিবরা। ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, মোহাম্মদ খালিদ হাসান যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন। তিনি যে ইচ্ছা করেন সেই ইচ্ছাই পূর্ণ হয়ে যায়।

সরকারি চাকরি জীবনে সর্বাধিক ৫ বছর লিয়েন ছুটি ভোগ করা যায়। ইতোমধ্যে তার ৫ বছর লিয়েন ছুটি ভোগ সম্পন্ন হয়েছে। এরপরও তিনি থেমে থাকেননি, আবারও দুই বছরের লিয়েন ছুটির জন্য তার নিজ মন্ত্রণালয়ে আবেদন প্রেরণ করেন। এবার ইআরডি মন্ত্রণালয় তাকে লিয়েন ছুটি দিতে দ্বিমত পোষণ করলে ড. আহমেদ কায়কাউস তৎকালীন ইআরডি সচিবকে খালিদ হাসানের দুই বছরের লিয়েন ছুটি মঞ্জুরি করার জন্য চাপ দেন।

×