ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

বিজিএমইএর সংবাদ সম্মেলন

গার্মেন্টসে বিশেষ নীতি সহায়তা দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৩১, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

গার্মেন্টসে বিশেষ নীতি সহায়তা দাবি

গার্মেন্টসে বিশেষ নীতি সহায়তা দাবি

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোর জন্য বিশেষ নীতি সহায়তা চেয়েছে এ শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এ ছাড়া শ্রম অসন্তোষের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯টি পোশাক কারখানার জন্য সুদবিহীন সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার দাবি করেছে সংগঠনটি। বিজিএমইএ মনে করে, পোশাক খাতের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে হলে অন্তত ১৪ ধরনের সহযোগিতা দিতে হবে সরকারকে। একইসঙ্গে যেসব উদ্যোক্তা প্রতিকূলতার কারণে ব্যবসায় টিকতে পারছেন না, তাদের জন্য নিরাপদ ‘এক্সিট পলিসি’ বা ব্যবসা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য নীতি প্রণয়ন চাওয়া হয়েছে। 
শনিবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানিয়েছে বিজিএমইএ’র বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিজিএমইএ’র সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত দুই মাসে শ্রম অস্থিরতার কারণে শিল্পকে বড় মাসুল দিতে হয়েছে। এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধে যারা শিল্প ও অর্থনীতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে, তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে এই শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে অন্তত ১৪ ধরনের সহযোগিতা সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকঋণের সুদহার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনা এবং পোশাক খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোর জন্য বিশেষ নীতি সহায়তা প্রয়োজন। তৈরি পোশাক খাতে প্রণোদনা পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এলডিসি উত্তরণের কথা বলে পোশাকশিল্পের নগদ সহায়তার পরিমাণ কমানো হয়েছে। এ কারণে শিল্পে অনাকাক্সিক্ষত ঝুঁকি ও বিপর্যয়ের শঙ্কা বেড়েছে।
বিজিএমইএ’র তথ্যানুসারে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যেখানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, সেখানে ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ আর ভারতের ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তারা আরও বলেছে, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় প্রবৃদ্ধিতে পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বোঝা যায়, রপ্তানি আদেশ এসব দেশে চলে যাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নির্দিষ্ট কিছু শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতার কারণে গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশের পোশাক খাতে ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটি ডলারের রপ্তানি ও উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

এতে এ শিল্পখাতের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি মার্কিন ডলার। আশুলিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোর মধ্যে ৩৯টি কারখানা সেপ্টেম্বর মাসে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার মতো সক্ষম ছিল না। বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে এসব কারখানাকে সুদবিহীন সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের যেসব উদ্যোক্তা প্রতিকূলতার কারণে ব্যবসায় টিকতে পারছেন না, তাদের জন্য নিরাপদ ‘এক্সিট পলিসি’ বা ব্যবসা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য নীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে তারা।

খন্দকার রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে পোশাক উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। অনেক কারখানা আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। ফলে বিজিএমইএ সহজ শর্তে ঋণ চেয়ে অর্থ উপদেষ্টাকে চিঠি দেয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বিজিএমইএ’র অনুরোধে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সব রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের আগস্ট মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলোকে ঋণ প্রদানের নির্দেশনা দেওয়ায় সংগঠনটি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। বিজিএমইএ’র সভাপতি আরও বলেন, সম্প্রতি অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে ১৪ ধরনের নীতিসহায়তার অনুরোধ জানানো হয়েছে। 
সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-শিল্পের এই ক্রান্তিকালে পরবর্তী তিন মাসের জন্য কারখানার পরিষেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা, ব্যাংক খাতের সংস্কার যেন উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কর্মকা-ে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তার জন্য কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা, শিল্পকে ব্যবসাবান্ধব করতে যথাযথ নীতিসহায়তা প্রণয়নের বিষয়ে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন, শিল্পে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা ও বিদ্যুতের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণসহ টেকসই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতি প্রণয়ন, টেক্সটাইল বর্জ্য বা ঝুটের বিষয়ে বহিরাগতদের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, ঋণখেলাপি গণ্য করার ক্ষেত্রে তিনটি কিস্তি ব্যর্থ হওয়ার পরিবর্তে ছয়টি কিস্তি বিবেচনায় নেওয়া এবং এক বছর পর্যন্ত বহাল রাখা। 
শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অনেক কারখানার চলমান রপ্তানি আদেশ ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে উল্লেখ করেন বিজিএমইএ সভাপতি। এ অবস্থায় সবধরনের ঋণ শ্রেণিকরণ না করা এবং ঋণ পরিশোধে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর ৪৪ অনুসারে পুনঃ তফসিলিকরণের সুযোগ দেওয়ার জন্য অর্থ উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। এ ছাড়া তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে জরুরি ভিত্তিতে সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছে বিজিএমইএ।

তিনি বলেন, সম্প্রতি সারাদেশে পোশাক শিল্পের ৪০ লাখ শ্রমিককে ন্যায্যমূল্যে টিসিবি পণ্য বিক্রয় কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর থেকেই সরকার কর্তৃক পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যায্যমূল্যে টিসিবি পণ্য বিক্রয় কর্মসূচির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, তবে এতকিছুর পরও ক্রেতারা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ওপর আস্থা রেখেছেন।

বিজিএমইএ বোর্ডের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারের নির্দেশনায় পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী গঠন হয়েছে এবং যৌথবাহিনী গার্মেন্টস অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিতভাবে টহল পরিচালনা করেছে। বিজিএমইএ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কমিউনিটি পুলিশিং চালু করেছে।

×