ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

হিরু সিন্ডিকেটের শেয়ার কারসাজির তথ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে

প্রকাশিত: ১৭:২৯, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

হিরু সিন্ডিকেটের শেয়ার কারসাজির তথ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে

হিরু

শেয়ার কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট শেয়ার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের হিরু সিন্ডিকেটের তথ্য অর্থ মন্ত্রলণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে কারসাজির অভিযোগে তাঁকে এবং তার সহযোগীদেরকে এ পর্যন্ত মোট ১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১২টির অধিক কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় তাকে ও তার সহযোগীদের এ জরিমানা করা হয়। ইতোমধ্যে শেয়ার ব্যবসায়ী হিরু ও তার সিন্ডিকেটের এসব অনৈতিক কর্মকা- এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের তথ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রেরণ করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

গত ৭ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর “পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে কারসাজি এবং এ সম্পর্কিত বিষয়ে আবুল খায়ের ও তার সহযোগীদের উপর আরোপিত অর্থদ-” প্রসঙ্গে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। একই সঙ্গে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ উপদেষ্টাকেও এ বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, শেয়ার কারসাজির অভিযোগে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আবুল খায়ের, তার পরিবারের সদস্য এবং সহযোগীদের নাম উঠে এলেও কারো বিরুদ্ধে তেমন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনগর্ঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন আবুল খায়ের ও তার সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এমনকি আবুল খায়েরের ব্যবসায়িক পার্টনার বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকেও ছাড় দেয়নি বিএসইসি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, উল্লিখিত বিষয়ে নির্দেশিত হয়ে জানানা যাচ্ছে যে, মো. আবুল খায়ের পুঁজিবাজারের একজন বিনিয়োগকারী। তার পরিচালিত বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট নম্বরগুলো হলো- ১২০১৯৫০০৬২১৬৪৫৩৫, ১২০২৬০০০৭১০৯১১১৬, ১২০৪৫৯০০৬৭৭১২৭৮১, ১২০৫৫৯০০৭১০৯১১১৬, ১২০৫৯৫০০৭১০৯১১১৬, ১৬০৪৫৩০০৬২১৬৪৫৩৫ ও ১৬০৫১১০০৭১০৯১১১৬। 

তিনি একজন সরকারি কর্মচারি এবং বর্তমানে সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক (ইপি) হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি নিজে এবং তার সহযোগীদের সঙ্গে মিলিতভাবে বিভিন্ন সময়ে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে করসাজি করেছেন। ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজারের উন্নয়নের পরিপন্থী। তার ও তার সহযোগীদের পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে কারসাজির কারণে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন প্রমানীত হওয়ার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আবুল খায়ের ও তার সহযোগীদের বিভিন্ন সময়ে অর্থদ-ে দ-িত করেছে।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আবুল খায়ের ও তার সহযোগীদের বিভিন্ন সময়ে যে অর্থদ-ে দ-িত করেছে তা তুলে ধরা হলো- ২০২২ সালের ১৯ জুন গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির জন্য আবুল খায়েরের স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ও তাদের সহযোগীদের ৪২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২০২২ সালের ১৯ জুন ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির জন্য আবুল খায়েরের স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ও তাদের সহযোগীদের ৯৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২০২২ সালের ১৯ জুন এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির জন্য আবুল খায়েরের দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভকে ৭২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

প্রসঙ্গত, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির জন্য আবুল খায়েরের ব্যবসায়িক পার্টনার বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তথ্য মতে, ৩১তম বিসিএস ক্যাডার সমবায় কর্মকর্তা আবুল খায়ের পাঁচ বছর আগেও বিনিয়োগকারীদের কাছে খুব একটা পরিচিত ছিলেন না। তবে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তিনি যেন আলাদিনের চেরাগ নিয়ে হাজির হন পুঁজিবাজারে। তিনি দেশের পুঁজিবাজারে হিরু নামেই বেশ পরিচিত। ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে আলোচনায় আসেন আবুল খায়ের হিরো। প্যারামাউন্টের হাত ধরেই অন্যান্য ইন্স্যুরেন্সের কারসাজিতে নামেন তিনি। পরবর্তীতে ইন্স্যুরেন্সের পাশাপাশি অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার নিয়েও তিনি কারসাজি করেন। হিরু নিজে এবং পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদ ও অন্য সহযোগীদের নিয়ে গড়ে তোলেন বিশাল সিন্ডিকেট। তার সিন্ডিকেটে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, মা আলেয়া বেগম, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, স্ত্রী সাদিয়া হাসানের ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান এবং কাজী ফরিদ হাসান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণীত হওয়ায় বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরোর বিরুদ্ধে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে। সম্প্রতি প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির অভিযোগে তাকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। যে কোনো কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে আগামীতে কমিশন আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তবে আবুল খায়ের হিরুর কারসাজি ও জরিমানা আরোপ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ে কোনো চিঠি পাঠানো হয়েছে কি-না সেটা আমার জানা নাই।’

অপূর্ব/শহিদ

×