ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

মতিউরের কোম্পানি গুজবে ব্যাংক হিসাব জব্দে বিনিয়োগকারীরা হারাল ৯৫ কোটি

প্রকাশিত: ১৭:০০, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

মতিউরের কোম্পানি গুজবে ব্যাংক হিসাব জব্দে বিনিয়োগকারীরা হারাল ৯৫ কোটি

মতিউর রহমান

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ শত শত বিনিয়োগকারীর মালিকানাধীন কোম্পানি। কিন্তু এ কোম্পানিটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বলে মনে করে দূর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক)। যে কারনে কোম্পানিটির একসময় ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় দুদক এবং তা কার্যকর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। 

এতে করে শতভাগ রপ্তানিকারক কোম্পানিটির এলসি বন্ধ হয়ে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বাতিল হয়ে গেছে বিদেশীদের ক্রয়াদেশ। এসবের জেরে শেয়ারবাজারের কয়েক হাজার বিনিয়োগকারী এরইমধ্যে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগে লোকসান গুণেছে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা। অথচ এসকে ট্রিমসে মতিউর রহমান এবং তার পরিবারের কেউ পর্ষদে নেই এবং তাদের মালিকানা নেই।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) এসকে ট্রিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ কাইয়ুম হাওলাদার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেন, এসকে ট্রিমসের শেয়ারহোল্ডার ৬৭৯৩জন। কোম্পানিটি শতভাগ রপ্তানিকারক। কিন্তু এ কোম্পানিটি এনবিআর এর সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে। যাতে করে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব জব্দের মতো ঘটনা ঘটেছে। এতে করে ক্রয়াদেশ বাতিল ও কারখানা বন্ধ করতে হয়েছে। এতে লোকসান গুণেছে ৬৭৯৩ জন শেয়ারহোল্ডার। যা কাম্য নয়। সবারই বোঝা উচিত এটি একটি শেয়ারবাজারের কোম্পানি এবং এর শেয়ারহোল্ডার অনেক। তাই কোম্পানির বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া মানেই হাজার হাজার শেয়ারহোল্ডারের বিরুদ্ধে নেওয়া।

গত ২৫ জুন এসকে ট্রিমসের ওয়ান ব্যাংকে পরিচালনা করা হিসাব এবং ১১ জুলাই ৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করা হয়। যাতে কয়েক হাজার বিনিয়োগকারীর এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। যা গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকরও করা হয়। তবে এরপরে উচ্চ-আদালত ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এরফলে ব্যাংক হিসাব চালু হয়েছে। যাতে করে গত ২১ সেপ্টেম্বর কারখানার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তবে ব্যাংক হিসাব জব্দ ও ক্রয়াদেশ বাতিলকে কেন্দ্র করে এসকে ট্রিমসের শেয়ারহোল্ডারদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। যা এখনো চলমান।

ব্যাংক হিসাব জব্দে এসকে ট্রিমসের উৎপাদন বন্ধের খবর প্রকাশের পর একদিনেই (০৮ সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দর কমে ১.৮০ টাকা বা ৯.৭৮%। এর মাধ্যমে কোম্পানিটির সব শেয়ারের দর কমে ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

তবে গত ১১ জুলাইয়ের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে শেয়ার দর কমেছে অনেক বেশি। ১১ জুলাই এসকে ট্রিমসের শেয়ার দর ছিল ২৫.৫০ টাকা। যে শেয়ারটি এখন ১৪.৩০ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার খবর প্রকাশের পরে প্রতিটি শেয়ারের দর কমেছে ১১.২০ টাকা বা ৪৪%। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির সব শেয়ারের দর কমেছে ৯৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার।

গত ৭ সেপ্টেম্বর শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে দেওয়া চিঠিতে এসকে ট্রিমস কর্তৃপক্ষ জানায়, কোম্পানিতে মতিউর রহমান এবং তার পরিবারের কেউ পর্ষদে নেই এবং তাদের মালিকানা নেই। তবে মতিউর রহমানের ছেলে ও মেয়ে গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ ও গ্লোবাল সুজের শেয়ারহোল্ডার। যে দুটি কোম্পানি এসকে ট্রিমসের মালিকানায় আছে।

চিঠিতে এসকে ট্রিমস কর্তৃপক্ষ ওই সময় জানায়, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই মুহূর্তে বন্ধ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কারন কোম্পানিটি শতভাগ রপ্তানিমূখী ও ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হয়। অথচ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়। তারপরেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ব্যাংক হিসাব অবরুব্ধ (ফ্রিজ) করার পরেও গত জুন থেকে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার জন্য খুবই চেষ্টা করে আসছিল। যা আর সম্ভব না হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছিল।

চিঠিতে জানানো হয়েছিল, গত ২৫ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এসকে ট্রিমসের ওয়ান ব্যাংকে পরিচালনা করা হিসাব এবং ১১ জুলাই ৯টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে। এরপরে রপ্তানিমূখী, কর্মী ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বলে অনুরোধ করলে ১০ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক ফ্রিজ তুলে নেয়।

কিন্তু ১১ জুলাই দুদকের সুপারিশে মেট্রোপলিটন জাজ ও বিএফআইইউ ৯টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে। যে কোম্পানিতে রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের মালিকানা রয়েছে, এমন খবরে ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়। অথচ কোম্পানিতে মতিউর রহমান এবং তার পরিবারের কেউ পর্ষদে নেই এবং তাদের মালিকানা নেই।

এরপরে গত ২১ সেপ্টেম্বর উচ্চ-আদালত ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এরফলে ব্যাংক হিসাব চালু হয়েছে। যাতে করে কারখানার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

শহিদ

×