ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

ভারতের সঙ্গে সেপা আপাতত স্থগিত

চীনের নেতৃত্বাধীন আরসেপে যোগ দেবে ঢাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১০, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

চীনের নেতৃত্বাধীন আরসেপে যোগ দেবে ঢাকা

চীনের নেতৃত্বাধীন আরসেপে যোগ দেবে ঢাকা

বাণিজ্য কৌশলে বড় এক মোড় পরিবর্তনের অংশ হিসেবে, ভারতের সঙ্গে কম্প্রেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সেপা) স্বাক্ষরের উদ্যোগ সরিয়ে রেখে; চীনের নেতৃত্বাধীন বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম বাণিজ্যিক জোট- রিজিওনাল কম্প্রেহেনসিভ পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (আরসিইপি বা আরসেপ) এ বাংলাদেশকে যুক্ত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ সপ্তাহেই আরসিইপির পদ পাওয়ার জন্য সংস্থাটির সদর দপ্তরের আনুষ্ঠানিক আবেদন করবে বাংলাদেশ। তারা বলেন, আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের প্রস্তুতি শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য সচিব মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, আরসেপের সদস্য হিসেবে যোগদানের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রধান উপদেষ্টা সম্মতি দিয়েছেন। বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করবে। 
জাপান, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষর বিষয়ে নতুন করে যোগাযোগ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে ভারতের সঙ্গে সেপা স্বাক্ষরের বিষয়ে আপাতত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ১৫ দেশের বাণিজ্যিক জোট আরসেপ। যাদের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৩০ কোটি (বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ), এবং সবমিলিয়ে এটি ২৬.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার।

অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই,  চীন, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম এর মধ্যেই আরসেপ- এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরসেপের সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশের একটি অ্যাকশন প্ল্যান দরকার, এবং এই বাণিজ্য জোটভুক্ত ১৫টি দেশের সঙ্গে পৃথকভাবে বাংলাদেশকে আলোচনা  করতে হবে। এতে প্রায় ২-৩ বছর সময় লেগে যেতে পারে। বাণিজ্য সচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশ আরসেপ এর সদস্য হওয়ার আগেই জাপানের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়ে যাবে।

আমরা চীনের সঙ্গেও এফটিএ স্বাক্ষরের নেগোসিয়েশন চালিয়ে যাবো। যদি দেখা যায় যে, আরসিইপির সদস্য হওয়ার পরও চীনের সঙ্গে এফটিএ করলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে, তাহলে চীনের সঙ্গেও এফটিএ স্বাক্ষর করব। রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আরসেপে যোগদানের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক। কিন্তু এজন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে হবে।

বাংলাদেশের ট্যারিফ রেট বিশ্বে সর্বোচ্চ। তাই ট্যারিফ কমানোসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। ভারতের সঙ্গে সেপা স্বাক্ষরে অগ্রগতি না হওয়ার বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ভারতের সঙ্গে সেপা স্বাক্ষরের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। তাই পরবর্তী নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সরকার এ বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বর্তমানে জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তির (ইপিএ) স্বাক্ষরের আলোচনা চলছে। মঙ্গলবারও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইপিএ স্বাক্ষরের জন্য রুলস অব অরিজিনের শর্ত নিয়ে কর্মশালা করেছে। জাপানের পক্ষ থেকে প্রোডাক্ট স্পেসিফিক রুলস অব অরিজিনের শর্তারোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছরের শুরুতে চীনের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষরের জন্য আলোচনা শুরুর ঘোষণাও দিয়েছিল (বিগত) সরকার।

সেপা বনাম আরসেপ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, রাজনৈতিক কারণে ভারতের সঙ্গে সেপা স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ভারতের সঙ্গে এটি স্বাক্ষর করবে কি-না, কিংবা কীভাবে এটি স্বাক্ষর করা হবে, সে বিষয়ে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। শেখ হাসিনার সরকার প্রথমবারের মতো ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি বা প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) স্বাক্ষর করার পরপরই ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির চেয়েও বড় আকারে বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি- কম্প্রেহেন্সিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সিইপিএ বা সেপা) স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিয়েছিল, যার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় শুল্কমুক্ত সুবিধা ছাড়াও আঞ্চলিক সংযোগ, বিনিয়োগসহ সার্ভিস সেক্টরও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এজন্য একটি যৌথ সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন করে বলা হয়,  সেপা স্বাক্ষরিত হলে আগামী ৭-১০ বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৩-৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়বে। যদিও একই সময়ে ভারতের আয় বাড়বে ৪-১০ বিলিয়ন ডলার। ভারতের সঙ্গে সেপা স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়ার পরপরই চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেওয়া হয়। দুই দেশের কর্মকর্তাদের বৈঠকে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষরের আগ্রহের কথা জানালেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেয়নি হাসিনার সরকার।

×