আবুল খায়ের হিরু
শেয়ারবাজারে ব্যবসা করেছেন অনেকেই। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা হয়ে আবুল খায়ের হিরু যেভাবে অল্প সময়ে সমালোচিত হয়েছেন, সেটি শুধু বাংলাদেশের শেয়ারবাজার নয়, বিশ্বের অন্য কোনো দেশেও ঘটেনি। নিয়ম ভেঙে নিজে ব্যবসার পাশাপাশি তিনি কারসাজিতে জড়িয়েছেন নিজের স্ত্রী, বাবা, বোন এবং ভাইকেও। তাদের নামে শেয়ার কিনে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর হিরুসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি শেয়ার লেনদেনের বিও (বেনিফিশারি ওনার্স) হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
শেয়ার কারসাজির ‘কারিগর’ খ্যাত আবুল খায়ের হিরুর পাশাপাশি হিরুর বাবা আবুল কালাম মাদবর, ভাই মোহাম্মদ বাশার, বোন কনিকা আফরোজ ও স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য চেয়েছে।
৩১তম বিসিএসের (সমবায়) কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরু পাঁচ বছর আগেও বিনিয়োগকারীদের কাছে খুব একটা পরিচিত ছিলেন না। পাঁচ বছর আগে যেন আলাদিনের চেরাগ নিয়ে হাজির হন পুঁজিবাজারের আলোচিত বিনিয়োগকারী হিরু ও তার সহযোগীরা। হিরু শেয়ার ব্যবসায় আসেন ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের মাধ্যমে। প্যারামাউন্টের হাত ধরেই অন্যান্য ইন্স্যুরেন্সের কারসাজিতে নামেন হিরু। পরবর্তীতে ইন্স্যুরেন্সের পাশাপাশি অন্যান্য কোম্পানিতে কারসাজি করে হিরু বাহিনী।
হিরুর পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গড়ে তোলা এই সিন্ডিকেটে ছিলেন তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, মা আলেয়া বেগম, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, স্ত্রী সাদিয়া হাসানের ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান এবং কাজী ফরিদ হাসান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে ২০২২ সালে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বাড়ান হিরু। হিরু এবং তার পরিবারের সদস্যদের ভূমিকার কারণে ওই বছরে ২৯ এপ্রিল থেকে ২৪ মে এর মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৬০ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়ে যায়। এক মাসের কম সময়ের মধ্যে ৩৪ টাকার শেয়ারের দাম ৫৪ টাকা ৭০ পয়সায় ওঠে।
সিরিজ লেনদেন করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে মোটা অঙ্কের মুনাফা তুলে নিয়েছেন হিরু ও তার পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে আইপিডিসির শেয়ার বিক্রি করে হিরু দুই কোটি ২৪ লাখ দুই হাজার টাকা, আবুল কালাম মাতবর চার কোটি ১১ লাখ ৭৩ হাজার, মোহাম্মদ বাসার ৫০ লাখ ৪২ হাজার, কাজী ফুয়াদ হাসান তিন লাখ, সাজিদ মাতবর ২৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং আলেয়া বেগম ১৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মুনাফা তুলে নিয়েছেন।
কারসাজি নিয়ে করা বিএসইসির তদন্তে হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, মা আলেয়া বেগম, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, স্ত্রী সাদিয়া হাসানের ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান এবং কাজী ফরিদ হাসানের নাম উঠে আসে। তৎকালীন বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের সময়ে তদন্তে হিরুর ও পরিবারের সদস্যদের নাম উঠে এলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে শেখ হাসিনার পতনের পর নতুন কমিশন আসার পর হিরু ও তার পরিবারের সদস্যদের বিও হিসাব জব্দ করা হয়।
জানা গেছে, আইনের তোয়াক্কা না করে শেয়ারের দাম বাড়াতে হিরু এবং তার স্ত্রী সাদিয়ার যৌথ বিও হিসাবে (নম্বর-১৬০৫১১০০৭১০৯১১১৬) থাকা আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার নিজের নামে থাকা বিও হিসাব (নম্বর-১৬০৫৫৩০০৫২১৩৭১৪৮) থেকে কেনেন হিরু। এভাবে নিজেদের মধ্যে বিপুল পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ১৭ (ই) (৩) ধারা অনুযায়ী এ ধরনের লেনদেন নিষিদ্ধ।
শুধু আইপিডিসি ফাইন্যান্স নয়, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে হিরু বেশ কয়েকটি কোম্পানি থেকে মোটা অঙ্কের মুনাফা তুলে নেন। ওয়ান ব্যাংকে ২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবর তার সহযোগীদের (পরিবারের সদস্য) নিয়ে সিরিজ লেনদেন করে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দাম ১৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ১৪ টাকা ৭০ পয়সায় নিয়ে যান। দুপুর একটা ৪৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড থেকে দুপুর একটা ৫৩ মিনিট ২ সেকেন্ডের মধ্যে এই দাম বাড়ানো হয়। এই ১০ মিনিটে চক্রটি ওয়ান ব্যাংকের দুই কোটি ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯১৯টি শেয়ার লেনদেন করে।
২২ নভেম্বরও সকাল ১০টা ১ মিনিট থেকে ১০টা ৫ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড পর্যন্ত চক্রটি তাদের সিরিজ লেনদেন করে। এই পাঁচ মিনিটে চক্রটি এক কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৬৯৫টি শেয়ার লেনদেন করে। চক্রটির এ ধরনের লেনদেনের ফলে ১৬ টাকা থেকে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দাম ১৭ টাকা ৭০ পয়সায় ওঠে। এভাবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কয়েক দফা সিরিজ লেনদেন করে চক্রটি। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ১৭ (ই) (৫) ধারা অনুযায়ী এ ধরনের লেনদেন নিষিদ্ধ।
হিরুর পরিবারের সদস্যদের ভূমিকার কারণে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ে ৫৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। এতে ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ২০ টাকা ১০ পয়সায় ওঠে। এভাবে দাম বাড়িয়ে শেয়ার বিক্রি করে ওই ১৫ দিনেই চক্রটি ১৪ কোটি ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা মুনাফা তুলে নেয়। এ ছাড়া বিক্রি না করা শেয়ারে আরও ১৪ কোটি ৩৮ লাখ ১১ হাজার টাকা মুনাফা ছিল চক্রটির।
এভাবে হিরু কখনো নিজে, কখনো স্ত্রী সাদিয়া, কখনো বাবা আবুল কালাম মাতবর, কখনো বোন কনিকা আফরোজকে সামনে রেখে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছেন। অবশ্য সামনে যাকেই রাখা হোক, প্রতিটি ঘটনায় হিরুর পরিবারের একাধিক সদস্য রয়েছেন। হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবরের নেতৃত্বে ফরচুন সুজের শেয়ার দাম ২০২১ সালের ২০ মে থেকে ১৭ জুনের মধ্যে ৯৪ দশমিক ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এই দাম বাড়ানোর সময়ে কোম্পানিটির শীর্ষ ক্রেতা-বিক্রেতার তালিকায় হিরুর বাবার পাশাপাশি ছিলেন হিরু নিজে, তার স্ত্রী সাদিয়া, বোন কনিকা আফরোজ, শ্যালক কাজী ফরিদ হাসান এবং হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ। চক্রটি একাধিক দিন সিরিজ লেনদেন করে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ায়।
এর মধ্যে হিরু তার নিজের নামে থাকা সাতটি বিও হিসাব ব্যবহার করে ফরচুন সুজের শেয়ার দাম প্রভাবিত করত। এ ছাড়া আবুল কালাম মাতবরের দুইটি, কনিকা আফরোজের দুইটি, ডিআইটি কো-অপারেটিভের তিনটি, কাজী সাদিয়ার তিনটি বিও হিসাব ব্যবহার করা হয়। এ সময়ের মধ্যে চক্রটি ফরচুন সুজের শেয়ার বিক্রি করে ছয় কোটি ১৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মুনাফা তুলে নেয়। এ ছাড়া তাদের কাছে থাকা অবিক্রীত শেয়ারে আরও ২৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭৭ হাজার ৩৫৪ টাকা মুনাফা রয়েছে।
হিরুর স্ত্রী সাদিয়ার নেতৃত্বে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স এবং গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। হিরু এবং তার স্ত্রীর প্রভাবে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ৩ মে’র মধ্যে মাত্র এক মাসে ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দাম ১০৭ দশমিক ৪২ শতাংশ বাড়ে। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৪১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়াতেও একাধিক দিন সিরিজ লেনদেন করে চক্রটি। এই এক মাসে ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার বিক্রি করে হিরু এবং তার স্ত্রী সাদিয়া চার কোটি ৩৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা মুনাফা তুলে নেন।
আর গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দাম ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে ২ জুনের মধ্যে বাড়ানো হয় ১১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়াতে সাদিয়ার নেতৃত্বে প্রথম সিরিজ লেনদেন করা হয় ২০২১ সালের ২৪ মে। ওইদিন সকাল ১০টা ৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ড থেকে ১০টা ৩৬ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড পর্যন্ত সিরিজ লেনদেন করে গ্রীন ডেল্টার শেয়ার দাম ৬৮ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৭৪ টাকা ১০ পয়সায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়া ১ জুন দুপুর ১টা ৩৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ড থেকে ১টা ৩৭ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের মধ্যে সিরিজ লেনদেন করে সাদিয়া ও তার সহযোগীরা কোম্পানিটির শেয়ার দাম ১০৪ টাকা ২০ পয়সা নিয়ে যায়। আগের দিনের লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ৯৪ টাকা ৮০ পয়সা। সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে এভাবে শেয়ার দাম বাড়িয়ে সাদিয়ার নেতৃত্বাধীন চক্রটি ওই এক মাসে এক কোটি ৮৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা মুনাফা তুলে নেয়।
হিরুর বোন কনিকা আফরোজকে সামনে রেখে ২০২১ সালের ৫ মে থেকে ২৪ মে’র মাধ্যমে চক্রটি এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার দাম ১২ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৩৩ টাকা ৮০ পয়সায় ওঠায়। কনিকা আফরোজের সঙ্গে ব্যাংকটির শেয়ার দাম বাড়াতে হিরু, হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া, বাবা আবুল কালাম মাতবর এবং হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ প্রভাব বিস্তার করে। এই দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে চক্রটি ৫ মে, ৬ মে, ১১ মে, ১২ মে, ১৬ মে এবং ২৩ মে সিরিজ লেনদেন করে। এভাবে দাম বাড়িয়ে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে চক্রটি ১৫ কোটি ২২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা মুনাফা তুলে নিয়েছে।
শেয়ারবাজারে কারসাজি করতে হিরু তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি নিজেদের প্রতিষ্ঠানকেও ব্যবহার করেছেন। এমন একটি প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ। হিরুর মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটিকে সামনে রেখে বিডিকম অনলাইনের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে মোটা অঙ্কের মুনাফা তুলে নিয়েছেন হিরু ও তার পরিবারের সদস্যরা।
ডিআইটি কো-অপারেটিভের নামে খোলা বিও হিসাব (১৬০৪৫৩০০৬৫৭৫৭৮১১) এবং হিরুর স্ত্রী সাদিয়া, বাবা আবুল কালাম মাতবর এবং হিরু ও তার স্ত্রীর যৌথ বিও হিসাবের মাধ্যমে বিডিকম অনলাইনের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হয়। চক্রটির ভূমিকায় চলতি বছরের ৭ মার্চ থেকে ১০ মার্চে বিডিকমের শেয়ার দাম ২৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৩৪ টাকা ৩০ পয়সায় ওঠে। অর্থাৎ মাত্র চার কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৪৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।
সহযোগীদের (হিরুর পরিবারের সদস্য) নিয়ে আইন লঙ্ঘন করে সিরিজ লেনদেন করে ডিআইটি কো-অপারেটিভ এই শেয়ার দাম বাড়ায় বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির তদন্তে উঠে আসে। শেয়ার দাম বাড়িয়ে চক্রটি তিনদিনের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করে এক কোটি ৭০ লাখ তিন হাজার টাকা মুনাফা তুলে নেয়। এ ছাড়া চক্রটির কাছে থাকা অবিক্রীত শেয়ারের আরও দুই কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা মুনাফা ছিল। অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও সহযোগীদের ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।
এভাবে তিন ডজনের বেশি কোম্পানি নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন হিরু ও তার পরিবারের সদস্যরা। ফলে হিরু ও তার পরিবারের সদস্যদের আয় ও সম্পদে বড় উল্লম্ফন হয়েছে। গত বছরের জুন শেষে হিরুর জমা দেওয়া আয়কর নথির তথ্য অনুযায়ী, ওই অর্থবছর শেষে তার নিট সম্পদ মূল্য ২০ কোটি ২১ লাখ টাকা। এক বছর আগে যা ছিল মাত্র ৬৫ লাখ টাকারও কম। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে হিরুর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ১৯ কোটি টাকার বেশি।
হিরুর থেকে তার পরিবারের আয় আরও বেশি। হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে শেয়ারবাজার থেকে আয় করেছেন ৫০ কোটি টাকার বেশি। বাবা আবুল কালাম মাতবর ২০ কোটি টাকা এবং ছোট বোন কনিকা আফরোজ প্রায় ১৪ কোটি টাকা আয় করেছেন। এক বছরে এই চারজনের আয় প্রায় ১০৬ কোটি টাকা। এই আয় মিলে তাদের সম্পদ মূল্য ২৭৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অথচ ২০১৯ সাল শেষে ছিল মাত্র দুই কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক সদস্য বলেন, ২০১০ সালে নবীউল্লাহ নবি শেয়ারবাজারে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তবে হিরু সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। শেয়ারবাজারে হিরুর মতো এতো প্রভাব বিস্তার আগে কেউ করতে পারেননি। এমনকি পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে হিরুর মতো কেউ কারসাজিতে জড়িত হননি। শেয়ারবাজারে হিরুর প্রভাব এতটা যে, বড় বড় বিনিয়োগকারী, মার্চেন্ট ব্যাংকও তার পেছনে ছুটেছে। হিরু কোন শেয়ার কিনছে, এটা জানার জন্য সবাই উদ্গ্রীব হয়ে থাকে।
বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্তের পর বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারীর বিরুদ্ধে আইন ভাঙার অভিযোগে জরিমানা করা হয়েছে। আর নতুন কমিশন গঠনের পর হিরুসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিও হিসাব জব্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে আগামীতে আরও কঠোর হবে কমিশন।