অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে ৪ শতাংশ হতে পারে
রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আগের পূর্বাভাস সংশোধন করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি চার শতাংশ বাড়বে। সংস্থাটি এর আগে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ বলেছিল।
বিশ্বব্যাংক গত অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ করেছিল। তা সরকারের অস্থায়ী প্রাক্কলন পাঁচ দশমিক ৮২ শতাংশের তুলনায় কম।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’র অক্টোবর সংখ্যায় এসব তথ্য জানিয়েছে বৈশ্বিক দাতা সংস্থাটি। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এর হার হতে পারে ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে। অর্থাৎ গড়ে চার শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের ব্যাপ্তি ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত হওয়া নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাব এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অনিশ্চয়তাকেই প্রতিফলিত করে।
দক্ষিণ এশিয়া উন্নয়ন হালনাগাদে বিশ্বব্যাংক বলেছে, প্রবৃদ্ধির বিস্তৃত পরিসর সাম্প্রতিক মাসগুলোয় নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাবের পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতার পর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘিরে অনিশ্চয়তা প্রতিফলিত করে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের পর এটি বিশ্বব্যাংকের সংশোধিত প্রক্ষেপণের মধ্যে সর্বনি¤œ প্রবৃদ্ধির হার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে ছয় দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস তার তুলনায় অনেক কম।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেশের বিনিয়োগ ও শিল্প প্রবৃদ্ধিকে কমিয়ে রাখবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও, সাম্প্রতিক বন্যায় কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বল্পমেয়াদে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া সাম্প্রতিক বন্যা কৃষি উৎপাদনেও কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে, দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী বিশ্বব্যাংক। আর্থিক খাতের সংস্কার, উন্নত ব্যবসায়িক পরিবেশ, দেশীয় সম্পদের আরও বেশি ব্যবহার এবং বর্ধিত বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি ধীরগতির পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উন্নত অর্থনীতিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক সংযোগ স্থাপন করছে। এটি দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মূল উৎস যেমন- রপ্তানি, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং পোর্টফোলিও বিনিয়োগের ওপর ঝুঁকি কমিয়েছে।
আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি সাড়ে পাঁচ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। মালদ্বীপের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্যও বিশ্বব্যাংক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে।
গত জুলাই ও আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস পাঁচ দশমিক এক শতাংশে নামিয়ে আনার দুই সপ্তাহ পর বিশ্বব্যাংকের এই সংশোধনী এলো।
এডিবির প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে পাঁচ দশমিক এক শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে, যা সংস্থাটির আগের পূর্বাভাসের চেয়ে কম। এর আগে গত এপ্রিলের পূর্বাভাসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক ছয় শতাংশ হবে বলে জানিয়েছিল ম্যানিলাভিত্তিক বহুপাক্ষিক ঋণদাতা সংস্থাটি।