ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

রপ্তানির তথ্যে গরমিল হবে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১০, ১০ অক্টোবর ২০২৪

রপ্তানির তথ্যে গরমিল হবে না

রপ্তানি তথ্যে গরমিল

দেশের মোট রপ্তানি তথ্যে ভবিষ্যতে আর কোনো গরমিল হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এখন থেকে রপ্তানির সঠিক তথ্য প্রকাশ করা হবে। শুধু তাই নয়, শ্রমিক অসন্তোষে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হলেও গত বছরের তুলনায় এবার সেপ্টেম্বরে মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২২ কোটি ডলার। ওই হিসেবে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ ছাড়া শ্রম অসন্তোষের কারণে আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর এবং ঢাকার কারখানা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হলেও পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। রপ্তানির এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তৈরি পোশাকের পাশাপাশি মাছ, কৃষিপণ্য, চামড়া এবং প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। 
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। ইপিবি জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারে সরাসরি যুক্ত হওয়া রপ্তানি চালানের তথ্যের ভিত্তিতে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ রপ্তানি থেকে আয় করেছে ৩৫১ কোটি ডলার, আগের বছরের একই মাসে যা ছিল ৩২৯ কোটি ডলার। এই হিসাবে, তা বেড়েছে প্রায় ২২ কোটি ডলার। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.০৪ শতাংশ।

এ সময়ে দেশের রপ্তানি আয় ১ হাজার ১৩৭ কোটি ডলার হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে যা ছিল ১ হাজার ৮২ কোটি ডলার। ইপিবির তথ্যমতে, গত বছরের তুলনায় এবার সেপ্টেম্বর মাসে তৈরি পোশাক নিটওয়্যার এবং ওভেন রপ্তানি বেড়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ২৬৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হলেও  এবার তা বেড়ে হয়েছে ২৭৯ কোটি ডলার। যদিও এবার হোমটেক্সটাইল রপ্তানি কিছুটা কমেছে। 
উল্লেখ্য, সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রপ্তানির তথ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের গরমিল ধরা পড়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কোনো পক্ষই এর দায় নিজেদের কাঁধে নিতে চাইনি।  তবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বলেছে, একই রপ্তানি চালানের তথ্য এনবিআরের কাস্টমস বিভাগ একাধিকবার ‘এন্ট্রি’ করার কারণেই তথ্যের এই অসঙ্গতি তৈরি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ইপিবির কর্মকর্তারা এজন্য রাজস্ব কর্তৃপক্ষকে দায় দিচ্ছেন। তারা বলছেন, এনবিআরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তারা রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে এনবিআর কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সরাসরি কোনো কথা বলছেন না। 
তবে তারা মনে করেন, ডাবল কাউন্টিংয়ের কারণে রপ্তানির তথ্যে এ গ্যাপ (প্রকৃত রপ্তানির সঙ্গে পার্থক্য) তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে এনবিআরের রপ্তানি-সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণকারী সফটওয়্যারের কারণেও তা হতে পারে বলে সেই সময় আভাস দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও তথ্যের গরমিলের জন্য সেই সময় এনবিআরকেই দায়ী করেন। কিন্তু কোনো পক্ষই দায় নেয়নি। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আমরা তথ্য জেনারেট করি না। এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআরের তথ্য যাচাই-বাছাই করেই সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হবে।

তিনি বলেন, আগামীতে রপ্তানি বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সঠিক সময়ে রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা জাঁকজমকপূর্ণভাবে করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেখানে তারণ্য শক্তির বিষয়টি মূল ফোকাশে নিয়ে আসা হবে। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সাহায্যে বিদেশী ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ এবং তাদের নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। অনেকে আসার আগ্রহ দেখিয়েছেন। আশা করছি এবার বছরের শুরুতে একটি ভাল বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে বিগত সরকারের শেষ সময়ে রপ্তানির তথ্যে গরমিল ছিল।

ওই সময় ইপিবি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রপ্তানি তথ্যে অমিল ছিল। ওই তথ্য সমন্বয় করার কথা জানিয়েছিলেন, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণের একটি প্রজেকশনও তৈরি করতেও ইপিবিকে বলা হয়েছে। রপ্তানি তথ্যসহ বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আগে রপ্তানির তথ্য কিছু অমিল ছিল। 
আমি তাদের (ইপিবি) শেষ পর্যন্ত রপ্তানির তথ্য সমন্বয় করতে বলেছি। যত দ্রুত সম্ভব তা করা হবে। এর আগে গত জুলাই মাসে পণ্য রপ্তানির তথ্যে গরমিলের বিষয়টি সামনে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এত দিন ইপিবির দেওয়া রপ্তানির তথ্য ধরে হিসাব করা হতো। তবে হিসাব অনুযায়ী দেশে রপ্তানি আয় আসছিল না। এ নিয়ে দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা থেকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, রপ্তানির পরিমাণ কম ছিল। তাই রপ্তানি আয় বেশি আসার যৌক্তিকতা নেই। এখন থেকে প্রকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। এনবিআর ও ইপিবি একই রপ্তানি তথ্য ব্যবহার করবে।

×