ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উত্থান-পতন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:২০, ৬ অক্টোবর ২০২৪

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উত্থান-পতন

কয়েক বছর ধরেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে পতন চলছে

কয়েক বছর ধরেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে পতন চলছে। রিজার্ভের পতন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে বিগত সরকার। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে। এতে রিজার্ভ কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, আইএমএফের বিপিএম-৬ হিসাব মান অনুযায়ী ২ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৭৬ কোটি ডলার। আর গ্রস বা মোট রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার ৪৭৬ কোটি ডলার। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর নিট রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৯৩৮ কোটি ডলার। একই সময়ে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৫২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই রেমিটেন্স আসার গতি ভালো ছিল। একই ধারা অব্যাহত থাকায় সদ্য সমাপ্ত এ মাসে ২৪০ কোটি ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে।
বৈধপথে রেমিটেন্স আসার পেছনে সচেতনতা কাজ করছে। আবার বৈধপথে ডলারের দরবৃদ্ধিতে হুন্ডি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। এতে রেমিটেন্স আসার গতি বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গত দুই বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর রিজার্ভ বাড়বে বলে আশ্বাস দেন। অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো রিজার্ভ। যে কোনো দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের রিজার্ভ থাকলে সেটিকে খুব খারাপ অবস্থা বলা যায় না। বর্তমানে দেশের আমদানি ব্যয় মেটাতে প্রতি মাসে ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এরপর রিজার্ভ বাড়তে থাকে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেড়ে হয় ২৫ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩২ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। তার পরের অর্থবছরে (২০২০-২১) ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায় রিজার্ভ।

২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে (৪৮ বিলিয়ন), যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। কিন্তু সেটি চার মাসও টিকেনি। ফের নিচে নামতে থাকে ধীরে ধীরে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার এবং সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ কমে ৩১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছিল দুই হাজার ৬৮৮ কোটি বা ২৬ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারে। যদিও বর্তমানে আইএমএফের বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২ হাজার কোটি ডলারের নিচে অবস্থান করছে।

অপরদিকে আগস্টের পর সেপ্টেম্বর মাসেও প্রবাসী আয়ে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৪০ কোটি ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় যা ১০৭ কোটি ডলার বা ৮০ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। গত দুই মাসে ভালো প্রবৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রেমিটেন্স বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, রেমিটেন্স ব্যাপক বৃদ্ধির ফলে ডলার বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ডলারের দর ১২০ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও একটু করে বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসীরা মোট ৬৫৪ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৪৯০ কোটি ডলার। এর মানে প্রথম প্রান্তিকে বেশি এসেছে ১৬৪ কোটি ডলার।

×