বিএসইসির সামনে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে পদত্যাগে শনিবার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের কোনো খবর না পাওয়ায় ফের মাঠে নামেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার বেলা ১২টা থেকে বিএসইসির সামনে চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে ফের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে বিএসইসিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
এ সময় বিএসইসিতে পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়। বিএসইসির সামনে কর্মসূচি পালনের দ্বিতীয় দিনে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। এইদিনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জের সার্বিক সূচক কমেছে প্রায় ৮৪ পয়েন্ট। তবে আগের দিনের তুলনায় এই দিনে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। সারাদিনে ডিএসইতে মোট ৩৬৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিএসইসি কার্যালয় অবরুদ্ধ শেষে রবিবার সকালেই বেশকিছু বিনিয়োগকারী বিএসইসির সামনে অবস্থান করে। সে সময় বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তারা বৈঠকে বসেন। তবে বৈঠকে বিএসইসির কর্মকর্তারা বিভিন্ন প্রশ্নে যথাযথ উত্তর দিতে না পারায় পুনরায় মানবন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন বিনিয়োগকারী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত থাকা সাধারণ বিনিয়োগকারী বুলবুল আহমদে বলেন, আমরা সকালে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করেছি। তবে আমরা আমাদের এক দফা দাবিতে এখনো অনড় আছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা বিএসইসির সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের এ কর্মসূচিতে যোগদান করতে মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিএসইসির সামনে জড়ো হচ্ছেন। আমরা বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে এখানে আমরা অবস্থান করছি। একইসঙ্গে আমরা এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বিকেল ৩টার দিকে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে মতিঝিল বক চত্বরে অবস্থান নেবেন বিনিয়োগকারীরা। সেখানে তারা একত্রিত হয়েছে বিএসইসির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বিএসইসির চেয়ারম্যানকে শনিবারের মধ্যে পদত্যাগ করতে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। তাই আমাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রবিবার থেকে লাগাতার কর্মসূচি পালন করব। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিকেল ৩টির দিকে মতিঝিল বক চত্বরে অবস্থান নেবেন। এরপর বিএসইসির উদ্দেশে আমরা যাত্রা করব।
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, অপরদিকে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠকে তাদের দাবিগুলো এবং পরামর্শগুলো শোনা হয়েছে বলে জানান বিএসএসির মুখপাত্র। পরবর্তীতে ট্রাস্কফোর্সসহ যেসব সংস্কার করা হবে সেখানে এসব পরামর্শগুলো কাজে লাগানো হবে। তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার কিছু বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি ভবনের সামনে হট্টগোল করেছে। এ ছাড়া আজকেও তারা বিএসইসি ভবনের সামনে আসবেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা গেছে। কিন্তু বিএসইসি একটি সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান। এ কারণে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে বিএসইসিতে সরকার নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
এর আগে বুধবার বিকেলের বিএসইসির উদ্দেশে লংমার্চ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিনিয়োগকারীরা। সে অনুযায়ী পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মতিঝিলে জড়ো হন বিনিয়োগকারীরা। বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় বিএসইসির উদ্দেশে লংমার্চ কর্মসূচির সময়সূচি কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। তবে মতিঝিলে ডিএসইর পুরাতন ভবনের সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন বিনিয়োগকারীরা। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শতাধিক বিনিয়োগকারী লংমার্চ কর্মসূচি শুরু করেন।
পরবর্তীতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএসইসির সামনে বিনিয়োগকারীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় বিনিয়োগকারীরা বিএসইসির সামনের সড়ক অবরোধ করে ‘অযোগ্য বিএসইসির চেয়ারম্যান হঠাও দেশের পুঁজিবাজার বাঁচাও’ স্লোগান দেন। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে শনিবার পর্যন্ত পদত্যাগ করার আল্টিমেটাম দেন বিনিয়োগকারীরা।