ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

নতুন কমিশনের আমলে ৪৩১ কোটি টাকা জরিমানা

বাজার মূলধন কমেছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ৩ অক্টোবর ২০২৪

বাজার মূলধন কমেছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা

বাজার মূলধন কমেছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। এর মাধ্যমে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর কমিশন কারসাজির দায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৪৩১ কোটি টাকার জরিমানা করেছে। তবুও ফিরছে না আস্থা। নাজুক পরিস্থিতিতে বড় বিনিয়োগকারীদের জরিমানার চাপে কারণে বাজারে সাইডলাইনে গেছে অন্যান্য বিনিয়োগকারী। বর্তমান কমিশনের মেয়াদে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বিএসইসির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শেয়ারবাজারে মন্দা ও অনাস্থা কাটছে না। তার নেতৃত্বে শেয়ারবাজার ভালো হওয়ার কোনো সুযোগ দেখছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে অন্যসব স্টেকহোল্ডাররা। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মানববন্ধন করে পদত্যাগের দাবি তোলা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে ১০ আগস্ট বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করেন। এর ২ দিন পরে ১২ আগস্ট পদত্যাগ করেন কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ ও ড. রুমানা ইসলাম। এরপরে গত ১৮ আগস্ট খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে চেয়ারম্যান এবং ২৮ আগস্ট মো. আলী আকবরকে ও ৩ সেপ্টেম্বর ফারজানা লালারুখ বিএসইসির কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার দেড় মাসে ২৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।

এ ছাড়া ৬০টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দ, পুরাতন ইস্যুতে ২৭ কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে প্রেরণ, ৯ কোম্পানির আইপিও/আরপিও ফান্ড ব্যবহার নিয়ে তদন্ত, ২৪ কোম্পানির অনিয়ম ও দর বৃদ্ধি নিয়ে তদন্ত এবং সালমান এফ রহমান-এসআলম ও তাদের পরিবার মালিকানাধীন কোম্পানি নিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শেয়ারবাজারের মন্দায় কমিশনের এমন সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে নেয়নি বিনিয়োগকারীরা। যার ফলাফল নতুন কমিশনের নিয়োগের দিন থেকে বুধবার পর্যন্ত ডিএসইর ডিএসইএক্স মূল্যসূচক কমেছে ৪৫০ পয়েন্ট। এতে করে বাজার মূলধন কমেছে বা বিনিয়োগকারীরা তাদের ৩৬ হাজার ৯১৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ হারিয়েছে। এই অবস্থায় রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছে বিনিয়োগকারীরা। বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের বিএসইসির ভবনের সামনে বিক্ষোভ-মানববন্ধন করে বিনিয়োগকারীরা। যারা সবাই বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবি
তোলেন। বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বলেন, একজন অসুস্থ মানুষকে ফাঁসি দেওয়া হয় না। সুস্থ করে তারপরে দেওয়া হয়। একইরকম অবস্থায় শেয়ারবাজার। এই বাজার রয়েছে আইসিউতে। সেখানে পরিচর্যা বা চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলতে হবে আগে। কিন্তু রাশেদের নেতৃত্বাধীন কমিশন আইসিইউ থাকার মধ্যেই শেয়ারবাজারকে চিকিৎসার পরিবর্তে শাস্তি দিয়ে আরও অসুস্থ করে তুলছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত দেড় মাসে রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ৪৩১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। ৪টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে এমনটি করা হয়েছে। বেক্সিমকোর কারসাজিতে ৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮.৫২ কোটি, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সে ৭ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ১.৬৩ কোটি টাকা. হামি ইন্ডাস্টিজে হাসিব হাসানকে ১ কোটি টাকা, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সে ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

×