ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১

ইউনাইটেড স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের তথ্য প্রকাশ

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে ভিয়েতনাম-ভারত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ২ অক্টোবর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে ভিয়েতনাম-ভারত

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে ভিয়েতনাম-ভারত

মার্কিন পোশাকের বাজার চীন ধীরে ধীরে হারাচ্ছে। অন্যদিকে এ বাজারের বৃহত্তর অংশ দখলের প্রতিযোগিতায় ভিয়েতনাম এবং ভারত বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এমনকি দামি পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে রয়েছে এ দুই দেশ। ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ইউনাইটেড স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশন। উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানি, অবকাঠামোগত সুবিধা ও বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে দুই দেশের রপ্তানি বাড়ছে বলে ‘অ্যাপারেল: এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস অব সার্টেইন ফরেইন সাপ্লায়ার্স টু দ্য ইউনাইটেড স্টেটস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের আধিপত্য হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম এবং ভারতসহ অন্য দেশগুলো বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক বাজারে তাদের উপস্থিতি বাড়িয়ে তুলেছে। এতে বলা হয়, ডলারমূল্যে মার্কিন পোশাক আমদানিতে চীনের হিস্যা ২০১৩ সালের ৩৭.৭ শতাংশ থেকে কমে ২০২৩ সালে ২১.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। বিপরীতে, ভিয়েতনামের শেয়ার ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৭.৮ শতাংশ হয়েছে।

আর বাংলাদেশের অংশ ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯ শতাংশ হয়েছে। ভারতের মার্কেট শেয়ার ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫.৩ শতাংশ হয়েছে। তাদের প্রতিবেশী পাকিস্তানের শেয়ার ১.৯ শতাংশ থেকে ২.৬ শতাংশ হয়েছে। উভয় দেশই তুলাভিত্তিক পোশাকের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এবং ভার্টিকাল ইন্টিগ্রেশন, স্থানীয়ভাবে উপকরণ সংগ্রহ ও বড় মাত্রায় উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে লাভবান হয়।
এ ছাড়াও মার্কিন কোম্পানিগুলো চীন থেকে সরে এসে তাদের পোশাকের উৎস-বাজার সম্প্রসারিত করছে। ফলে দেশটির অনেক কোম্পানি সরবরাহ চেইন দক্ষতা এবং উৎপাদন ক্ষমতার সুবিধার জন্য ভিয়েতনামের দিকে ঝুঁকেছে, বলা হয় প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জিন্স ও টি-শার্টের মতো সাশ্রয়ীমূল্যের সুতির নিটওয়্যারে বাংলাদেশের বিশেষত্ব থাকলেও উচ্চমূল্যের পণ্যের ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম এবং ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

মানবসৃষ্ট ফাইবার (এমএমএফ) ইনপুট আমদানির ওপর নির্ভরতা এবং লজিস্টিক সীমাবদ্ধতার কারণে দেশের প্রতিযোগিতাসক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও সামাজিক কমপ্লায়েন্সের, বিশেষ করে শ্রমচর্চার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুনাম এখনো অতটা আহামরি অবস্থানে পৌঁছায়নি। তবে বাংলাদেশ এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি অপরিহার্য সরবরাহকারীর স্থান ধরে রেখেছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৭.১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা ২০১৩ সালের রপ্তানি থেকে ২.৩ বিলিয়ন ডলার বেশি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ দশটি রপ্তানিকারক দেশের পোশাকের ইউনিট মূল্য পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের পরেই সবচেয়ে কমদামের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়লেও দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ এখনো প্রায় অর্ধেক। এ সময়ে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ষষ্ঠ থেকে তৃতীয় স্থনে এবং কম্বোডিয়া অষ্টম থেকে ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে।
ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া ॥ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিয়েতনাম এটির দক্ষ সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা, বড় আকারের উৎপাদন এবং ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশের কারণে পোশাকের বাজারে একটি শক্তিশালী প্রতিযোগী হয়ে উঠেছে। ব্যয়সাশ্রয়, নমনীয়তা এবং দ্রুত বাজারে প্রবেশাধিকার সুবিধা দেয় দেশটি। এ ছাড়া দেশটির একটি বৃহৎ, তরুণ শ্রমশক্তি এবং ভালো পরিবহন পরিকাঠামো রয়েছে। পাশাপাশি, ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এশিয়ার অন্য প্রতিযোগীদের তুলনায় বেশি।

কম্বোডিয়ারও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির হার বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির মার্কেট শেয়ার ২০২৩ সালে ৩.২ শতাংশ থাকলেও গত বছর তা বেড়ে ৪.৩ শতাংশ হয়েছে। চীন এবং ভিয়েতনামের নিকটবর্তী দেশ হওয়া এবং সোর্সিং খরচ অনুকূলে থাকা এ প্রবৃদ্ধির কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তান ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ভারতের ১৪.৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির ৩২.০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে করা হয়েছে। ভারতীয় পোশাক উৎপাদনকারীরা হ্যান্ড-এমব্রয়ডারি করা পণ্যের মতো দামি পোশাকপণ্যের দিকে বেশি নজর দেয়। দেশটির প্রায় সম্পূর্ণ ভার্টিকাল ইন্টিগ্রেশন রয়েছে, যার ফলে ৯০ শতাংশের বেশি কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করতে পারে এটি।

মার্কিন প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান মার্কিন বাজারে বড় পোশাক সরবরাহকারী না হওয়ার পেছনে ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি একটি বড় কারণ। মূল উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা এবং পাকিস্তানে ভ্রমণ কঠিন ও অনিরাপদ বলে বিবেচিত হওয়া। তবে পাকিস্তান থেকে পণ্য সংগ্রহকারী কিছু সংস্থা দেশটি থেকে ভালো পরিষেবা পাওয়ার এবং কোনো নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে না পড়ার কথা জানিয়েছে।

×