ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

ঢাকা চেম্বারের সেমিনার

ডিসেম্বরের পর সুদহার কমানো প্রয়োজন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ডিসেম্বরের পর সুদহার কমানো প্রয়োজন

ডিসেম্বরের পর সুদহার কমানো প্রয়োজন

মূল্যস্ফীতি কমাতে ধাপে ধাপে নীতি সুদহার বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দীর্ঘ মেয়াদে উচ্চ সুদহারের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যাবে এবং স্থানীয় কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগে বড় প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। সেজন্য আগামী ডিসেম্বর মাসের পর সুদহার কমানোর বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি আশরাফ আহমেদ। শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন আশরাফ আহমেদ। বেসরকারি খাতের দ্বিবার্ষিক অর্থনৈতিক অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে এ সেমিনার আয়োজন করে ডিসিসিআই।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) মো. সেলিম আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বেসরকারি সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আশরাফ আহমেদ। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদহার বৃদ্ধির নীতি সাময়িকভাবে কার্যকর ধরা যায়। এটি সাময়িকভাবে সফল হলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা ধরে রাখা ঠিক হবে না। প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগে উচ্চ সুদহারের প্রভাব পড়ে। সুদহার বাড়লে ঋণপ্রবাহ কমে যায়। এতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমে যায়। সেজন্য দীর্ঘ মেয়াদে উচ্চ সুদহার ধরে রাখা যাবে না। আগামী ডিসেম্বর মাসের পরে সুদহার কমানো হলে তা বেসরকারি খাতের জন্য ভালো হবে।

আশরাফ আহমেদ আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকারের হাতে আরও কিছু উপকরণ আছে; সেগুলো ব্যবহার করা প্রয়োজন। দেশে মূল্যস্ফীতির অন্যতম বড় কারণ খাদ্যপণ্যের অপচয়। উৎপাদন পর্যায়ে অপচয় কমিয়ে আনা গেলে মূল্যস্ফীতি কমবে, আমদানি চাহিদাও কমবে।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সুদহার বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আরও সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) মো. সেলিম আল মামুন। তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো, মূল্যস্ফীতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। মূল্যস্ফীতি যত দিন না কমবে, তত দিন নীতি সুদহার বাড়ানো হবে। কারণ, হিসেবে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি সরাসরি নি¤œ আয়ের মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চেয়েও এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা জরুরি উল্লেখ করে সেলিম আল মামুন বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা ঠিকভাবে কাজ করলে আট-দশ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, মুদ্রানীতির মাধ্যমে এককভাবে মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না; এর সঙ্গে রাজস্ব নীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো, সরবরাহ শৃঙ্খলের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। সেখানে কাজ করতে হবে। বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ বলেন, গত এক দশকে দেশে নতুন উদ্যোগের জায়গা সংকুচিত হয়েছে।

এর বিপরীতে ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের (স্বজনতোষী পুঁজিবাদ) উত্থান হয়েছে। আমরা ব্যাংক খাতের দিকে তাকালে এর অনেক নজির পাওয়া যাবে। এখন তাদের (ক্রোনি ক্যাপিটালিস্ট) সরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। এ জায়গায় নতুন উদ্যোক্তারা যেন আসতে পারে, সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
সেমিনারে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, দেশের এসএমই খাতে ঋণের বড় ধরনের সংকট আছে। এই খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো দরকার; তা না হলে এই খাত মন্দায় পড়ে যাবে। খেলাপি ঋণের বিষয়ে আশরাফ আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ পুরো ব্যাংক খাতের সমস্যা নয়, বরং বলা যায়, এটি উপ খাতের সমস্যা। দেশের অর্ধশত ব্যাংক ভালো অবস্থায় আছে-১০-১২টির অবস্থা তুলনামূলক খারাপ। এই ১০-১২টি ব্যাংকের জন্য আমরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হই।

এসব ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ভালো ঋণগ্রহীতাদেরও নিশ্চয়তা দিতে হবে। যখন কোনো ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন ছোট ঋণগ্রহীতারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন, যদিও বড়রা চাইলে সহজে অন্য ব্যাংকে যেতে পারে। তারল্যসংকটের মতো সংকটে পড়লে ছোটদের ঋণের সুদহার আগে বাড়ানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ আহ্বান করেন তিনি। ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বলেন, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।

এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস ছিল রেগুলেটরি ব্যর্থতা। ফ্লোর প্রাইস পদ্ধতি পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে ফার্মাসিউটিক্যালসে খাতের মাত্র ৪-৫ টা কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এ খাতসহ অন্যান্য খাতের ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে উৎসাহ দেওয়ার মতো কিছু নেই।

×