ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১

জেড শ্রেণিতে ২৭ শেয়ার

পুঁজিবাজারে সূচক পতনে সেঞ্চুরি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:১৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পুঁজিবাজারে সূচক পতনে সেঞ্চুরি

পুঁজিবাজারে সূচক পতনে সেঞ্চুরি

আগের দিন ২৭ কোম্পানিকে ‘জেড’ শ্রেণিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের ভীত করে তুলেছে; একদিনেই দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে প্রায় ১০০ পয়েন্ট। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনেও এর প্রভাব দেখা গেছে। লেনেদেন নেমেছে ৫০০ কোটির ঘরে। আরও দাম কমার শঙ্কায় হাতে থাকা শেয়ার কার আগে কে বিক্রি করবেন সেই প্রতিযোগিতায় ১৭টি শেয়ারের দর সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত কমেছে।

এসব শেয়ার ক্রেতাশূন্যও ছিল লেনদেনের শেষ সময় পর্যন্ত। এর বাইরে বড় দরপতন (৮ থেকে ৫ শতাংশ) হয়েছে আরও ৪৯টি শেয়ারের। ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশি থাকায় সব মিলিয়ে দাম কমেছে ২৯৯টি শেয়ারের। এতে দিন শেষে ৯৭ পয়েন্ট কমেছে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স।
এ নিয়ে টানা দুই দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক হারাল ১৩৮ দশমিক ৮২ পয়েন্ট। এর আগের ছয় দিনে বাজারে সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও বেশির ভাগ শেয়ার দাম কমে লেনদেন হয়। তবে সূচক বাড়ায় আগের ছয় দিনে যোগ হয়েছিল ৯৬ পয়েন্ট। বড় দরপতনে আগের ছয় দিনে যোগ হওয়া পয়েন্টের চেয়ে ৪১ পয়েন্টে কমেছে বেশি হারাল গত দুই দিনে। গত বুধবার তালিকাভুক্ত ২৭ প্রতিষ্ঠানকে ‘জেড’ শ্রেণিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানায় ডিএসই।

বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত কার্যকর শুরু হওয়ার দিনে লেনদেন শুরু হয় সূচকের পতন দিয়ে। কিছু সময় পর লেনদেনে গতির সঙ্গে সূচক কিছুটা বাড়লেও বিক্রয় চাপে সেই সূচক বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। এরপর থেকে সূচক ক্রমাগত কমে এক সময় ১০০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়। তবে শেষ দিকে ক্রেতা বাড়ায় পতন কিছুটা কমে ৯৭ পয়েন্টে দাঁড়ায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হালকা থেকে ভারি বৃষ্টিতে ঢাকার মতিঝিল এলাকার সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতিও ছিল তুলনামূলক কম, যা লেনদেন কমাতে ভূমিকা রাখছে।
একসঙ্গে অনেক কোম্পানিকে জেড শ্রেণিতে পাঠানোর কারণে এদিন বিনিয়োগকারীরা শুরু থেকেই শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
 জেড শ্রেণিতে যাওয়া মানেই হলো এসব শেয়ার ক্রয়ে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন না। এখন সিদ্ধান্ত হওয়ায় লোকসান ঠেকাতে মার্জিন ঋণে থাকা শেয়ারও মার্চেন্ট ব্যাংক সমন্বয় করতে পারে মনে করেন ডিএসই ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ডিবিএ এর সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘বিনিয়োগকারীরা এখনো বাজারে থিতু হতে পারেননি।

কয়েকদিন শেয়ার দরবৃদ্ধি পাওয়া মানেই বাজার ভালো হয়ে গেছ তা না। এখনো বিনিয়োগকারীদের মনে শঙ্কা রয়েছে, অল্পতেই তারা ভেঙে পড়েন। এতগুলো কোম্পানির জেড ক্যাটেগরিতে যাওয়ার লোড সামাল দেওয়ার মতে সক্ষমতা হয়ত এখনো হয়নি।
আগে বাজারের প্রতি আস্থা বাড়াতে হবে বিনিয়োগকারীদের। এখন বাজারে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়। আস্থা ফেরাতে না পারলে বিনিয়োগ বাড়বে না।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, লেনদেনে আসা ৪১২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর হারায় ৭৪ শতাংশের বা ২৯৯টির, দর বাড়ে ২০ শতাংশের বা ৭২টির ও আগের দরে লেনদেন হয় ২৫টির। গত কয়েক দিনের ধারবাহিকতায় ব্যাংক খাতের লেনদেন সবচেয়ে বেশি হয়েছে ডিএসইতে।

এ বাজারে ৫৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা লেনদেনের মধ্যে একক খাত হিসেবে ব্যাংকের অবদান ছিল ১৮৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকার, যা মোট লেনদেনের ৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ। গত কয়েক মাসের মধ্যে ডিএসইতে একক খাতে তা সর্বোচ্চ। এ খাতের ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে দর পতনের দিনেও শেয়ার দর বেড়েছে ৭৫ শতাংশ কোম্পানির। এরপরই মোট লেনদেনে ওষুধ ও রসায়ন খাতের অবদান ছিল ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ ও টেলিকম খাতের ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। জেড শ্রেণিতে যাওয়ার প্রথম দিনেই প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার দর হারিয়েছে। দর হারানোর শীর্ষ ১০টির সবই এ খাতের।
দর হারানোর শীর্ষে উঠে এসেছ লুব রেফ বাংলাদেশ লিমিটেড। কোম্পানটি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দর হারিয়েছে। এরপরই ৯ দশমিক ৯ শতাংশের উপরে দর হারিয়েছে জেড শ্রেণিতে যাওয়া দেশ গার্মেন্টস, এডভেন্ট ফার্মা ও বিচ হ্যাচারি। ৯ দশমিক ৭ শতাংশের ওপরে দর হারানো অন্য ৬ কোম্পানি হচ্ছে- ফার কেমিক্যাল, বে লিজিং, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্যাসিফিক ডেনিমস, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ ও বিডি থাই। সিংহভাগ শেয়ারের দর হারানোর দিনেও শেয়ার দর সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ বেড়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। এরপরই শেয়ার দর বেড়েছে ইউনিয়ন ব্যাংকের।

আগের দিনের চেয়ে ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়েছে ব্যাংকটির শেয়ার দর।
এছাড়াও ৯ শতাংশের উপরে দর বেড়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এডিএন টেলিকমের। আর ৮ শতাংশের উপরে দর বেড়েছে আমান ফিড ও ওরিয়ন ইনফিউশনের। একইসঙ্গে দর বেড়েছে এবি ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ারের।

×