ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১

শিক্ষা অফিস থেকে জমা দেওয়া হয় তিন মাস আগে

ইসলামী ব্যাংক থেকে ভাতার টাকা তুলতে পারছেন না শিক্ষকরা

আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইসলামী ব্যাংক থেকে ভাতার টাকা তুলতে পারছেন না শিক্ষকরা

তিন মাসের বেশি সময় শিক্ষকদের টাকা দিচ্ছে না ইসলামী ব্যাংক

তিন মাসের বেশি সময় শিক্ষকদের টাকা দিচ্ছে না ইসলামী ব্যাংক। নতুন কারিকুলাম প্রশিক্ষণের ভাতা হিসেবে শিক্ষা অফিস থেকে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া হলেও তা পরিশোধ করছে না ব্যাংকটি। এর ফলে দিনরাত- শিক্ষা ভবন ও ব্যাংকে ধরণা দিচ্ছেন শিক্ষকরা। বিষয়টি দীর্ঘ দিন হয়ে গেলেও ইসলামী ব্যাংক কোনো সুরাহা করছে না বলেও অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষক।
ঢাকা শিক্ষা অফিস সূত্র বলছে, তিন মাস শিক্ষকদের প্রশিক্ষণভাতা বাবদ তাদের ব্যাংক হিসাবে টাকা দেওয়া হয়। বিএফটিএনের মাধ্যমে এই টাকাগুলো জমা হয় তাদের অ্যাকাউন্টে। কিন্তু যেসব শিক্ষকের ইসলামী ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ব্যাংকে হিসাব রয়েছে। তারা তাদের টাকা পায়নি। বিষয়টি দীর্ঘ সময় হয়ে গেলেও এখনো ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।
ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল মজিদ জনকণ্ঠকে বলেন, ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে যখন টাকা জমা দেওয়া হয়, তখন সেটি বাউন্স ব্যাক করে। অর্থাৎ কারও অ্যাকাউন্টের শেষ নম্বর যদি ১০ থাকে সেটি ১১ নম্বর অ্যাকাউন্টে ফিরে গেছে। এর ফলে ঢাকার ৩৮০০ শিক্ষক তাদের ভাতা পাননি। স্থানীয় ব্যাংকে তারা বার বার যোগাযোগ করেছে, কিন্তু ব্যাংক থেকে আশ^াস ছাড়া আর কিছুই দেওয়া হয়নি। এর ফলে শিক্ষা অফিসগুলোতে তারা এসে ভিড় করছেন। ঢাকার বাইরেও এমন অহরহ ঘটনা রয়েছে।
ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কী না-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বারবার বলছে, বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সমাধান করা হচ্ছে। কিন্তু তিন মাসের বেশি সময় পার হলেও এখনো কোনো সমাধান হয়নি।
শিক্ষকরা জানান, নতুন প্রশিক্ষণ ভাতা হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রতি ৫০০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। যাতায়াত দূরত্ব ও আবাসন বিবেচনায় কয়েকজনের ভাতার পরিমাণ আরও বেশি। এতে শুধু মাত্র ঢাকার শিক্ষকরা ইসলামী ব্যাংকের কাছে দুই কোটি টাকা পাবেন বলে তারা হিসাব দেন। এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল মওলাকে একাধিকবার কল, মেসেজ দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। 
এদিকে নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ব্যয়ের তথ্য নিয়ে আগে থেকেই জটিলতায় ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এই সংস্থার অধীনে একটি ‘স্কিমের’ (প্রকল্প) আওতায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। এই খাতের ব্যয় বিবরণী নিয়েও একাধিক উপজেলা থেকে অভিযোগ এসেছিল। তবে তার সমাধান হয়েছে বলেও জানা গেছে।
নতুন কারিকুলামের আওতায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নতুন কারিকুলাম পরিবর্তনের কারণে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করা হবে। যা নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তব বোর্ড (এনসিটিবি) কাজ করছে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণের স্কিম পরিচালক মাহফুজ আলী জনকণ্ঠকে বলেন, কারিকুলাম একটি চলমান প্রক্রিয়া। আগামীতে ২০১২ সালের প্রশিক্ষণের বিষয়ে স্কিমটি কাজ করছে। এ নিয়ে এনসিটিবি মাস্টারপ্লান করছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে তিনি জানান, গত জুন-জুলাই মাসে প্রশিক্ষণের টাকাগুলো স্কিম থেকে দেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলায় ডিডিওরা শিক্ষকদের ব্যাংকস অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়েছেন।
তিনি জানান, অনেক শিক্ষক ছিলেন, যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও ছিল না। কিন্তু প্রশিক্ষণের টাকা হাতে দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষকরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন। এখন জানতে পারছি, ইসলামী ব্যাংকসহ কিছু ব্যাংক শিক্ষকদের টাকা দিচ্ছে না। বিষয়টি আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও জানিয়েছি। শিক্ষা কর্মকর্তারাও চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনেক ব্যাংকে কর্মকর্তা না থাকায় শিক্ষকরা ক্লাস ফেলে ব্যাংকে বসে আছেন। টাকাটি শিক্ষকদের প্রাপ্য। ব্যাংকের উচিত দ্রুত এর সমাধান করা।

×