ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১

সাংবাদিকদের অর্থ উপদেষ্টা

ব্যাংক খাত সংস্কারে চাওয়া হয়েছে আইএমএফ ঋণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ব্যাংক খাত সংস্কারে চাওয়া হয়েছে আইএমএফ ঋণ

উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ

ব্যাংকিং খাতের সংস্কার ও অর্থপাচার রোধে আইএমএফের ঋণ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এই ঋণ ব্যবহার হবে অর্থ পাচার প্রতিরোধ, ব্যাংক, রাজস্ব খাতের সংস্কার ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা সংস্কারে। তবে আইএমএফের কাছে কত ঋণ চাওয়া হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। অন্য দাতা সংস্থাগুলো কী পরিমাণ সহায়তা দেবে, সেটা জানার পর আইএমএফকে সহায়তার অঙ্ক জানানো হবে। 

মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা রকম সংস্কার ও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সম্পদ দরকার। আমরা যতটুকু পারি দেশীয় সম্পদ আহরণ করব, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদেশী সহায়তা লাগবে।

যেসব ক্ষেত্রে বিদেশী সহায়তা লাগবে, তার মধ্যে অন্যতম হলো বাজেট সহায়তা। এ ছাড়া সংস্কারের বিষয়ে সরকার মোটামুটি পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংক খাতসহ অন্যান্য খাতে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে কিছু সময় লাগবে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, সম্পদের ঘাটতি (রিসোর্স গ্যাপ) কতটা আছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরও বিশদ আলোচনা হবে।

নীতি ও মূল উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গেও আলোচনা করবে। বিদেশী মুদ্রার বাজার ও ব্যাংক খাত সংস্কারে কী করতে হবে, সেটাও জানাবে আইএমএফ। তারা এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করবে। উপদেষ্টা আরও বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের দল আছে। বিশদ আলাপ করে তারা নিজস্ব চিন্তার বিষয়ে জানাবে। তারপর অক্টোবর মাসে আমরা বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় যাব, সেখানে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা হবে।

বর্তমান ঋণ কর্মসূচি নিয়েও আলাপ হবে। ভবিষ্যতের জন্যও আমরা কিছু অনুরোধ করেছি। আইএমএফের কাছে কী চেয়েছেনÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন বলেন, কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ব্যাংক খাত সংস্কার, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, কর ব্যবস্থাপনা, আয়কর ও ভ্যাট সংস্কারের জন্য। 
শুধু আইএমএফ নয়, অন্যদের কাছেও সহায়তা চাওয়া হয়েছে। কারা কী সাহায্য করবে, সেটা সমন্বয় করে আইএমএফকে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হবে। তাদের কাছ থেকে কী সাহায্য দরকার, তাও বলা হবে। আইএমএফের প্রতিনিধি দল সোমবার ঢাকায় এসেছে। উল্লেখ্য, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং অতিরিক্ত তহবিলের বিধানসহ সম্ভাব্য সংস্কার অনুসন্ধানের জন্য সপ্তাহব্যাপী সফরে এসেছেন আইএমএফ মিশন চিফ ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।

মঙ্গলবার সংস্থাটির প্রতিনিধিরা প্রথম বৈঠক করেছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে প্রতিনিধি দলটি। আইএমএফ প্রতিনিধি দলের এই সফরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জোরদার এবং সামগ্রিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বিষয়ের ওপর আলোকপাত কর হবে।

এ ছাড়া আইএমএফের প্রতিনিধি দল উচ্চ ভর্তুকি ব্যয়, ক্রমবর্ধমান মূল্যাস্ফীতির চাপ ও সরকারি ব্যয়ে সম্ভাব্য কর্তনের খাতগুলোসহ দেশের আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা করবে। চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের পাশাপাশি বাজেট সহায়তার জন্য সরকার এরই মধ্যে আইএমএফের কাছে আরও ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছে। জানা গেছে, নতুন ঋণ প্যাকেজের সঙ্গে নতুন নতুন শর্ত যুক্ত থাকবে। এবারে শর্ত হিসেবে তারা গুরুত্ব দেবে কর ব্যবস্থাপনা, ঋণ ব্যবস্থাপনা ও ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার সংস্কারে।

×