বিএসইসি কমিশনার ড. এটিএম তারিকুজ্জামান
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. এটিএম তারিকুজ্জামান গত সপ্তাহে পদত্যাগ করানোর অভিযোগ সবখানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তারিকুজ্জামান বর্তমান বিএসইসির কমিশনারদের মধ্যে মেধাবী এবং সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ছিলেন। তারপরেও তাঁকে প্রথমে অব্যাহতি ও পরে দপ্তরবিহীন বা এক রকম ওএসডি করে পদত্যাগে বাধ্য করে তাৎক্ষণিক বিদায় করানো হয়েছে। যার পেছনে হাত রয়েছে খোদ বিএসইসির সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তির বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এতে আড়ালে থেকে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে স্বৈরশাসক আওয়ামীলীগের অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগকারী অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব।
রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মলেনে আলোচনায় উঠে আসে সদ্য পদত্যাগী কমিশনার তারিকুজ্জামানের বিষয়টি। যাকে মেধাবী হিসেবে আখ্যা এবং পদত্যাগে বাধ্য করানোর কারন জানতে চায় সাংবাদিকেরা। ড. এটিএম তারিকুজ্জামান ২৫ বছরেরও অধিক সময় শেয়ারবাজারের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন ব্যক্তিত্ব। কমিশনার হিসেবে গত ২০ মে যোগ দেওয়ার আগে তিনি দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ডিএসইতে যোগদানের আগে তিনি বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যে প্রতিষ্ঠানে তিনি ১৯৯৭ সালে যোগদান করেছিলেন।
এমন একজন অভিজ্ঞ কমিশনারকে অতিরিক্ত সচিবের রোষানলে পড়ে পদত্যাগে বাধ্য করেন বিএসইসির শীর্ষ কর্তাব্যক্তি। এই কারণে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হলেও বেশিরভাগ সময়জুড়েই ছিল তারিকুজ্জামানের পদত্যাগে বাধ্য করানো ইস্যু।
এ বিষয়ে এক মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা বলেন, বিএসইসিতে অন্তর্বতীকালীন সরকার ঠিকভাবে সংস্কার করতে পারেনি। এখানে যোগ্য চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ দিতে পারেনি। এটা কিন্তু শেয়ারবাজারের সব স্টেকহোল্ডারদের কথা। কোথাও এমন কাউকে পাবেন না, যে বর্তমান কমিশনকে যোগ্য বলবে। এরমধ্যে আবার যে একজন মেধাবী ও যোগ্য কমিশনার ছিল, তাকে ষড়যন্ত্র করে তাড়ানো হয়েছে। যেখানে কমিশনারকে ষড়যন্ত্র করে সরানো হয় এবং শীর্ষকর্তা তাতে জড়িত থাকে, সেই কমিশনের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা বোকামি। তাই এই কমিশনকে পূনরায় ঢেলে সাজাতে হবে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর তারিকুজ্জামানকে ৩ মাস বা ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়ে অব্যাহতি দেয় সরকার। তবে ৩ মাস শেষ হওয়ার আগেই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর তারিকুজ্জামান নিজে থেকে পদত্যাগ করেন। কারণ ১১ সেপ্টেম্বর অব্যাহতির পরেও বিএসইসি চেয়ারম্যান ১৫ সেপ্টেম্বর তারিকুজ্জামানকে দপ্তরবিহীন করে অফিস আদেশ জারি করে।
একজন অতিরিক্ত সচিব বিএসইসির কমিশনার অন্তর্বতীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টার নাম ভাঙ্গিয়ে বিএসইসি কমিশনার ড. তারিকুজ্জামানকে পদত্যাগে চাপ দেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর বিকালে ফোন করে তিনি ড. তারিকুজ্জামানকে পদত্যাগ করতে বলেন। এ সময় তিনি বলেন, উপদেষ্টা তাকে দ্রুত ইমেইলে পদত্যাগপত্র পাঠাতে বলেছেন। কিন্তু অর্থ উপদেষ্টার দপ্তর সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে, এ ধরনের কথা তিনি বলেননি।
এছাড়াও কমিশনার তারিকুজ্জামানের পদত্যাগ চেয়ে অর্থ উপদেষ্টার কাছে শিক্ষার্থীদের নাম করে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে কারও স্বাক্ষর নেই। যে ছাত্রদেরকে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠে।
এসবের কারনেই রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে প্রশ্ন রাখেন, মন্ত্রণালয় ৩ মাস সময় দিয়েছিল, তারপরেও উনাকে (তারিকুজ্জামান) তাড়ানোর জন্য আপনাদের তাড়াহুড়া কিসের ছিল, বিএসইসিরতো একটি সত্তা আছে, উনাকে কি মন্ত্রণালয় দপ্তরবিহীন করার আদেশ দিয়েছিল- এসব প্রশ্নের জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এটা আমাদের পর্যায়ে না। উনাকে কি মন্ত্রণালয় দপ্তরবিহীন করার আদেশ দিয়েছিল জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এটার তো এভাবে উত্তর হয় না।
এক সাংবাদিক প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকার তাকে তিন মাসের সময় দিল কিন্তু আপনারা তাকে ডেকে নিয়ে কেনো পদত্যাগে বাধ্য করলেন। আমরা শুধু এটা জানতে চাই। জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এটা সরাসরি সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হয়েছে।
এরপরে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, তাহলে এতোদিন ধরে যে শুনে আসছিলাম বিএসইসি স্বাধীন, সেটা কি তাহলে না- জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, যে জায়গাটায় স্বাধীনভাবে কাজ করা দরকার, সে সব জায়গায় স্বাধীনতা প্রয়োগ করব। এর আলোকে দেশ রুপান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার আলতাফ মাসুদ বলেন, কিন্তু আপনিতো (বিএসইসি চেয়ারম্যান) বিএসইসির স্বাধীন সত্ত্বা বজায় রাখতে পারছেন না।
এরপরে বিএসইসি বলেন, আপনারা যে জিনিসটা বুঝতে চাচ্ছেন না, সেটা হলো কমিশনার নিয়োগ কিন্তু আমরা দেই না। সেখান থেকেই বাতিলও করা হয়। তাহলে সরকার অব্যাহতি দিয়ে ৩ মাস সময় দেওয়ার পরেও কেনো দপ্তরবিহীন এবং পদত্যাগে বাধ্য করা হলো-এমন প্রশ্নে বিএসইসি চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, আজকের এই প্রোগ্রামটা কি একজনকে (তারিকুজ্জামান) কেন্দ্র করে?
এরপরে সাংবাদিকরা বলেন, আপনাকেতো একাধিক প্রশ্ন করা হয়েছে। কিন্তু কোনটারই জবাব দিচ্ছেন না। যে এক অতিরিক্ত সচিব বিএসইসির কমিশনার নিয়োগ দেয় ও বাতিল বলে, তাকে কেনো ডিএসইর পর্ষদে রাখা হলো- এমন প্রশ্নও ছিল বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে। এছাড়া সরকার তারিকুজ্জামানের মতো মেধাবী কমিশনারকে অব্যাহতি দেওয়া নিয়ে আপনি (বিএসইসি চেয়ারম্যান) কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা, বিএসইসিতে স্বৈরাচারীতা কেনো ইত্যাদি প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
অপূর্ব