ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

নতুন ৩শ’ কোটি ডলার ঋণ

আইএমএফ প্রতিনিধি দল আসছে ৩০ সেপ্টেম্বর

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০০:৫৯, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আইএমএফ প্রতিনিধি দল আসছে ৩০ সেপ্টেম্বর

প্রতিনিধি দলটি ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা সফর করবে

নতুন করে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার পর্যালোচনা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধি দল আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসছে। প্রতিনিধি দলটি ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা সফর করবে। ছয় দিনের এ সফরে ঢাকায় অবস্থানকালে ঋণের বিষয়ে সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করবে প্রতিনিধি দলটি। অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইএমএফ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কার্যক্রম চলমান, যার শর্ত পূরণে সংস্কার কার্যক্রম চলছে। তিন কিস্তিতে এ পর্যন্ত ২৩০ কোটি ৮২ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাকি অর্থ আরও চার কিস্তিতে পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে নতুন করে আরও ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা চেয়েছে।

দেশের পরিবর্তিত অবস্থায় অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে গত ২৯ আগস্ট আইএমএফের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ওই বৈঠকেই চলমান ঋণ বাড়ানোর প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।  
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এ সময় অর্থের বিকল্প নেই বলেও মত বিশ্লেষকদের। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, এগুলো যেন বাণিজ্যিক ঋণ না হয়, কেননা সরকার বাণিজ্যিক ঋণ নেওয়ার পরিস্থিতিতে নেই। ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের একটি কাঠামোতে আমরা ঢুকেছি। যত সহজ শর্তই হোক, ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের কাঠামোটা ভালো অবস্থায় নেই। বরং এটি একটি দুষ্টু চক্রের ইঙ্গিত দেয়।

অন্যদিকে নতুন ঋণের জন্য আর্থিক খাতের দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে চায় আইএমএফ। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক খাতের সংস্কার উদ্যোগকে গুরুত্ব দেয় আইএমএফ। এক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের সুশাসন, রাজস্ব খাতের অটোমেশন, পুঁজিবাজারে স্বস্তি, বিনিয়োগ পরিবেশ, অর্থের ব্যবহারসহ নানাদিক গুরুত্ব পায়। ঋণের অঙ্ক বাড়লে পরিশোধেও বাড়বে চাপ। কিন্তু এই সময়ে অর্থের বিকল্প নেই।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, আইএমএফের নীতির সঙ্গে প্রো-বিজনেস, প্রো-রিফর্মের এক ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এক মাসের মধ্যে ব্যাপক ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় বেশকিছু ইতিবাচক সংস্কার করার চেষ্টা করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংকগুলোকে সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া এবং একই সঙ্গে এনবিআরের  সংস্কার আমরা দেখতে পাচ্ছি। রাজস্ব খাতে সংস্কার উদ্যোগ হাতে নেওয়া গেলে বাড়ানো সম্ভব অভ্যন্তরীণ আয়।  

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আইএমএফ আফ্রিকার কয়েকটি দেশকে নিয়ে যেটা করেছে, সেভাবে কর প্রশাসনকে যদি শক্তিশালী করা যায়, সেভাবে অটোমেশন করা গেলে জিডিপির ২-৩ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধি করা সম্ভব।
এর আগে ওয়াশিংটনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে আইএমএফের যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক জুলি কোজ্যাক বলেন, আইএমএফের পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং স্টাফ মিশন হিসেবে এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে। মিশনটি বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য অর্থায়ন চাহিদা পর্যালোচনা করবে।  
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে এবং আইএমএফ কর্মসূচির আওতায় দেশটির জনগণকে সহায়তা করতে আমরা সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কার এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কার্যক্রম অব্যাহত রাখব।
বাংলাদেশের জন্য বর্তমানে চলমান আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি গত বছরের (২০২৩) জানুয়ারিতে সংস্থাটি এই ঋণের অনুমোদন দেয়। ইতোমধ্যে ওই ঋণের তিনটি কিস্তি ছাড় দিয়েছে এই সংস্থাটি। 
বাংলাদেশ তৃতীয় কিস্তিতে পেয়েছে ১১৫ কোটি ডলার। তৃতীয় কিস্তির অর্থ নিয়ে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ তিন কিস্তিতে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর গত ডিসেম্বরে পেয়েছিল দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। বাংলাদেশের ঋণ আবেদনের ছয় মাস পর সংস্থাটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। আইএমএফ জানায়, শর্তপূরণ সাপেক্ষে ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাত কিস্তিতে ঋণের এ অর্থ দেওয়া হবে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা ওইদিন এক ভিডিওবার্তায় জানান, ‘সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ২৪.৩ বিলিয়ন ডলার। এটি  আইএএফ-এর বিপিএম-৬ ক্যালকুলেশন স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বিপিএম-৬ পরিমাপ অনুযায়ী নেট রিজার্ভ হিসাব করা হয়। মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বিয়োগ করলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফ-এর ঋণ অনুমোদনের পর জুলাই ২০২৩ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে।
রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ছে উল্লেখ করে মুখপাত্র শিখা বলেন, ‘রেমিটেন্স বাড়ছে বলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। রিজার্ভে গত অর্থবছরের তুলনায় এই অর্থবছরে ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।’ 
তিনি বলেন, ‘আগস্ট ও জুলাই মাসের প্রবৃদ্ধি একত্রে বিবেচনা করলে এটি প্রায় ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন সচল করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো চাইলে নিজেরা নিজেদের মধ্যে লেনদেন করতে পারে এবং বিনিময় হার হবে বাজারভিত্তিক।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ডলারের দাম ১১৮-১২০ টাকা। ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দামের সঙ্গে খোলা বাজার মূল্যের সঙ্গে পার্থক্য এখন মাত্র ১ শতাংশেরও কম। আমরা বিশ্বাস করি সক্রিয় আন্তঃব্যাংক লেনদেন বজায় থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার বা ডলারের দাম স্থিতিশীল হবে।’

×