ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

যে কারণে বাদ পড়লেন রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের এমডি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যে কারণে বাদ পড়লেন রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের এমডি

যে কারণে বাদ পড়লেন রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের এমডি

ব্যাংক খাতের সংস্কারের অংশ হিসেবে এবার একই দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচলককে অপসারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়োগ বাতিল করে পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে।

তিন বছর মেয়াদে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে তিন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাত্র এক বছর অতিক্রম করেছেন দায়িত্বে। অবশ্য শনিবার রাত পর্যন্ত এই ছয় ব্যাংকে নতুন কোনো এমডি নিয়োগ করার খবর আসেনি। নতুন নিয়োগের আগ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিয়ে চলবে ব্যাংকগুলো।
ব্যাংক খাতের কর্মকর্তারা বলছেন, আজ রবিবার নাগাদ এসব পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তুতি রেখেছে সরকার। নতুন কাউকে না পেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানরা।
গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংকগুলো বরাবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অফিস সময়ের পরে নিয়োগ বাতিলের চিঠি পান তারা। প্রায় দেড় মাস সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নর, দুই ডেপুটি গভর্নর পদে নতুন মুখ নিয়ে আসে। বেসরকারি দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার পর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিষয়ে সর্বশেষ এই সিদ্ধান্ত এল। চিঠি পেয়ে সোনালী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা সহকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে বিদায় নেন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়োগ দেয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।

বাংলাদেশ ব্যাংক তা অনুমোদন করলে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ হয়। আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়োগ দেওয়ার কাগুজে ক্ষমতা অর্থ মন্ত্রণালয়ের। তবে সরকারের ইচ্ছায় অর্থ মন্ত্রণালয় তা বাস্তায়ন করে। চুক্তি বাতিল করা-সংক্রান্ত সব প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পরিচালনা পর্ষদের সম্পাদিত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিলের জন্য সরকারের সুপারিশ-সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো।

ব্যাংক কোম্পানি আইন ও পরিচালনা পর্ষদের সম্পাদিত চুক্তিপত্র অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিলের বিষয়ে পরবর্তী বিধিগত কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

কার কত মেয়াদ বাকি ছিল ॥ সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা-সিইও হিসেবে ২০২২ সালের আগস্টে আফজাল করিমকে নিয়োগ দিয়েছিল আগের সরকার। তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়ায় এ পদে এখনো ২৩ মাস মেয়াদ ছিল তার। সোনালী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে আফজাল করিমকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। সেখান থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তাকে ফের সোনালী ব্যাংকে আনে আওয়ামী লীগ সরকার।

২০২২ সালের আগস্টে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডে তিন বছরের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা-সিইও হিসেবে যোগ দেন মুরশেদুল কবীর। তারও ২৩ মাস চুক্তির মেয়াদ ছিল। অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডে যোগদানের আগে সোনালী ও জনতা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন কবীর। ২০২২ সালে আগস্টে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে রূপালী ব্যাংকেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

১৯৯০ সালে তিনি ব্যাংকটিতে অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। আর গত ২০২৩ সালের মে মাসে জনতা ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান আব্দুল জব্বার। তিন বছরের মধ্যে মাত্র সাড়ে ১৬ মাস দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেলেন তিনি।

বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আনিসুর রহমানকে প্রথমবার নিয়োগ দেওয়া হয় ২০২১ সালের এপ্রিলে। তিন বছরের মেয়াদ শেষ হলে চলতি বছরের মে মাসে দ্বিতীয়বারের মতো বেসিক ব্যাংকে আনিসুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেয়ে মাত্র সাড়ে চার মাস দায়িত্ব পালন করার সময় পেলেন। বেসিক ব্যাংকে যোগদানের আগে অগ্রণী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন তিনি।
২০২২ সালের নভেম্বরের মাঝামঝি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি (সাবেক বিডিবিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হন হাবিবুর রহমান গাজী। মেয়াদ পূরণ হতে আরও আট মাসের মতো সময় অবশিষ্ট ছিল তার।

×