নরসিংদী পৌর মাঠে নারী উদ্যোক্তাদের হাটে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন এক নারী। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
টেবিল বাণিজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে নরসিংদীর নারী উদ্যোক্তা হাট। আগে সপ্তাহে একদিন বসত এই নারী উদ্যোক্তাদের হাট। এখন দুই গ্রুপে বিভক্তি হওয়ার কারণে সপ্তাহে দুই দিন বসছে উদ্যোক্তারা। আগে শুধু শনিবার সপ্তাহে একদিন সম্মিলিতভাবে উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যের পসরা নিয়ে এই হাটে বসত। এখন এক গ্রুপ বসছে শুক্রবার ও অন্য গ্রুপ বসছে শনিবার। মূলত টেবিলের বাড়তি ভাড়ার কারণে এই বিভক্তি।
উদ্যোক্তাদের মধ্যে কেউ কেউ খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন দায়িত্বে থাকা সাবরিনা সরকার ও আয়েশা আক্তার পলি ডেকোরেটরকে টেবিল ভাড়া দেয় মূলত ১৫০ টাকা। কিন্তু হাটে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে এই দুইজন টেবিল ভাড়া নেয় কখনো ৫০০ টাকা, কখনো ৩০০ টাকা, আবার কখনো ২৩০ টাকা। এই বাড়তি টাকা নেওয়ার কারণে সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্ব।
অভিযুক্তদের বক্তব্য:
অভিযুক্তরা হচ্ছেন- সাবরিনা সরকার ও আয়েশা আক্তার পলি। এই দুইজন হচ্ছেন- ‘নরসিংদী জেলা নারী উদ্যোক্তা মেলা’র ফেসবুক পেজের এডমিন। কেউ তাদের মতের বাইরে মত প্রকাশ করলে পেজ থেকে বের করে দেন। অনিয়ম-অর্থ কারচুপির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তারা জানান, আমরা উদ্যোক্তাদের স্বার্থ বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিই।
অভিযুক্ত সাবরিনা সরকার বলেন, আমরা বাড়তি টাকা নিচ্ছি। এখন টেবিল খরচ ২৩০ টাকা নেওয়া হলেও মূলত ডেকোরেটরকে দেওয়া হয় ১৬০ টাকা। বাকি টাকা উদ্যোক্তাদের উঠান বৈঠক, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য খাতে খরচ করা হয়। একপক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি জেলা প্রশাসনের কাছে গিয়েছি। তবে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এই প্রতিবেদকের কাছে ওই একই ডেকোরেটর চেয়ার-টেবিল ভাড়া বাবদ ১৫০ টাকা চেয়েছে। এ কথা বলার পর গ্রাম পর্যায়ে নারীদের নিয়ে কাজ করছেন- বলে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেছেন।আরেক অভিযুক্ত আয়েশা আক্তার পলি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের হাট বিশাল একটি প্ল্যাটফর্ম। আমাদের মধ্যে যে সমস্যা হচ্ছে- তা নিয়ে রবিবার (১৫ আগস্ট) জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। ব্যাপারটা সুরাহার পর নিউজ করার অনুরোধ করেন তিনি। সামনাসামনি কথা বলবেন বলে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেছেন তিনি।
উদ্যোক্তারা অভিযোগ করে বলছেন, প্রতারণা করে দুই উদ্যোক্তা প্রতি মাসে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকার কাছাকাছি। প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক উদ্যোক্তা গুটিয়ে নিয়েছেন নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তবে ১৬ আগস্ট দুপুরে জায়দা সরকার লাকি নামে একজন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেছেন, ‘নরসিংদী জেলা নারী উদ্যোক্তাদের মেলা’ গ্রুপের ২৬ সপ্তাহের আয়-ব্যয় হিসাব হলো ৭ লাখ টাকা। ঘাটতি হলো ১৯ হাজার ৫৫১ টাকা। উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ বলছেন, এই হিসাব তো আগে দেখাইনি। এখন কী ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চায়’।
ঘটনাটি ঘিরে বিভাজন তৈরি হয়েছে উদ্যোক্তাদের মাঝে। দুই ভাগে ভাগ হয়েছেন উদ্যোক্তারা। এছাড়া, কোনো প্রকার ইজারা ছাড়া বছর জুড়ে সরকারি জায়গায় উদ্যোক্তাদের পণ্যের নিয়মিত হাট বসছে। এতে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকেও।
জানা গেছে, নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন পৌর মাঠে প্রতি শনিবার বিকেলে জেলার ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বসে নারী উদ্যোক্তাদের হাট কিংবা মেলা। মেলায় ক্যালিগ্রাফি, পাটের তৈরি পণ্য, শাড়ি কাপড়, থ্রি পিস ও নানাবিধ পিঠাসহ অন্যান্য খাবার কেনাবেচা চলে বিকেল থেকে সন্ধ্যা অব্দি। ২০২৩ এর এপ্রিল থেকে জেলার ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের বিনামূল্যে পৌর পার্কের স্থানটি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করার অনুমতি দেয় নরসিংদী পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।তারপর, উদ্যোক্তাদের দুইজন এডমিনের মাধ্যমে ডেকোরেটর থেকে চেয়ার টেবিল এনে অস্থায়ী দোকান নিয়ে চালাতে থাকে প্রতি সপ্তাহের হাট। অনুমতির পর তৎকালীন পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চু একাধিকবার মেলা পরিদর্শন করেন। প্রায় ১০০ উদ্যোক্তা নিয়ে শুরু করা এই মেলায় ছয় মাসের মাথায় উদ্যোক্তার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ শ এর বেশি।
বছর ঘুরতেই বেরিয়ে আসে থলের বেড়াল। অভিযোগের পাহাড় নারী উদ্যোক্তা গ্রুপের দুই এডমিন সাবরিনা সরকার এবং এবং আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে। সাধারণ উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, দুই এডমিন প্রতি টেবিল ও টেবিলের সঙ্গে দুইটি চেয়ার ভাড়া বাবদ একেক সময় একেক মূল্য নিচ্ছেন মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে। মেলা শুরুর পর থেকে এখন অব্দি বিভিন্ন সময় নেয়া হচ্ছে প্রতি চেয়ার-টেবিল ভাড়া বাবদ ২৩০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
সাধারণ উদ্যোক্তাদের অভিযোগ:
ডেকোরেটর থেকে আনা মাত্র ১৫০ টাকার টেবিল ভাড়া নেয়া হচ্ছে কখনো দ্বিগুণ কখনো বা তিনগুণের বেশি। বাড়তি টাকা নেয়ার বিষয়ে কেউ কথা বলতে গেলেই উদ্যোক্তা হাটের ফেসবুক পেজ ‘নরসিংদী জেলা নারী উদ্যোক্তাদের মেলা’থেকে বের করে দেয়া হয় নানা অপবাদ দিয়ে। বাড়তি টেবিল ভাড়া দিতে না পেরে অনেকেই ছেড়েছেন মেলা প্রাঙ্গণ।
এই টেবিল চেয়ারের বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে টেবিল-চেয়ার সরবারাহকারীর কথোপকথনে। মেলায় টেবিল সরবরাহ করেন ইয়াসিন মিয়া নামে এক ডেকোরেটর ব্যবসায়ী। সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে মুঠোফোনে কথা হয় তার সঙ্গে। নারী উদ্যোক্তা হাটের মতো একই হাট করা হবে এবং একই পরিমাণ টেবিল-চেয়ার নেয়া হবে একদিনের জন্য- এমন কথার পর ওই ডেকোরেটর ব্যবসায়ী বলেন, ১৫০ টাকার মধ্যে ১টি টেবিল ও দুইটি চেয়ার সেটাপ করে দেয়া যাবে।
টেবিল চেয়ার ভাড়া ও বাড়তি টাকা নেয়ার দ্বন্দ্বের জেরে বিভক্ত হয়ে বেশ কিছু সাধারণ উদ্যোক্তা বয়কট করেছেন শনিবারের হাট প্রাঙ্গণ । অন্তত ৫০ জন নারী উদ্যোক্তা মিলে একই স্থানে আরেকটি হাট করছেন শুক্রবার। সেখানে টেবিল ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা করেই। সালমা বেগম নামে ভুক্তভোগী এক নারী উদ্যোক্তা বলেন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বিনামূল্যে এখানে মেলা করতে দিয়েছে। টেবিল-চেয়ার খরচ ছাড়া আমাদের বাড়তি কোনো খরচ নেই। ডেকোরেটর থেকে আনা ১৫০ টাকার টেবিল সাধারণ উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে রাখা হচ্ছে ২৩০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এখানকার একজন উদ্যোক্তার গড় পুঁজি পাঁচ হাজার টাকার মতো। মেলার দিনে কেউ ২ হাজার টাকা বিক্রি করে, কেউ ৫ শ টাকাও বিক্রি করতে পারে না।
বিক্রির পর হিসেব আসবে মুনাফার। বিক্রিই যদি এতো কম হয় টেবিল খরচ দিয়ে তো পোষাচ্ছে না উদ্যোক্তাদের। আর বাড়তি টাকা নিচ্ছে দুই এডমিন সাবরিনা সরকার এবং আয়েশা আক্তার। আমরা বাধ্য হয়ে শনিবারের মেলাকে বয়কট করেছি। গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে শুক্রবারে একটি মেলা করার চেষ্টা করছি।
ফারজানা সুমি নামে আরেক নারী উদ্যোক্তা বলেন, বাড়তি টেবিল ভাড়ার ভার সইতে না পেরে আমি প্রতিবাদ করেছি। প্রতিবাদ করায় আমাকে নানা অজুহাতে গ্রুপ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। আমার তৈরিকৃত পণ্য নিয়ে আমি এখন মেলায় বসতে পারছি না। এ রকম অন্তত অর্ধশত উদ্যোক্তা মেলা প্রাঙ্গণ ছেড়েছে। সাবরিনা সরকার ও আয়েশা আক্তার, দুজনেই সবকিছুর মূল হোতা।ফেসবুক পেইজ ‘শখের জিনিস’ এর উদ্যোক্তা খান রুবা বলেন, নারীবান্ধব উদ্যোক্তা মেলা নারীদের জন্য দারুণ একটি উদ্যোগ। কিন্তু বর্তমানে সমন্বয়হীনতা ও দলাদলির কারণে সব নারী উদ্যোক্তারা বিব্রত বোধ করছে। আলোচনার মাধ্যমেই সবার বিষয়টি সমাধান হওয়া যুক্তিক।
তিনি আরও বলেন, দখলদারি নীতি পরিবর্তন করতে হবে। একজন দখলদার চলে গেছে আরেক জন এসে দখল করবে- এমন নীতি পরিবর্তন করার সময় এখন। জনসাধারণকে আওয়াজ তুলতে হবে। এইসব দখলদারি ব্যবস্থা মূল থেকে তুলে ফেলে দিতে হবে। আমাদের সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করতে হলে দখলদারি ব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়ে আসা জরুরি। কিছু সুবিধাবাদী লোক যাতে প্রভু না হয়ে উঠে-সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, আমাদের বিপ্লবী চিত্তের অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে রাখতে হবে। কোনো ভাবে কোনো দখলদারিদের হাতে পুতুল হয়ে থাকা যাবে না। বিভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে দখলদারিরা শক্তি প্রয়োগ করতে চাইবে কিন্তু আমাদের এই সকল দখলদারদের প্রতিরোধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা প্রতিবাদী জনতা কোনো শক্তির কাছে আমরা মাথা নত করবো না।
শনিবারের মেলা থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার আমরা ভোক্তভোগী। আমরা চাই মেলা হোক। নির্দিষ্ট একটা ফ্রি নেওয়া হোক। মেলায় ৩০০ টাকা স্টল ফ্রি নেওয়া হতো। শুক্রবারের মেলা ১৭০টা স্টল ফ্রি নেওয়া হয়। শুকবারের মেলায় ডেকোরেশন খরচ ১৫০ টাকা।
হাটে প্রায় দ্বিগুণ টেবিল ভাড়া দিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন একাধিক নারী উদ্যোক্তা বলেন, ভয়ে আমরা প্রতিবাদ করতে পারছি না। প্রতিবাদ করলেই কোনো মেলাতে বসতে দেয়া হবে না। আমাদের স্বপ্ন থেমে যাবে। তাই নামমাত্র মুনাফা নিয়ে টিকে আছি। ১৫০ টাকায় ডেকোরেটর থেকে আনা টেবিল ভাড়া আমাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ২৩০ থেকে ৫০০ টাকা। বাড়তি টাকা কোথায় যায় সে বিষয়ে আমরা স্পষ্ট নই। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে দুই এডমিন সাবরিনা ও আয়েশার। তারা প্রভাবশালীদের দাপট দেখায়।
ভুক্তভোগী নারী উদ্যোক্তাদের দেয়া তথ্য বলছে, নারী উদ্যোক্তা হাটে ভাসমান স্টলের সংখ্যা অন্তত ১ শ। মেলার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অর্ধলাখ টাকার বেশি। সেই হিসেবে এই মাঠে মেলা শুরুর পর থেকে গত ১৭ মাসে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বাড়তি যেই টাকা নেয়া হয়েছে তার পরিমাণ ১০ লাখের কাছাকাছি।
নাম প্রকাশ করতে চান না এই রকম আরেকজন উদ্যোক্তা বলেন, বাকি টাকা কোথায় কীভাবে খরচ হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে আমাদেরকে কোন কিছুই বলা হচ্ছে না। আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় যে বাড়তি টাকা নেয়া হয়েছে সেটির মধ্যে কত টাকা কোন খাতের জন্য নেয়া হয়েছে তা কিছুই বলেননি। শুধু টেবিল ভাড়ার জন্যই আমরা টাকা দিয়েছি।প্রান্তিস সিক্রেটের মালিক সাদিয়া প্রান্তি বলেন, পৌরপার্কে সপ্তাহে দুইদিন বিভিন্ন গ্রুপিং এবং টেবিল বাণিজ্যসহ অনেক অনিয়মের জন্য উদ্যোক্তাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও আমি হাটে স্টল নেইনি। তারপরও দূর থেকে তাদের সব কর্মকাণ্ড ফলো করি। দ্রুতই সকল অনিয়ম ও গ্রুপিং বাদ দিয়ে সুন্দর পরিবেশে এক ছাদের নিচে সকলে হাট করবে- সেটাই আমার প্রত্যাশা। এসবের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পুরো নরসিংদী জুড়ে।
পৌর কর্তৃপক্ষের ভাষ্য:
পৌর মেয়রের অবর্তমানে নরসিংদী পৌরসভার দায়িত্বে রয়েছেন জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মৌসুমি সরকার রাখী। তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে ভিতরে ভিতরে গ্রুপিং চলছে- এটা আমি জানতাম না। মূলত গ্রুপিংয়ের কারণে সমস্যাটা তৈরি হয়েছে। নারী উদ্যোক্তারা আমাদের কাছে এসেছিল। আমরা সমাধানের পথ খুঁজছি। বিষয়টা নিয়ে শিগগিরই বসব। পৌরসভার জায়গায় ইজারা ছাড়া হাট বসা কতটুকু যৌক্তিক তাও খতিয়ে দেখবো। পৌরপার্কে দুইদিন হাট দেওয়া যায় না। মূলত এটা বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক। নারীদের কর্মসংস্থানের কথা বিবেচনা করেই একদিন হাট বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে পার্কে। তারা যদি নিজেরাই সমস্যা তৈরি করে, তাহলে কীভাবে হয়? এ দায় কী পৌরসভা নিবে? তবে উদ্যোক্তাদের মধ্যে কোনো প্রকার জটিলতার বিষয়ে যদি পৌরসভার ব্যবস্থা নেয়ার থাকে, তবে অবশ্যই পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে।
কী বলছে নাগরিক সমাজ:
নারী উদ্যোক্তাদের হাট নিয়ে যে টেবিল বাণিজ্য হচ্ছে- তা নিয়ে বিব্রতবোধ করছে নরসিংধী বাসী। কেন উদ্যোক্তরা দুই ভাগে বিভক্ত হচ্ছে তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এসব জানতে কথা হয়েছে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। তারা কী বলছে, আমরা জেনে নিই।
স্বপ্নছায়া সামাজিক সেবামূলক সংগঠনের সভাপতি সোহেল আহম্মেদ অপু বলেন, নরসিংদীতে নারী উদ্যোক্তারা বেশ সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন বিগত সমযয়ে। আমরা এর জন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এই নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যেই কয়েকজন নারী আলাদা নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। যেখানে টেবিল ফি নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ নারী উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাদেরকে হয়রানি করা হয়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অন্যায় অবিচার ও টেবিল বাণিজ্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কমিটির মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে নারী উদ্যোক্তাদের হাট জনপ্রিয় ও সফল হবে বলে মনে করি। সেই সঙ্গে প্রকৃত উদ্যোক্তারা লাভবান হবেন।মানব কল্যাণমূলক ফেসবুক সংগঠন ‘আমার নরসিংদী’ এর প্রতিষ্ঠাতা রাসকিন আহমেদ জুয়েল বলেন, যে কোন দেশের উন্নয়নে নারীদের সাবলম্বী করে গড়ে তুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নরসিংদীতে নারীদের সাপ্তাহিক পণ্য প্রদর্শনী হাটটি নারী উন্নয়নের একটি চমৎকার উদ্যোগ। চাঁদাবাজির মতো কোন ঘটনা ঘটে থাকলে তা ন্যাক্কারজনক। ইতিপূর্বে হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
নরসিংদী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও নারী অঙ্গনের সম্পাদক বলেন, আমরা চাই, মেলাটা যেন আবারও পৌর পার্কে আগের মতো বড় পরিসরে হয়। তবে সেটা যেন অবশ্যই টেবিলের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে হয়। এছাড়া, উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব নিরসন করে যেন গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়, সেই দিকটা নিশ্চিত করা জরুরি। সেই সঙ্গে জরুরি নেতৃত্বের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পথ খুঁজে বের করা।
নরসিংদী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক শ্যামল মিয়া বলেন, সরকারি জায়গায় কোনো ইজরা ছাড়া বছর জুড়ে প্রতি সপ্তাহে মেলা বা হাট বসায় সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে৷ এছাড়া, বাড়তি অর্থ নেয়ায় অর্থনৈতিক জটিলতার পাশাপাশি ব্যবস্থাপকীয় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। এসব সমস্যা নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। মেলা বন্ধ নয়, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দুই পক্ষকে এক সঙ্গে এনে সেগুলোর সমাধান অতি জরুরি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নরসিংদী চেম্বার অব কমার্সের একজন পরিচালক বলেন, নরসিংদী নারী উদ্যোক্তাদের গ্রুপের হাট নিয়ে অনাকাঙ্খিত বিভিন্ন ঘটনা ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের নজরে এসেছে। মেলা পরিচালনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আসছে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিচার নিশ্চিত করা হোক। একজন ব্যসায়িক প্রতিনিধি হিসেবে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স উদ্যোক্তাদের পাশে থাকবে।