ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে আর্থিক অনিয়ম

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে নগদের নতুন প্রশাসক, জিডি

প্রকাশিত: ১৮:০০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৮:২০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে নগদের নতুন প্রশাসক, জিডি

নগদ

নগদের উদ্যোক্তা ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগকৃত প্রশাসক এবং তার সহকারীদের কার্যক্রম ব্যাহত করতে নানা তৎপরতার অভিযোগ উঠেছে। তাদের হুমকির মুখে সম্প্রতি থানায় জিডি করতে হয়েছে নগদের নতুন প্রশাসককে। আবার জিডি করার কারণে উল্টো তোপের মুখেও পড়েছে নতুন প্রশাসন। 

অভিযোগ উঠেছে, নতুন প্রশাসকের ওপর নজরদারি করতে তার কক্ষে গোপনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করার মতো ঘটনাও ঘটেছিল। বিষয়টি ধরা পড়ার পর নতুন প্রশাসক নিরাপত্তা নিয়ে আরও আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নগদের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এই সিন্ডিকেটটি বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে আর্থিক খাতে একের পর এক অনিয়ম করেছে। লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করেছে। এককভাবে সরকারি সব ভাতা বিতরণের কাজ কুক্ষিগত করেছে। সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ব্যবসা করেছে। যদিও তাদের সেই অর্থে কোনো মালিকানা ছিল না। এতসব অপরাধ করেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। উল্টো এখনও ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। এটিকে বিস্ময়কর বলব নাকি আমাদের নিয়তি বলব বুঝতে পারছি না।’ 

পরিস্থিতি জটিল পর্যায়ে পৌঁছলে নিরাপত্তা চেয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় জিডি করেছেন নগদের প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার। এ বিষয়ে তিনি  বলেন, ‘আমার কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছিল, তাই জিডি করেছি। আপাতত এর বেশি বলতে চাচ্ছি না।’ কী ধরনের বাধা দেওয়া হচ্ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে ফোন করে বলা হয়েছে, এভাবে করবেন না, ওভাবে করবেন না ইত্যাদি।…এর বেশি বলতে চাই না। আসলে জিডির বিষয়ে আমি কথা বলতে চাচ্ছি না।’ আপনি কি এখনও ভয় পাচ্ছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আর কিছুই বলব না।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘জিডি করার পর পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে তাদের ক্ষমতার উৎস কোথায়, সেটিই আমরা বুঝতে পারছি না।’

নগদের একটি সূত্র বলছে, তানভীর ও তার সহযোগীরা চাইছেন, তাদের অপকর্ম লুকিয়ে রাখতে। এ কারণে তদন্ত ও সংস্কার দুটোতেই বাধা সৃষ্টি করছেন তারা। ভবিষ্যতে কৌশলে বেনামে পুনরায় ‘নগদ’কে হস্তগত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে চক্রটি। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সহায়তা নিতে হচ্ছে তাদের। তবে কারা তাদের সহযোগিতা করছে, তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি সূত্রটি।

বিষয়টি জানতে চাইলে বনানী থানার উপপরিদর্শক ও জিডির তদন্ত কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা মো. সৈকত বলেন, ‘আমি এখনও কাজ শুরু করিনি। আমরা বিষয়টি আদালতের নজরে আনব। কারণ এ ধরনের বিষয়ে আদালতের অনুমতি নিতে হয়। এরপর তদন্তসাপেক্ষে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সরওয়ার বলেন, ‘বিষয়টি অবগত আছি। ডিসিও অবগত আছেন। আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করব।’  

প্রসঙ্গত, ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস পরিচয়ে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু করে নগদ। উদ্বোধনের পর ১০ মাসে এক কোটি গ্রাহক ছাড়ায়। পরের এক কোটি গ্রাহক পেতে সময় লাগে ছয় মাস। দুই কোটি থেকে তিন কোটিতে আসতে সময় লাগে আরও সাত মাস। এরপর আরও দ্রুতগতিতে গ্রাহক বাড়তে থাকে। বর্তমানে এমএফএস প্রতিষ্ঠানটির ৯ কোটি গ্রাহক রয়েছে। নগদের দ্রুতগতির অগ্রযাত্রাকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং গ্রাহকবান্ধব সেবা চালু করার সফল সম্মিলন বলে ব্যাখ্যা করেন তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক। তবে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ার কারণে নগদের গ্রাহক দ্রুত বেড়েছে বলে মনে করেন অনেকে। অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় যেসব ভাতা দেওয়া হয়, সেগুলো নিতে সেবাগ্রহীতাদের বাধ্যতামূলকভাবে নগদ হিসাব খুলতে হয়েছে।

 

রহিম/শহিদ

×