ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

রাঘববোয়ালদের ধরা হবে : অর্থ উপদেষ্টা

বাজার কারসাজি নিয়ন্ত্রণে কঠোর সরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাজার কারসাজি নিয়ন্ত্রণে কঠোর সরকার

অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ

নিত্যপণ্যের বাজারে কারসাজি নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে ফের মন্তব্য করেছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক খাতের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি-গোষ্ঠী তথা রাঘববোয়ালদের ধরতে সরকার কঠোর উদ্যোগ নিচ্ছে।

বিশেষ করে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি, করখেলাপি, অর্থপাচারকারীদের ধরা হবে। পোশাকখাতের চলমান অস্থিরতা দ্রুত কেটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট চালু করার কথাও জানান অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা।  
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে (বিআইজিএম) এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তথা বাজার কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে তা ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা হবে। এটি করতে গিয়ে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত অন্তর্বর্তী সরকার।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চাঁদাবাজি কিংবা সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে কাউকে ছাড়া হবে না। তিনি বলেন, পণ্য সরবরাহের মাঝখানে থাকা বাড়তি হাতগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। 
এ জন্য নিয়মিত বাজার তদারকি করা হবে। তবে পণ্যের উৎপাদনকারীরা যেন ন্যায্যমূল্য পায়, তা দেখা প্রয়োজন। কৃষক যাতে না ঠকেন সেটিও সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম যে একেবারে কমেনি তা কিন্তু নয়। চট করে তো সমাধান হবে না। আস্তে আস্তে কমে আসবে। ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেমন আলু ও পেঁয়াজের শুল্ক কমানো হয়েছে।

শীঘ্রই ভোক্তারা আমদানি শুল্ক কমানোর সুফল পাবেন। এছাড়া দাম শুধু কাওরানবাজারে দেখলে হবে না, অন্য বাজার দেখতে হবে। কাওরান বাজারে চারবার হাতবদল হয় নিত্যপণ্যের। এটা বন্ধ করা হবে। সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের  জবাবে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আর্থিক খাতের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি-গোষ্ঠী তথা রাঘববোয়ালদের ধরতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এসব উদ্যোগ আরও দৃশ্যমান হবে। 
শুধু তাই নয়, রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বড়দের অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এটা প্রাথমিক উদ্যোগ। এরপরে এ নিয়ে তদন্ত হবে। তদন্তে দোষ পেলে অভিযুক্ত হিসেবে তাদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। দ্রুততম সময়ে এসব কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।

সম্প্রতি এক সিদ্ধান্তে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, কালো টাকার বিষয়ে এনবিআর সরাসরি ব্যবস্থা নেবে। যাদেরই অপ্রদর্শিত আয় আছে, তাদের ধরবে। দেশের বিভিন্ন তৈরি পোশাকশিল্প কারখানায় কয়েক দিন ধরে অস্থিরতা চলছে।

এ প্রসঙ্গে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তৈরি পোশাক খাতের অস্থিরতা কমাতে মালিক-শ্রমিকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি উন্নয়নে তারা সবাই সহযোগিতা করছেন। দেশের শিল্পখাতে যে অস্থিরতা চলছে তা অচিরেই কেটে যাবে। তিনি বলেন, আমাদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে ওদের (শ্রমিকদের) কথা শোনা। ওদের মালিকদের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। একা পুলিশ পারবে না। সেনাবাহিনী, বিজিবি মিলে কাজ করছে।

এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্রেড বডির সঙ্গে কথা বলতেছি। কাল ও পরশু আবার কথা হবে। ওরা (অংশীদার) সবাই আসছে। বড় বড় যারা আছে, তাদের যথেষ্ট মেসেজ দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
শিল্পের অস্থিরতায় রাজনৈতিক দলের কোনো ইন্ধন আছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন বলেন, এখানে অনেক রাজনৈতিক দলও সহযোগিতা করছে। ইন্ধন যারা দিচ্ছে তাদেরও দেখা হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই আমাদের সহযোগিতা করছে। 
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটে পারমাণবিক চুল্লি বা পাত্র স্থাপনের কাজ কবে নাগাদ শেষ হতে পারে, এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন বলেন, রূপপুরের টেকনিক্যাল টিমের সঙ্গে দু-একদিনের মধ্যে বসব। ওখানে কিছু অসম্পূর্ণ কাজ আছে। ট্রান্সমিশনের কিছুটা কাজ বাকি আছে। তবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম একটা ইউনিট আগে চালু করা হবে। এ ব্যাপারে কাজ চলছে।

×