ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

সিপিডির সংলাপ

সরকারের অতিরিক্ত ব্যাংক ঋণ অর্থনীতি চেপে ধরেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ১৪ আগস্ট ২০২৪

সরকারের অতিরিক্ত ব্যাংক ঋণ অর্থনীতি চেপে ধরেছে

সরকারের উচ্চমাত্রায় ঋণ দেশের অর্থনীতিকে চেপে ধরেছে বলে দাবি করেছেন (সিপিডি)

সরকারের উচ্চমাত্রায় ঋণ দেশের অর্থনীতিকে চেপে ধরেছে বলে দাবি করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। বুধবার গুলশানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সংলাপের শুরুতে তিনি এ কথা বলেন।

সংলাপে বক্তব্য রাখেন সিপিডির অনারারি ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধে ড. ফাহমিদা বলেন, রাজস্ব আহরণের অপর্যাপ্ততা, সরকারি ব্যয় সংকুলানে ব্যর্থতা, এডিপি বাস্তবায়নে শ্লথগতি, ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের উচ্চমাত্রায় ঋণ দেশের অর্থনীতিকে চেপে ধরেছে।


অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট, রপ্তানি আয়ে ধীরগতি, রেমিটেন্স প্রবাহে মন্থরতা, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে স্থবিরতার মতো সমস্যাগুলোর দ্রুত অবসান করতে হবে। অর্থনীতির গতি আনতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ধস, আমদানিতে ক্রমহ্রাসমান প্রবণতা, টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমস্যাগুলো সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে।
সামাজিক খাত পুনর্গঠনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্বাভাবিক করা, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, শ্রমবাজারের চাহিদা ও দক্ষতার অসামঞ্জস্যতা দূর করার তাগিদ দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, শিক্ষা খাতের পুনর্গঠনের
সঙ্গে কর্মসংস্থান, বিশেষত যুবকর্মসংস্থানের, বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে।
সিপিডির একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, যুব বেকারত্বের পেছনে অপ্রতুল চাকরির সুযোগ, শিক্ষার নি¤œমান এবং দক্ষতার অমিল, উদ্যোক্তা হওয়ার সীমিত সুযোগ, নারী চাকরিপ্রার্থীদের সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সুবিধার অভাবের মতো বিষয়গুলো রয়েছে। এ ছাড়া ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে আসা, অভিজ্ঞতার অযৌক্তিক প্রয়োজনীয়তা, সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা ও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে যুবকদের বড় একটা অংশ বেকার থাকছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য আগামী তিন মাসের ভেতর জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে।
সিপিডির অনারারি ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার সংস্কার কার্যক্রম যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে। অনেকে বিভিন্ন কমিশন করার কথা বলছেন।

কিন্তু মানবাধিকার কমিশন থেকে শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন দেশে রয়েছে। অনেক আইনও আছে। কিন্তু এসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষণের জন্য আলাদা প্ল্যাটফর্ম খুবই প্রয়োজন। 
সংলাপে অংশ নেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বিডি জবসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, সাবেক অর্থসচিব মুসলিম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিজিএমইএর বর্তমান পরিচালক শামস মাহমুদ,  বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম প্রমুখ।

মুসলিম চৌধুরী দাবি করেন, এ সংবিধানে স্বৈরাচারী হওয়ার অনেক উপাদান আছে, এগুলো বাদ দিতে হবে। এগুলো রাজনৈতিক দলের হাতে ছেড়ে দিলে আমরা ব্ল্যাকহোলে পড়ে যাব। তিনি আরও দাবি করেন, ডিক্টেটোরিয়াল উপাদান বাদ দিতে হবে। স্থানীয় সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে আলাদা করতে হবে।

তার বক্তব্যের মাঝেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম মুসলিম চৌধুরীকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি সংবিধানের সংশোধন চাচ্ছেন নাকি নতুন করে লিখতে বলছেন। এ প্রশ্নে বিব্রত হয়ে পড়েন মুসলিম চৌধুরী। জবাবে তিনি বলেন, এ সংবিধান সংশোধন সম্ভব না, এটাকে আবার লিখতে হবে। এর ব্যাখ্যায় সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা তো এ রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়েছি। তার মানে আমাদের সংবিধান এখনো আছে।

এখন এটাকে বাদ দিবে নাকি সংস্কার করবে এটার সিদ্ধান্ত নিতে হবে এ সরকারকে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, এ সরকারকে নতুন করে সংবিধান লিখে যেতে হবে, তারা হয়তো বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। তারা পরবর্তী সরকারের জন্য এ সংবিধান লিখে যেতে হবে যাতে তারা বাস্তবায়ন করতে পারেন।
শামস মাহমুদ বলেন, সব ব্যাংক পরিচালকের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে হবে। তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। তারা পাই পাই করে প্রত্যেকটা টাকার হিসাব দেবেন, তারপর তারা ছাড়া পাবেন। টাকার হিসাব দিয়ে তারা বিদেশ যেতে পারবেন। এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান মুনিমকে ঘুষের সর্দার দাবি করে তিনি বলেন, এ কর্মকর্তা চরম একটা দুর্নীতিবাজ, তিনি কর ব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন। এ চেয়ারম্যান ঘুষের সর্দার।

এ সময় সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আমরা ১৫ বছর পুলিশি রাষ্ট্রে বসবাস করেছিলাম ব্যাংক খাতের ক্ষত অনেক গভীর দাবি করে তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে যা জানেন অর্থনৈতিক লুটপাট আরও বেশি। ব্যাংক নিয়ে হাজারটা রেগুলেশন তৈরির ইতিহাস পৃথিবীর আর কোথাও হয়নি। ৫০ বছরের পরও এখনো ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিতে হয়, এটা লজ্জার।

আমলাতান্ত্রিক পরিবর্তন আনার দাবি করে তিনি বলেন, আমলাতন্ত্রের বড় পরিবর্তন আনতে হবে। তারা জনগণকে দাস হিসেবে মনে করে। তারা সবাইকে বলেন, আমরা যা বলব এর বাইরে কেউ কথা বলতে পারবেন না। এটা আর চলতে পারে না। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, আন্দোলনের প্রথম পর্যায় শেষ হয়েছে। দেশের মানুষ যতদিন চাইবে, ততদিন আমাদের সংস্কার কার্যক্রম চলমান থাকবে।

×