ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

পোশাক খাতে ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২৫ জুলাই ২০২৪

পোশাক খাতে ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে প্রতিদিন পোশাক খাতে ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা

কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে প্রতিদিন পোশাক খাতে ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। এ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত এই পাঁচ দিনে পোশাক খাতে ক্ষতি হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাদের কাছে চলমান সংকটের কথাও তুলে ধরা যায়নি। আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় সময়মতো ক্রেতাদের কার্যাদেশ (অর্ডার) অনুযায়ী পণ্য পৌঁছানো যায়নি।

এমনকি শত শত পণ্যবাহী গাড়ি রাস্তায় পড়ে থাকায় পণ্য জাহাজীকরণ করা যায়নি। অন্যদিকে বন্দর থেকে কাঁচামাল খালাস করা যায়নি। পাঁচদিন এমন অবস্থার পর গত বুধবার থেকে সারাদেশে তৈরি পোশাক কারখানা চালু হয়েছে। কারখানার আইডি কার্ড কার্ফু পাস হিসেবে গণ্য হওয়ায় কাজে যোগ দিতে পেরেছেন শ্রমিকরা। 
বিজিএমইএ নেতারা বলেন, টাকার অঙ্কের এই ক্ষতির চেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে আস্থা ও বিশ^াসের। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তারা বলছেন, বিদেশী ক্রেতাদের কাছে আমাদের আস্থা ও বিশ^াস হারানোর ভয় কাজ করছে। বিদেশী ক্রেতারা মনে করছেন, বাংলাদেশে হঠাৎ হঠাৎ অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়, কার্যাদেশ অনুযায়ী পণ্য পাওয়া যায় না। এ কারণে ক্রেতা হারানোরও ভয় কাজ করছে উদ্যোক্তাদের মধ্যে।

অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম মনে করছেন, পোশাক কারখানায় উৎপাদন ও আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মোট দেশজ উৎপাদনেও (জিডিপিতে)। এ ছাড়াও রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও বড় ধাক্কা আসবে। তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বর্তমান সমস্যার কথা বোঝাতে হবে। পাশাপাশি অর্ডারগুলো যাতে ক্রেতারা বাতিল না করে এটাও বোঝাতে হবে। এ সঙ্গে নতুন নতুন অর্ডার আনার জন্যও চেষ্টা চালাতে হবে।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেন, তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতি ২ হাজার কোটি টাকা। এর চেয়েও বড় ক্ষতি হচ্ছে আমাদের প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা ও নির্ভরতার ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার ফলে আমাদের ভাবমূর্তির যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, তা টাকার অঙ্কে প্রকাশ করা কঠিন। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই দেশের শিল্প খাত নানা সংকটে ধুঁকছে।

এক দিকে শিল্প খাতের উৎপাদন কমছে, অন্যদিকে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। এর ফলে রপ্তানি আয়ও কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শিল্প খাতে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থির মূল্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ শেষ চার মাসে শিল্প খাতে প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমেছে। প্রথম প্রান্তিকে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

যদিও দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ও ১০ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্যানুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। পরের অর্থবছর ২০২১-২২ এ এই হার ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে আসে। তার পরের অর্থবছর ২০২২-২৩ এ নেমে আসে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সাময়িক হিসেবে এই হার ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশে নেমে আসে। ফলে ধারাবাহিকভাবে শিল্পে উৎপাদন কমার চিত্র উঠে এসেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকলেও মে মাসের রপ্তানি আয় কমেছে ১৭ শতাংশের বেশি। এ সময় পোশাক পণ্যের রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩৩৫ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, যা আগের বছরের মে মাসে ছিল ৪০৫ কোটি ৩২ লাখ ডলার।
মে মাসে ওভেন পণ্যের রপ্তানি আয় ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫২ কোটি ৫ লাখ ডলার। গত বছরে আয় হয়েছিল ১৭৪ কোটি ২৯ লাখ ডলার। আর নিট পণ্যের আয় কমেছে ২০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মে মাসে আয় হয়েছিল ১৮৩ কোটি ডলার, যা গত বছরে ছিল ২৩১ কোটি ডলার।
জানতে চাইলে রপ্তানিকারক শিল্প মালিকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুশের্দী বলেন, কারখানা চালু হলেও নির্দিষ্ট সময়ে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছানো কঠিন হবে। এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বন্দর থেকে কাঁচামাল খালাসও পণ্য জাহাজীকরণ। তিনি বলেন, বন্দরে কাঁচামাল পড়ে আছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে কাঁচামাল খালাস করা প্রয়োজন। কারখানাগুলো চালু হয়েছে।

অনেকের কাঁচামাল শেষ হয়ে যাবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাঁচামাল খালাস করতে না পারলে কারখানাগুলো কাঁচামালের সংকটে আবার বন্ধ করে দেবে। অন্যদিকে পণ্য বোঝাই শত শত ট্রাক বন্দর এলাকায় আটকে আছে। এসব ট্রাকের পণ্য জাহাজীকরণ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্যগুলো ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো দরকার। তা না হলে ক্রেতা হারানোর ভয় আছে।

×