ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

ডিএসই অ্যাপ ব্যবহারকারী কমেছে ২৯ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৪০, ২৪ জুলাই ২০২৪

ডিএসই অ্যাপ ব্যবহারকারী কমেছে ২৯ শতাংশ

ডিএসই অ্যাপ ব্যবহারকারী কমেছে ২৯ শতাংশ

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ডিএসইর লেনদেন কমা এবং এই অ্যাপে ফি আরোপের কারণে মোবাইলে অ্যাপ  ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমেছে বলেছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, সদ্য শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডিএসই-ইনভেস্টরের মোবাইল ও ডেস্কটপ সংস্করণের নিবন্ধিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৯০০ জনে। এর আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৪৬ হাজার ৬২২ জন। এক বছরে কমেছে ১৩ হাজার ৭২২ জন বা ২৯ শতাংশ। 
পুঁজিবাজারে দীর্ঘস্থায়ী মন্দা প্রবণতার কারণে গত চার অর্থবছরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। এর আগের অর্থবছর ২০২২-২৩ এ অ্যাপ ব্যবহারকারীর যে সংখ্যা ছিল, কিন্তু বর্তমান ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২২ অর্থবছরের সঙ্গে তুলনা করা হলে ৪০ শতাংশ কম। ২০২২ অর্থবছরে অ্যাপ ব্যবহারকারী ছিল ৭৭ হাজার ৯৪৯ জন।
২০২১-২২ অর্থবছরে নিবন্ধিত মোবাইল অ্যাপস ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৭৭ হাজার ৯৪৯। ২০২০-২১ অর্থবছরে অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজার ৮৯৫। ২০১৯-২০ অর্থবছরে অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৫৩ হাজার ৭৫৪। অ্যাপ চালুর তৃতীয় বছর ২০১৮-১৯ সালে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৪৬ হাজার ২৮৩। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বেশির ভাগ মানুষ ব্রোকার বা প্রতিনিধিদের কাছে ফোন কলের মাধ্যমে লেনদেনের কাজ সম্পন্ন করেন। কিছু অংশ আছে যারা ব্রোকারেজ হাউসে এসেই লেনদেন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তিনি বলেন,  বাজারে যে হতাশাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সামনে বাজার ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
‘তাই শুধু মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা নয়, বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায়, মানুষ বাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, বলেন তিনি।’
এদিকে টার্নওভার বা মোট লেনদেনেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। ২০২৪ অর্থবছরে টার্নওভার আগের বছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ কমে ২১ হাজার ১৫৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ অর্থবছরে অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ২১ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা, যা ২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৮ দশমিক ২৩ শতাংশ কম ছিল।
২০২২ অর্থবছরে টার্নওভার ছিল ৪২ হাজার ৪০১ কোটি টাকা, যা ২০২১ অর্থবছরের ২৮ হাজার ৮০৪ কোটি টাকার তুলনায় ৪৭ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি ছিল।

ডিএসইর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সার্বিক লেনদেন কমে যাওয়ায় মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে শেয়ারের লেনদেন কমেছে। টার্নওভার বাড়লে অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়বে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডিএসইর দৈনিক গড় টার্নওভার আগের বছরের চেয়ে ২২ শতাংশ কমে ৬২১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। 
২০২২-২৩ অর্থবছরে যা ছিল ৭৯২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ৯ মার্চ মোবাইল অ্যাপস সেবা চালু করে ডিএসই। এর ফলে ব্রোকারেজ হাউসে না গিয়ে ঘরে কিংবা অফিস-আদালতে বসে লেনদেনের সুযোগ পান বিনিয়োগকারীরা। দেশের অনেক ব্রোকারেজ ফার্মের নিজস্ব ট্রেডিং অ্যাপ রয়েছে। এ ছাড়া কিছু ফার্ম যৌথভাবে লেনদেনের অ্যাপ তৈরি করেছে। এসব অ্যাপ ব্যবহারের জন্য কোনো চার্জ দিতে হবে না। অ্যাপে লেনদেন চালুর ৭ বছর তিন মাস পর ব্যবহারকারীদের জন্য প্রতি মাসে ১২৫ টাকা করে চার্জ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই।
এরপর গত বছরের ১২ জুলাই ডিএসইর পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত চিঠি স্টক ব্রোকারদের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, ডিএসই মোবাইল অ্যাপের নতুন ব্যবহারকারীকে গত বছরের জুলাই মাস থেকে ১২৫ টাকা মাসিক চার্জ দিতে হবে। তবে যারা আগে থেকেই অ্যাপটি ব্যবহার করছেন তাদেরকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ফি দিতে হবে না। বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারদের অভিযোগ, একদিকে পুঁজিবাজারে মন্দা। 
অন্যদিকে বারবার বলার পরও মোবাইল অ্যাপের সমস্যা সমাধান না হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা নিবন্ধন বাতিল করছেন। প্রতি মাসে ১২৫ টাকা সার্ভিস চার্জ নির্ধারণের ফলে আগামীতে ব্যবহারকারীদের সংখ্যা আরও কমবে।

×