ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

চট্টগ্রামে দুই শতাধিক কারখানায় স্বতঃস্ফূর্ত কাজ শুরু

তৈরি পোশাক খাতের সব কারখানা খুলছে আজ

এম শাহজাহান

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ২৩ জুলাই ২০২৪

তৈরি পোশাক খাতের সব কারখানা খুলছে আজ

তৈরি পোশাক খাতের সব কারখানা খুলছে আজ

চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের সকল কারখানা আজ খুলে দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন পোশাক খাত মালিকরা। এর আগে মঙ্গলবার বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের দুই শতাধিক গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়া হয়। সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শ্রমিকরা কাজ শুরু করায় এ খাতের উদ্যোক্তা, বিদেশী ক্রেতা এবং সর্বোপরি জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

এ ছাড়া মঙ্গলবার রাতে কারখানা খুলে দেওয়ার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন পোশাক খাতের তিন শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমইএ নেতারা। ওই বৈঠকের পরই গার্মেন্টস খাত খুলে দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তবে এ রিপোর্ট লেখার সময় মালিকরা নিজেদের মধ্যে ঘরোয়া বৈঠক করে পোশাক খাত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তারা জানান, বুধবার সকাল থেকে পোশাক খাত খুলে দেওয়া হবে। 
জানা গেছে, চট্টগ্রামের পর এবার সারাদেশের গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ এবং মুন্সীগঞ্জে সকল গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে শিল্পপুুলিশের বিশেষ ইউনিটসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী কারখানা এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে বিশেষ নজর রাখবেন। 
পোশাক খাতের মালিকরা বলছেন, সাধারণ ছুটি তুলে নেওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আজ সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য অফিসের মতো গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ শুরু করবেন। এতে করে উৎপাদনের চাকা আবার ঘুরতে শুরু করবে। এখন আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চাই। ইতোমধ্যে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের দুই শতাধিক কারখানা খুলে দেওয়ার পর সেখানে শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কাজ শুরু করেছেন। এতে সেখানে স্বস্তি ফিরে এসেছে।    
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- স্থবির হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে গেছে শিল্পের উৎপাদনের চাকা। বিশেষ করে দেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক খাত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এ খাতের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, চলমান পরিস্থিতিতে পোশাক খাত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে ১৬ কোটি মার্কিন ডলার যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ওই হিসেবে গত তিনদিনে এখাতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। 
এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি এ খাতের বিদেশী ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। এ ছাড়া চলমান পরিস্থিতিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার কারণে রপ্তানিকৃত পণ্য সময়মতো শিপমেন্ট করা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন গার্মেন্টস মালিকরা। সময়মতো পণ্য শিপমেন্ট এবং ডেলিভারি করা সম্ভব না হলে অর্ডার বাতিল করে বিদেশী ক্রেতারা। আবার কিছু উদ্যোক্তা দ্রুত রপ্তানিকৃতপণ্য শিপমেন্ট ও ডেলিভারির জন্য কার্গো বিমানে পণ্য পাঠানোর উদ্যোগ নিলে তাতে খরচের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হয় মালিকদের।

এ ছাড়া পোশাক খাত বন্ধ থাকলে বিদেশী নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়, যা এ খাতের জন্য বাড়তি চাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দেশের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিযোগী দেশগুলো বিশেষ করে ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলো ক্রেতাদের অর্ডারগুলো নিজেদের দিকে নেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দিক বিচেনায় নিয়ে গার্মেন্টস খাত খুলে দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সভাপতি এসএম মান্নান কচি জনকণ্ঠকে বলেন, চট্টগ্রামের পর এবার আমরা ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, পোশাক খাত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি অফিস চালু হয়ে যাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, পোশাক খাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। ইতোমধ্যে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সব পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সাধারণ শ্রমিক ভাই-বোনেরা কাজে যোগ দিতে মুখিয়ে আছেন। 
সরকারের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, পোশাক খাত রক্ষা করার দায়িত্ব এদেশের সবার। দেশের অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান সবচেয়ে বেশি। পোশাক খাতের সঙ্গে দেশের কয়েক হাজার ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প রয়েছে। ফলে এ খাত কোনো সংকটের মুখে পড়লে পুরো অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। 
উল্লেখ্য, সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে পোশাক খাত দ্রুত খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চান এ খাতের উদ্যোক্তারা। ওই বৈঠকে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানান। ব্যবসায়ীরা বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দেশের অর্থনীতির।

×