ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

উচ্চ সুদহারেও মিলছে না আমানত

ব্যাংকিং খাতের বাইরে নগদ টাকা বাড়ছে

রহিম শেখ

প্রকাশিত: ০০:২৩, ১৬ জুলাই ২০২৪

ব্যাংকিং খাতের বাইরে নগদ টাকা বাড়ছে

বর্তমানে উচ্চ সুদহারেও ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইছে না সাধারণ মানুষ

বর্তমানে উচ্চ সুদহারেও ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইছে না সাধারণ মানুষ। সর্বশেষ মে মাসেও ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গত ৭ মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর অন্যতম কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এর প্রভাবে মানুষ নতুন করে সঞ্চয় করতে পারছেন না। অবস্থাটা এমন হয়েছে, সঞ্চয়পত্র না কিনে ভেঙে খাচ্ছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সুদহার ৪ থেকে ৬ শতাংশ বাড়িয়েও পর্যাপ্ত আমানত সংগ্রহে ব্যর্থ হচ্ছে বেশিরভাগ ব্যাংক। এমনকি কোটিপতি আমানতের সংখ্যাও কমে গেছে। অপরদিকে ঋণের সুদহার বাড়ার কারণে বেড়ে গেছে ব্যবসার ব্যয়। একই সঙ্গে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগ ব্যয় বেড়ে গেছে। এদিকে চলতি মাসেই ঘোষিত হচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য নতুন মুদ্রানীতি। এক্ষেত্রে সুদহার আরও বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে নতুন মুদ্রানীতিতে। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগদ তথ্য বলছে, গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা, যা মে মাস শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকের বাইরে অর্থ বেড়েছে ৬ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। এসব টাকা আর ওই মাসে ব্যাংকে ফেরত আসেনি।

এ নিয়ে টানা ৭ মাস ধরে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ বাড়তে দেখা গেল। মূলত গত বছর নভেম্বর থেকে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা বাড়তে শুরু করে। অন্যদিকে একই সময় থেকে ব্যাংকে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মে মাস পর্যন্ত মোট মুদ্রার (ব্রড মানি) সরবরাহ ছিল ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতের বাইরে ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা এবং বাকি ১৭ লাখ ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ব্যাংকগুলোতে জমা ছিল।

এর মধ্যে ডিমান্ড ডিপোজিট ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা এবং টাইম ডিপোজিট ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছর অক্টোবরের পর থেকেই ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ বাড়ছে। ওই মাসে ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। নভেম্বরে তা বেড়ে হয় ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা।

ডিসেম্বরে আরও বেড়ে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬০ কোটি, জানুয়ারিতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৯৫ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ কোটি, মার্চে ২ লাখ ৬১ হাজার ১৯৫ কোটি, এপ্রিলে ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি এবং সর্বশেষ মে মাসে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৭ মাসে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ টাকা বেড়েছে ২৪ হাজার ৭১৫ কোটি।
সুদের হার বৃদ্ধির পরও আশানুরূপ আমানতের দেখা পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। চলতি বছর মার্চ থেকে সুদহার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ব্যাংকগুলো ইচ্ছামতো ঋণ ও আমানতের সুদহার বাড়াতে পারছে। বর্তমানে আমানত সংগ্রহে কোনো কোনো ব্যাংক ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। এতে আমানত যেভাবে আকৃষ্ট হওয়ার কথা, সেভাবে হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছর মে শেষে ব্যাংক খাতে আমানত দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৬০৮ কোটি টাকা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা।

ফলে আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮.৭৭ শতাংশ। এক মাস আগে এপ্রিল পর্যন্ত বার্ষিক আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.৬৩ শতাংশ। অথচ গত বছর নভেম্বর থেকে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো মাসেই আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের নিচে নামেনি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০.৪৩ শতাংশ। আগের মাস জানুয়ারিতে ছিল ১০.৫৭ শতাংশ। আর গত ডিসেম্বরে ছিল ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। ২০২১ সালের মে মাসে এ খাতে আমানতে প্রবৃদ্ধি উঠেছিল সর্বোচ্চ ১৪.৪৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ৯ মাস ধরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে আগের আসল-সুদ বাবদ সরকারকে বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। গত ১১ মাসে ঋণাত্মক স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের মে মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়েছে ৩ হাজার ৯৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিক্রির চেয়ে আগের আসল ও সুদ বাবদ ৩ হাজার ৯৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে সরকারকে।

মানুষ নতুন বিনিয়োগ তো করছেই না বরং আগের সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগও নবায়ন না করে ভেঙে ফেলছে। যার ফলে এর পেছনে সরকারের খরচ বেড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সুদহার বৃদ্ধির পরও আমানতের প্রবৃদ্ধি কমার অর্থ হচ্ছেÑ গ্রাহকের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। একীভূত ইস্যুতে বেশকিছু ব্যাংকের গ্রাহকের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে, এতে সঞ্চয় কমেছে অনেকের। কেউ কেউ সঞ্চয় ভেঙেও খাচ্ছেন, যার প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধিতে।
এদিকে ঋণের সুদহার বেশি মাত্রায় বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পণ্যের ওপর। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। বিশেষ করে আমদানি পণ্য ও শিল্প পণ্যের দামে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া আমানতের সুদের হার দুর্বল ব্যাংকগুলো বেশি মাত্রায় বাড়িয়েছে। ফলে সবল ব্যাংকগুলোও আমানতের সুদের হার বাড়াতে চাপে পড়েছে।

এ অবস্থায় অনেকেই বলেছেন, সুদের হার বৃদ্ধি বাজারভিত্তিক হলেও একটি নীতিমালা থাকা উচিত, যার ভিত্তিতে এটি ওঠানামা করবে। এদিকে মূল্যস্ফীতির হার কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়াচ্ছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির হার কমছে না। গত বছরের জুলাই থেকে সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। অথচ ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার কমেনি। বরং আরও বেড়েছে। গত জুনে ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত মে মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ওই সময়ে এ হার কিছুটা ওঠানামা করেছে। কিন্তু গড়ে সাড়ে ৯ শতাংশের নিচে নামেনি।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির হার কমানো যাবে না। এ হার কমাতে হলে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আগে যেসব ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়া হয়েছে সেগুলোর একটি বড় অংশ তুলে নিতে হবে। ঋণের সুদ হার বাড়িয়ে বাজারে টাকার প্রবাহ খুব বেশি কমানো যায় না। টাকার প্রবাহ কমাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে টাকা ছাপানো বন্ধ করতে হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান স্থিতিশীল করতে হবে। ডলারের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতির হারও বাড়বে। বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। কারণ ভরা মৌসুমেও পণ্যের দাম বাড়ছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৮ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করে সুদের হার নির্ধারণের ব্যাপারে করিডর প্রথা তুলে নেয়। একই সঙ্গে সুদের হারকে বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে ব্যাংকগুলো নিজস্ব ঋণ বিতরণযোগ্য তহবিল ও চাহিদার ভিত্তিতে সুদের হার নির্ধারণ করছে। গত ১ জুন থেকে অনেক ব্যাংকই নতুন সুদের হার কার্যকর করেছে। গত ৮ মের আগে সুদের হার নির্ধারিত হতো সরকারের ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের ভিত্তিতে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি মাসে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ঘোষণা করত। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো ভিত্তি সুদ যোগ করে ঋণের সুদ নির্ধারণ করত। গত এপ্রিলে সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ট্রেজারি বিলের সুদহার ঘোষণা করেছে। ওই সময়ে সাধারণ ঋণের সঙ্গে ৩ শতাংশ, ভোক্তা ঋণের সঙ্গে আরও ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জসহ মোট ৪ শতাংশ, রপ্তানি খাতের প্রি-শিপমেন্ট ঋণ, কৃষি ও পল্লি ঋণের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ যোগ করে সুদ হার নির্ধারণ হতো। ফলে ওই সময় সাধারণ ঋণের সুদ ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ, পল্লি ও কৃষি ঋণের সুদ ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ, প্রি-শিপমেন্ট ঋণের সুদ ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশে ও ভোক্তা ঋণের সুদ ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশে ওঠে।

মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন খাতে ঋণের সুদহার ২ থেকে ৩ শতাংশ বেড়েছে। কোনো কোনো ব্যাংকে ৪ শতাংশও বেড়েছে। ইতোমধ্যে একটি ব্যাংকে ভোক্তা ঋণের সুদ বেড়ে সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশে উঠেছে। ওই ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করছে ১২ শতাংশের বেশি সুদে। ব্যাংকগুলোতে গড়ে সাধারণ ঋণের সুদ বেড়ে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশে উঠেছে। রপ্তানি ঋণের সুদ সাড়ে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ। কৃষি ও পল্লি ঋণের সুদ সাড়ে ১২ থেকে ১৪ শতাংশে উঠেছে। শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণের সুদ বেড়ে ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ। আমদানি ঋণের সুদ বেড়ে সাড়ে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভোক্তা ঋণের সুদ। আগে এ হার ছিল ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এখন তা বেড়ে হয়েছে সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ। তবে বেশির ভাগ ব্যাংকে এ হার ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। তবে এ ঋণের বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক এজেন্ট ফি, নিরাপত্তা ফি ও অন্যান্য ফি বাবদ প্রায় ২ থেকে ৩ শতাংশ আরও অতিরিক্ত আদায় করছে। ফলে এ খাতের ঋণের সুদ বেড়ে ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ দাঁড়াচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত মে মাস শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ২২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকায়, যা ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত ছিল ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। ফলে গত এক বছরের ব্যবধানে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আগের মাসে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি খাতের ঋণের বড় অংশ ব্যয় হয় আমদানিতে।

তবে ডলার-সংকটের কারণে চাহিদামতো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, ডলারে কেনায় খরচ বৃদ্ধি ও সরকারের ব্যাংকঋণ বাণিজ্যিক ব্যাংকনির্ভর হওয়ায় ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট চলছে। অন্যদিকে সঙ্কোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে ধারাবাহিকভাবে ঋণের সুদহার বৃদ্ধি পাওয়ায় ঋণের চাহিদা কম হচ্ছে। একটি সরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি এলসিতে মার্জিন আরোপ করায় গত দুই বছরে আমদানি ব্যাপক কমেছে।

এখন প্রতি মাসে এলসি খোলা হচ্ছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের। যদিও ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতি মাসে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার করে এলসি খোলা হয়েছে। সার্বিকভাবে বর্তমানে এলসি কম খোলার কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেক কমেছে। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে কমেছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৫১ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।

আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে প্রথম আট মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি নিষ্পত্তি ২৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে। এ ছাড়া শিল্পের কাঁচামাল আমদানি নিষ্পত্তি ২৫ দশমিক ০৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার। তথ্যমতে, গত জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ, মার্চে ১০ দশমিক ৪৯ শাতাংশ এবং এপ্রিলে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগের মুদ্রানীতিগুলোর মতো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতেও সঙ্কুুলানমুখী ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে সুদহার আরও বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। বাড়ানো হতে পারে নীতি সুদহার, রেপো, রিভার্স রেপোর মতো মুদ্রানীতির মৌলিক সুদ কাঠামোগুলোও।  
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা। লক্ষ্য বাস্তবায়নে সঙ্কোচনমুখী মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ডলারের দাম এবং সুদের হার নির্ধারণে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন করে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কম। ব্যাংক ঋণের সুদহার ইতোমধ্যে ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তারপরও নীতি সুদের হার বাড়িয়ে টাকাকে আরও দামি করে তোলা হতে পারে। এতে ঋণের সুদের হার আরও বাড়বে।

×