ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

মরিচের বাজারে আগুন, ৪০০ টাকা ছাড়ালো কেজিতে

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ১৪ জুলাই ২০২৪

মরিচের বাজারে আগুন, ৪০০ টাকা ছাড়ালো কেজিতে

কাঁচামরিচ

  • পাইকারির তুলনায় খুচরায় দ্বিগুন
  • ৭ হাজার ৫০০ টন মরিচ আমদানির অনুমতি 

কাঁচাপণ্যের বাজারে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচের দাম ৪০০ টাকা ছাড়িয়েছে। শনিবার রাতে রাজধানী ঢাকায় প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ মানভেদে ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয় খুচরা বাজারে। দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রবিবার নগরীর অনেক জায়গায় কাঁচা মরিচ ৪১০-৪২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সরবরাহ না বাড়লে দাম আরও বাড়তে পারে এ আশঙ্কা করছেন বিক্রেতারা। 

সাধারণত সবজির দোকানে কাঁচা মরিচ বিক্রি করা হয়। দাম বাড়ার কারণে অনেক ব্যবসায়ী মরিচ না এনে শুধু সবজি বিক্রি করছেন। ফলে যেসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে তারা, একটু বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। পাইকারির তুলনায় খুচরা বাজারে দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে মরিচ। 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পাইকারি বাজার হিসেবখ্যাত রাজধানী কাওরান বাজারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন দামে মরিচ বিক্রি করা হচ্ছে ঢাকার খুচরা বাজারে। কাওরান বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। খুচরায় বাজারে এই মরিচ ৪০০ টাকার ওপরে বিক্রি করা হচ্ছে। মরিচের দাম বাড়ার বিষয়টি এখন ক্রেতাদের মুখে মুখে। এর আগে গত বছর মরিচ নিয়ে কারসাজির এক পর্যায়ে ১২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। 

সেই সময় কাঁচা মরিচ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও ট্রল করা হয় সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। এদিকে চাহিদা মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পাশাপাশি ও ভারত থেকে আমদানি করা হয় কাঁচা মরিচ। এবছর অতি বৃষ্টি,বন্যা ও খরার কারণে উৎপাদনকারী জেলা পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও যশোরসহ উত্তরবঙ্গের প্রায় সবজেলায় মরিচ উৎপাদন কম হয়েছে। 

সম্প্রতি বন্যা ও ভারি বৃষ্টিপাতে সবজিখেত ও মরিচ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতি বাজারে চাহিদামতো সরবরাহ অব্যাহত রাখতে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত ২৮টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৭ হাজার ৫০০ টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি পেয়েছে। চলতি জুলাই মাসে এ পর্যন্ত ভারত থেকে হিলি বন্দর দিয়ে প্রায়  ৯০০ টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। এরপরও বাজারে কাঁচা মরিচের দাম না কমে বরং বেড়ে যাচ্ছে। 

হিলি স্থলবন্দরের কাঁচা মরিচ আমদানিকারক আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ভারতের বিহার রাজ্যের কাটিহার  থেকে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ আমদানিতে সব মিলিয়ে খরচ পড়ছে ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকা। ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে এ মরিচ ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তাতে কোনো কোনো আমদানিকারক  লোকসানও গুনছেন। 

ঢাকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, মরিচের উৎপাদনস্থলেই দাম বেশি। যেমন দেশের কাঁচা মরিচের অন্যতম উৎপাদন এলাকা বলে পরিচিত পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার বিভিন্ন খুচরা বাজারে ৩৬০-৩৮০ টাকা কেজি স্থানীয় (দেশি) কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে। স্থানীয় পাইকারি বাজারে কৃষকেরা এই মরিচ বিক্রি করেছেন ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি। আবার দিনাজপুরের বিরামপুরের বাজারে দেশি জাতের কাঁচা মরিচ ২০০ ও হাইব্রিড জাতের কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। কৃষকেরা বলছেন, গত বছরের মতো এবারও প্রচন্ড খরা ও গরমের কারণে মরিচের ফলন কম হয়েছে। ফলে বাজারে মরিচ আসছে খুব কম। তাই দাম বাড়তে শুরু করেছে। 

এদিকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে নিয়মিত কাঁচা মরিচ আমদানি হলেও দেশের বাজারে দাম কমছে না। হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, ১ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৮৬ টি ট্রাকে করে ৮১৮ টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। তবে আমদানি হলেও ভারতীয় মরিচের দামই এখন সবচেয়ে বেশি। চলতি বছর কোরবানি ঈদের মাসখানেক আগে  থেকেই মরিচের দাম বাড়তে শুরু করে। মাঝখানে দাম কিছুটা কমলেও প্রায় ১৫ দিন ধরে দাম বাড়ছেই। 

গত বছরও কোরবানির সময়ে ঢাকায় কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছিল। ওই সময় কাঁচা মরিচের কেজি ৭০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তখন দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়। এদিকে, সবজি ও কাঁচা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক কারণকে দায়ী করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। 

তিনি জানান, ভারী বর্ষণ ও বন্যার কারণে দেশের ১৮টি জেলায় পানি বেড়েছে। এতে ওই এলাকাগুলো থেকে কাঁচা পণ্যের সরবরাহ কমেছে। তবে এ পরিস্থিতি সাময়িক। বাজারে সরকারের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কারসাজির কোনো অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

শাহজাহান//শহিদ

×