ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

মে মাসে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ১০.৩৫ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ৭ জুলাই ২০২৪

মে মাসে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ১০.৩৫ শতাংশ

.

উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় প্রবৃদ্ধিতে ছাড় দিয়ে হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। এ কারণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সুদের হার। অন্যদিকে লাভজনক হচ্ছে বন্ডে বিনিয়োগ। যার প্রভাবে কমছে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ। এ অবস্থায় মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থানে। তবে গত মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কিছুটা বেড়ে ১০ শতাংশ অতিক্রম করেছে। গত বছরের শেষের দিকে দেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিনিয়োগ কমেছিল। তথ্য বলছে, জাতীয় নির্বাচনের পরও গতি আসেনি বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিতে। গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি শেষে এ খাতে ঋণের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। মূলত ডলার সংকট ও সুদের হার বৃদ্ধির কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হচ্ছে না। এর প্রভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। 
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলতি মুদ্রানীতি আরও সংকোচনমূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নীতির উদ্দেশ্যই হলো- সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারে অর্থের সরবরাহ কমিয়ে আনা। এ লক্ষ্যে নীতি সুদহার কয়েক দফা বাড়ানোও হয়েছে। এতে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার প্রতি মাসেই বাড়ছে। আর সুদের হার বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে কম আগ্রহী হচ্ছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতে ডলার ও নগদ টাকার সংকট চলছে। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে চাহিদ অনুযায়ী ঋণ বিতরণ ও প্রয়োজনীয় এলসি খুলছে না অনেক ব্যাংক। এসব কারণে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি নি¤œমুখী প্রবণতায় রয়েছে। চলতি মুদ্রানীতিতে জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১১ শতাংশ। 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত মে মাস শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ২২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকায়, যা ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত ছিল ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। ফলে গত এক বছরের ব্যবধানে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আগের মাসে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি খাতের ঋণের বড় অংশ ব্যয় হয় আমদানিতে। তবে ডলার-সংকটের কারণে চাহিদামতো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, ডলারে কেনায় খরচ বৃদ্ধি ও সরকারের ব্যাংকঋণ বাণিজ্যিক ব্যাংকনির্ভর হওয়ায় ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট চলছে। অন্যদিকে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে ধারাবাহিকভাবে ঋণের সুদহার বৃদ্ধি পাওয়ায় ঋণের চাহিদা কম হচ্ছে। একটি সরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি এলসিতে মার্জিন আরোপ করায় গত দুই বছরে আমদানি ব্যাপক কমেছে। এখন প্রতি মাসে এলসি খোলা হচ্ছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের। যদিও ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতি মাসে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার করে এলসি খোলা হয়েছে। সার্বিকভাবে বর্তমানে এলসি কম খোলার কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেক কমেছে।  
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে কমেছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৫১ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে প্রথম আট মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি নিষ্পত্তি ২৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল আমদানি নিষ্পত্তি ২৫ দশমিক ০৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার। তথ্যমতে, গত জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ, মার্চে ১০ দশমিক ৪৯ শাতাংশ এবং এপ্রিলে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। 

×